নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা

জাতীয় পার্টিকে (জাপা) এখনও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে চলমান সংলাপে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। সরকারের বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, ছাত্রনেতৃত্বের পক্ষ থেকে জাপা নিয়ে আপত্তি এসেছে, যা তাদের সংলাপে অংশগ্রহণকে অনিশ্চিত করে তুলেছে।

জাপার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সহযোগী ছিল তারা। ফলে সংলাপে তাদের অংশগ্রহণ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি, জাপাকে সংলাপে ডাকা হবে কি না।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বর্তমানে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তৃতীয় দফায় সংলাপ করছেন, যেখানে সংস্কার, নির্বাচন এবং চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। গত শনিবার প্রথম দফার সংলাপে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, গণ অধিকার পরিষদসহ পাঁচটি দল এবং গণতন্ত্র মঞ্চসহ তিনটি জোট অংশ নেয়।

একজন উপদেষ্টা জানান, দুর্গাপূজার পর ১৯ অক্টোবর বাকি দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ হবে। এই তালিকায় অলি আহমদের এলডিপি, বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনে থাকা ১২ দলীয় জোট, বাংলাদেশ জাসদ এবং আন্দালিব রহমান পার্থর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টিকে আমন্ত্রণ জানানো হতে পারে। তবে আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্রদের এই সংলাপে ডাকা হবে না। এটি সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত বলে সূত্র জানিয়েছে।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়। শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে জাতীয় পার্টি তাদের সহযোগী ছিল। জাপার নেতারা কখনো মন্ত্রী হয়ে সরকারের অংশ হয়েছেন, আবার কখনো সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসে ‘গৃহপালিত’ উপাধি পেয়েছেন। ৭ জানুয়ারির সর্বশেষ নির্বাচনে অংশ নিয়ে দ্বাদশ সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসে দলটি।

জাপার অতীত ভূমিকা নিয়ে এখন নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। গণ-অভ্যুত্থানের পর তাদের অতীতকে কেন্দ্র করে সংলাপে ডাক পাওয়ার বিষয়ে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। এক সাক্ষাৎকারে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, "আমরা কখনো আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে কাজ করিনি। আমরা সবসময় জনগণের পক্ষে থেকেছি।"

তিনি আরও জানান, "জাতীয় পার্টিকে বাঁচাতে বাধ্য হয়ে তারা বিভিন্ন সময়ে ভূমিকা নিয়েছিলেন। জাপার নেতাদের অভিযোগ, তাদের দলের একটি অংশকে পুরো শাসনামলেই সুবিধা দিয়ে রাখা হয়েছিল, এবং দল বিভক্ত করার চেষ্টা হয়েছিল।"

এ বিষয়ে জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক বলেন, "এখনও সংলাপের আমন্ত্রণ পাননি। তবে ডাক পেলে অবশ্যই তারা অংশ নেবেন। ফ্যাসিবাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, দলকে বাঁচাতে তারা যে ভূমিকা নিয়েছিলেন, সে বিষয়ে ইতিমধ্যেই ব্যাখ্যা দিয়েছেন।"

তিনি আরও বলেন, "২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপিসহ সব দল অংশ নিয়েছিল। সেই নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদে বিএনপি চার বছর ছিল, তাহলে কি সব দলই সহযোগী ছিল?"