প্রতিনিধি ময়মনসিংহ

ময়মনসিংহের ফুলপুরে উপজেলায় পানি ধীরগতিতে কমছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা। আজ সকালে সিংহেশ্বর ইউনিয়নের ভাটপাড়ার সড়কে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া ও ফুলপুর উপজেলায় বন্যার পানি ধীরগতিতে নামছে। আজ বুধবার সকাল পর্যন্ত নতুন কোনো এলাকা প্লাবিত হয়নি, তবে কিছু এলাকায় বন্যার পরিস্থিতি এখনো অপরিবর্তিত রয়ে গেছে।

বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে খাবার এবং বিশুদ্ধ পানির অভাব তীব্র আকার ধারণ করেছে, যার ফলে পানিবাহিত রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই তিন উপজেলায় প্রশাসনের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, র‍্যাব এবং স্বেচ্ছাসেবীরা ত্রাণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

ফুলপুর টানা বৃষ্টি ও ঢলের কারণে ফুলপুর উপজেলায় গত রোববার থেকেই পানি বাড়তে শুরু করে। শেরপুর জেলার মালিঝি ও কংশ নদীর পানি ছনধরা ইউনিয়ন দিয়ে উপজেলায় প্রবেশ করে অনেক এলাকা প্লাবিত হয়। আজ পর্যন্ত ছনধরা, সিংহেশ্বর ও ফুলপুর সদরের পানি কমতে শুরু করেছে, তবে বালিয়া ও রূপসী ইউনিয়নের পানির অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। প্রায় ৩৫টি গ্রামের অন্তত ২৪ হাজার মানুষ এখনো পানিবন্দী।

ভাইটকান্দি থেকে ধুরাইল বাজার সড়কের ভাটপাড়া এলাকায় আবদুল হকিম (৬৫) বলেন, ‘এমন বন্যা আর দেখিনি। এক সপ্তাহ ধরে পানি আটকে আছে। গতকাল থেকে পানি একটু কমতে শুরু করেছে, কিন্তু এই বন্যা অনেক ক্ষতি করে গেল।’

পোগাপুটিয়া গ্রামের চাষি সমশের আলী (৭০) বলেন, "পানি ধীরে ধীরে কমছে। এমন ভয়াবহ বন্যা আমি অনেক আগে দেখেছিলাম, এখন আবার দেখছি। আমার ১৪ কাডা জমির ধান পানিতে ডুবে গেছে। আল্লাহ জানে কিভাবে দিন কাটাব

ফুলপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এ.বি.এম. আরিফুল ইসলাম জানান, "বন্যাদুর্গতদের জন্য ত্রাণ কার্যক্রমের কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে এবং সেখানে ফোন করে মানুষ ত্রাণের জন্য আবেদন করছে। আমরা তাদের ত্রাণ পৌঁছানোর চেষ্টা করছি।"
 

হালুয়াঘাট অতিরিক্ত বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে বোরাঘাট নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে হালুয়াঘাট উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। গত শুক্রবার থেকে ৬ হাজার পরিবার পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। বিশেষ করে নড়াইল, বিলডোরা ও শাকুয়াই ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতি আজ আরও অবনতি হয়েছে। তবে বাকি ৯টি ইউনিয়নে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। পানিবন্দী মানুষ খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে রয়েছে।

নড়াইল ইউনিয়নের বিকেকে হাইস্কুলে সেনাবাহিনী আজ সকাল ৯টায় একটি মেডিকেল ক্যাম্প চালু করেছে।

হালুয়াঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. এরশাদুল আহমেদ জানান, "নড়াইল ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হলেও অন্য ৯টি ইউনিয়নে কিছুটা উন্নতি হয়েছে।"

হালুয়াঘাটে বন্যা দুর্গতদের জন্য মেডিকেল ক্যাম্প করেছে সেনাবাহিনী। সকালে বিকেকে হাইস্কুলে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

ধোবাউড়া গত শুক্রবার দুপুরের পর অতিবৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল ও নেতাই নদীর বাঁধ ভেঙে ধোবাউড়া উপজেলা প্লাবিত হয়। তবে দক্ষিণ মাইজপাড়া, গামারীতলা ও ঘোষগাঁও ইউনিয়নে গত রোববার বিকেল থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। সোমবার রাত থেকে পোড়াকান্দুলিয়া ইউনিয়নের পানি কমলেও গোয়াতলা ও ধোবাউড়া সদরের পরিস্থিতি এখনো অপরিবর্তিত রয়েছে। এই এলাকায় প্রায় ৫৮ হাজার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় আছেন। পুরো এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

ধোবাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নিশাত শারমিন জানান, "পানিবন্দী এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট চলছে এবং বন্যার পরবর্তী সময়ে এই সংকট আরও বাড়তে পারে। তবে সরকারি ও বেসরকারিভাবে ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।"