নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা

মানববন্ধন কর্মসূচিতে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকরা | ফাইল ছবি

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংস্কারকাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকার সময়, দশম গ্রেডের দাবিতে আন্দোলন করছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। তারা বলছেন, নিজেদের সম্মান ও সংসার চালানোর মতো বাস্তবতার কারণে তারা আন্দোলনে নেমেছেন। দাবির প্রেক্ষিতে তাদের অবস্থান ন্যায্য, এবং দাবি আদায় না হলে আবারও আন্দোলন করবেন বলে জানিয়েছেন।

সরকারি প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমন্বয় পরিষদ এই দাবিতে সক্রিয়। ২৯ সেপ্টেম্বর বিকেলে রাজধানীর মিরপুরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষকরা। ওই দিন প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দিয়ে তারা তাদের দাবি তুলে ধরেন।

অন্যদিকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরাও ২ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন। তাদের দাবিতে রয়েছে প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকদের জন্য নবম গ্রেড এবং সহকারী শিক্ষকদের জন্য দশম গ্রেড।

সহকারী শিক্ষকরা তাদের দশম গ্রেডের দাবির যুক্তি তুলে ধরে বলেন, এইচএসসি ও ডিপ্লোমা যোগ্যতায় নার্সরা দশম গ্রেড পান, এসএসসি ও চার বছরের ডিপ্লোমা যোগ্যতায় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা দশম গ্রেডে আছেন, এবং স্নাতক ডিগ্রিধারী পুলিশ উপপরিদর্শক (এসআই) দশম গ্রেডে বেতন পান। অথচ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরা উচ্চতর যোগ্যতা নিয়েও তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে বেতন পান। ফলে শিক্ষকদের সম্মানহানি হচ্ছে এবং বেতন বৈষম্যের কারণে তাদের আর্থিক সংকট তৈরি হয়েছে।

শেরেবাংলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও সরকারি প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমন্বয় পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক মো. লুৎফর রহমান বলেন, "একই যোগ্যতায় আমরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হয়েও তৃতীয় শ্রেণির গ্রেডে রয়েছি, যেখানে অন্যান্য সমমানের পেশাজীবীরা দশম গ্রেডে রয়েছেন। এ বৈষম্যের অবসান চাই।"

প্রাথমিক শিক্ষার বৈষম্য নিয়ে মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি বলেন, "শিক্ষকদের মর্যাদা শুধু কথায়, বাস্তবে তার কোনো প্রতিফলন নেই। পাশের দেশগুলোর তুলনায় আমাদের বেতনকাঠামো অনেক পিছিয়ে। শিক্ষকদের বেতন পরিবর্তন করা জরুরি।"

শিক্ষকরা আরও বলেন, "দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে বর্তমান বেতন কাঠামো দিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করা কঠিন। ২০১৫ সালের বেতন স্কেল আর বর্তমান বাস্তবতার মধ্যে অনেক ফারাক রয়েছে, যার সমাধান হতে পারে দশম গ্রেডে বেতন উন্নীত করার মাধ্যমে।"

বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. আবুল কাসেম বলেন, "প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকদের নবম গ্রেড এবং সহকারী শিক্ষকদের দশম গ্রেড দাবি করছি। শিক্ষকদের সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।"

ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন কলেজের অধ্যক্ষ ড. নজরুল ইসলাম খান বলেন, "প্রাথমিক শিক্ষকদের দশম গ্রেডের দাবি ন্যায্য এবং তা মেনে নেওয়া উচিত। তবে শিক্ষকদের জন্য আলাদা বেতন কাঠামো প্রয়োজন, তা না হলে এই সংকট অব্যাহত থাকবে।"