নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা
বাংলাদেশে আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে দলবদ্ধ সহিংসতা ও গণপিটুনিতে হত্যার ঘটনায় ৫৩টি ঘটনায় অন্তত ৪৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে | ছবি: জেএমবিএফের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া |
বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে দলবদ্ধ সহিংসতা ও গণপিটুনিতে হত্যার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও শঙ্কা প্রকাশ করেছে ফ্রান্সভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন জাস্টিসমেকার্স বাংলাদেশ ইন ফ্রান্স (জেএমবিএফ)। গতকাল রোববার সংগঠনটি তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিবৃতিতে এই উদ্বেগ প্রকাশ করে। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন জেএমবিএফের প্রধান সমন্বয়কারী ও নির্বাহী সদস্য মোসা জান্নাতুল ফেরদৌস।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা শুরু হয়। এরপর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়।
জেএমবিএফ বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে দলবদ্ধ সহিংসতা ও গণপিটুনির ঘটনা প্রতিরোধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। তারা বিচার বিভাগের সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো তদন্তের দাবি জানিয়েছে। সংগঠনটি একটি স্বচ্ছ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠারও তাগিদ দিয়েছে, যাতে দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা যায়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের বরাতে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোতে দেখা গেছে, রাজনৈতিক পালাবদলের পরচ্চ থেকে দলবদ্ধ সহিংসতা ও গণপিটুনির ঘটনা বেড়েছে। আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে এই ধরনের ৫৩টি ঘটনায় অন্তত ৪৪ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে, যার মধ্যে শুধু সেপ্টেম্বর মাসেই ২৪ জন নিহত হয়েছে।
জেএমবিএফের প্রধান উপদেষ্টা ও মানবাধিকারকর্মী রবার্ট সাইমন বলেছেন, ‘এই অরাজক পরিস্থিতি মৌলিক মানবাধিকারের লঙ্ঘন ও ন্যায়বিচারের চরম অবমাননা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও হতাশা থেকে সৃষ্ট এসব গণপিটুনির ঘটনা গণতন্ত্র, আইনের শাসন এবং মানবিক মর্যাদার জন্য বড় হুমকি।’
সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শাহানুর ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশে দলবদ্ধ সহিংসতার উত্থান একটি ব্যর্থ সিস্টেমের সরাসরি ফলাফল। এর প্রতিকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও মধ্যবর্তী সরকারের উচিত তাৎক্ষণিকভাবে পদক্ষেপ নিয়ে এসব সহিংসতা বন্ধ করা।’
জেএমবিএফের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এসব সহিংসতার ঘটনা শুধু শাসনব্যবস্থার ব্যর্থতা নয়, বরং এটি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের প্রতি জনগণের আস্থার ঘাটতি নির্দেশ করে। অন্তর্বর্তী সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচিত সব নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা।
বিবৃতির শেষাংশে বলা হয়, জেএমবিএফ একটি ন্যায়পরায়ণ বাংলাদেশের জন্য কাজ অব্যাহত রাখবে, যেখানে সহিংসতার পরিবর্তে আইনের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে।