প্রতিনিধি নারায়ণগঞ্জ
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গাজী টায়ার কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে নিখোঁজদের সন্ধান মেলেনি দেড় মাসেও | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গাজী টায়ার কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের পর দেড় মাসেও নিখোঁজদের সন্ধান মেলেনি। ফায়ার সার্ভিস, প্রশাসন এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দলের সদস্যরা ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে উদ্ধারকাজ বন্ধ রেখেছেন। এর মধ্যে নিখোঁজদের স্বজনরা ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে প্রবেশ করে কয়েকটি হাড়গোড় উদ্ধার করেছেন, তবে এরপর উদ্ধার তৎপরতা দেখা যায়নি। নিখোঁজ ব্যক্তিরা কারখানার শ্রমিক নন, ফলে তাদের পক্ষ থেকে দাবি করার সুযোগও নেই। এর ফলে স্বজনরা নীরবে কাঁদছেন।
গাজী টায়ার কারখানার ভেতর সবকিছু পুড়ে গেছে। চারপাশে শুধুই ছাই। টায়ারের রাবার ও কাঁচামাল পুড়ে গিয়ে জমাটবদ্ধ হয়ে আছে, এবং মেশিনের বিভিন্ন অংশ পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। ভবনের প্রবেশপথ ও অন্যান্য স্থাপনাগুলোর অবস্থা ভাঙচুরের চিহ্ন বহন করছে, আর পলেস্তারা খসে খসে পড়ছে। যদিও প্রশাসন এখন পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে জানাতে পারেনি, অগ্নিকাণ্ডে ঠিক কতজন নিখোঁজ।
গাজী টায়ার কারখানার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, নিরাপত্তার কারণে কারখানার ভেতরে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। যদি কাউকে প্রবেশ করতে হয়, তাহলে জেলা প্রশাসন কিংবা কারখানার সিকিউরিটি ইনচার্জের অনুমতি নিতে হয়। কারণ এর আগে বেশ কয়েকবার লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।
জেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২৫ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টায় গাজী টায়ার কারখানায় আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিস ৩২ ঘণ্টা পর আগুন নেভানোর কথা জানালেও, ভবনে পুনরায় আগুন লাগতে দেখা যায়। স্থানীয়রা জানান, কারখানার মালামাল লুটপাটের জন্য দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের জেরে ভবনে আগুন দেওয়া হয়।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, তারা ড্রোন ক্যামেরা ও মই ব্যবহার করে লাশের কোনো আলামত পায়নি। ভবনের নিচতলায় তল্লাশি চালিয়েও কিছু পাওয়া যায়নি। ভবনের চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলার ফ্লোর ধসে পড়ার কারণে উদ্ধারকাজ বন্ধ করে দেয়া হয়। ১ সেপ্টেম্বর বিকালে জেলা প্রশাসনের তদন্ত টিম নিখোঁজ ৭৮ জনের একটি তালিকা সংগ্রহ করে। ওই দিন স্বজনরা আগুনে পুড়ে যাওয়া ভবনে প্রবেশ করে মাথার খুলি ও হাড়ের টুকরো পান, যা পুলিশকে জমা দেয়া হয়।
নিখোঁজ আবু বকর নাঈমের মা নাজমা বেগম বলেন, "আমার ছেলে স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় অষ্টম শ্রেণিতে পড়তো। আগুন লাগার পর নিখোঁজের বিষয়টি জানতে পারি। আমার ছেলে ও তার এক বন্ধু অগ্নিকাণ্ডের রাতে কারখানার দিকে যায়, এরপর থেকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।"
তিনি আরও জানান, এখন পর্যন্ত তারা কোনো আর্থিক সহায়তা পাননি এবং প্রশাসনের কাছ থেকে কিছু জানতে পারছেন না।
নিখোঁজ মাসুদ সম্পর্কে তার চাচাতো ভাই হাসিবুর রহমান বলেন, "মাসুদ অটোরিকশা চালাতো। ঘটনার দিন লুটপাট দেখতে গিয়ে কারখানায় ঢুকে পড়ে। এখন পর্যন্ত তার কোনো খবর পাওয়া যায়নি।" তিনি জানান, মাসুদ ফিরে আসবে এই আশায় অপেক্ষা করছেন।
অন্যদিকে, আব্দুর রহমানের বড় ভাই আনোয়ার হোসেন বলেন, "আমার ছোট ভাই তাঁতের কারিগর ছিল। ঘটনার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে কারখানায় গিয়েছিল। এখন নীরবভাবে কাঁদা ছাড়া উপায় নেই।"
গাজী টায়ারের নির্বাহী পরিচালক (প্রশাসন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান জানান, "অগ্নিকাণ্ডের পর কেউ কিছু পাননি। কিছু হাড়গোড় পাওয়া গেছে, তবে সেগুলো এই ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত কিনা তা সন্দেহজনক। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন এখনো তাদের কাছে পৌঁছায়নি।"
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আলমগীর হুসাইন ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক জানিয়েছেন, "তারা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন হাতে পাননি।"