দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) তাদের এক গবেষণা প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ, আমলা এবং ঠিকাদারদের মধ্যে আঁতাতের মাধ্যমে এই দুর্নীতি হয়েছে।
"সড়ক মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ" শীর্ষক গবেষণাটি বুধবার ঢাকার ধানমন্ডিতে টিআইবির কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপন করা হয়। গবেষণার জন্য ৭৩ জন ঠিকাদার, আমলা ও প্রকৌশলীর সাক্ষাৎকার নেওয়া হয় এবং ৪৮টি উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় বিশ্লেষণ করা হয়। এতে উঠে আসে, ২০১৭-১৮ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরের মধ্যে সমাপ্ত প্রকল্পগুলোতে উল্লেখযোগ্য অর্থ আত্মসাৎ হয়েছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে রাজনীতিবিদ, আমলা এবং ঠিকাদারদের মধ্যে গভীর আঁতাত রয়েছে, যা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। তিনি আরও জানান, ২৩ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বরাদ্দ অর্থ দুর্নীতির মাধ্যমে লোপাট হয় এবং এই সিন্ডিকেট ভাঙা না গেলে দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম সফল হবে না।
গবেষণার ফলাফলে আরও জানানো হয়, ২০০৯-১০ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত সড়ক ও সেতু খাতে সরকারের মোট বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ৬৯ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। ২০১৩-১৪ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মধ্যে ৭২ শতাংশ কাজ পেয়েছে মাত্র ১৫টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
দুর্নীতির ধরন ও মাত্রা সম্পর্কেও কিছু তথ্য দেওয়া হয়েছে। যেমন:
● প্রতিষ্ঠিত ঠিকাদারদের লাইসেন্স ভাড়া, উপঠিকাদার নিয়োগ এবং রাজনৈতিক চাঁদাবাজির মাধ্যমে কার্যাদেশের ২ থেকে ৬ শতাংশ দুর্নীতি হয়।
● কার্যাদেশ পাওয়ার জন্য এবং বিল পেতে ঠিকাদারদের ১১ থেকে ১৪ শতাংশ ঘুষ দিতে হয়।
● নির্মাণকাজের দুর্নীতি ১০ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে, যেখানে রাজনীতিবিদ, ঠিকাদার ও কর্মকর্তাদের আঁতাত থাকে।
টিআইবি বলছে, ঠিকাদারদের রাজনৈতিক প্রভাব থাকার কারণে নিম্নমানের কাজ বা দেরিতে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য তাদের কোনো জবাবদিহিতার আওতায় আনা হয় না।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন টিআইবির পরিচালক (আউটরিচ ও কমিউনিকেশন) তৌহিদুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংস্থাটির উপদেষ্টা (নির্বাহী ব্যবস্থাপনা) সুমাইয়া খায়ের।