প্রতিনিধি নেত্রকোনা
বিদ্যালয়ের মাঠ ও শ্রেণিকক্ষ প্লাবিত হওয়ায় পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সোমবার সকালে দুর্গাপুরের ঝাঞ্জাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার সদর, দুর্গাপুর, কলমাকান্দা, পূর্বধলা ও বারহাট্টা উপজেলার অন্তত ২৫টি ইউনিয়নের ১২৩টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ৫৮ হাজার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন। ৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে ৩৯টি পরিবার। এ পরিস্থিতিতে ১৮৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
সোমবার সকাল ১০টার দিকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কলমাকান্দার উব্দাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে জেলার বড় নদী সোমেশ্বরী ও কংস নদীর পানি কিছুটা কমেছে। ধনু, নেতাই, মহাদেও, মঙ্গলেশ্বরী, মগড়া নদীর পানি স্থিতিশীল রয়েছে।
নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক মো. সাওয়ার জাহান জানান,"কলমাকান্দার ডাকবাংলো পয়েন্টে উব্দাখালীর পানি বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছিল, যেখানে বিপৎসীমা ৬.৫৫ মিটার। কংস নদীর পানি জারিয়া পয়েন্টে গতকাল রাত ৯টার দিকে বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপরে থাকলেও, আজ সকাল থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। আশা করা হচ্ছে, নদ-নদীর পানি দ্রুত কমে যাবে এবং এসব পানি ধনু নদ হয়ে মেঘনায় গিয়ে পড়বে।"
জেলার প্রশাসন ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা যায়, গত বুধ থেকে শনিবার পর্যন্ত ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে জেলার ছোট-বড় সব নদীর পানি বেড়ে যায়। শেরপুরের ভোগাই ও কংস নদীর পানি জারিয়া এলাকা হয়ে কলমাকান্দার উব্দাখালী নদীতে প্রবাহিত হওয়ায় ৫টি উপজেলায় ১২৩টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। দুর্গাপুর, কলমাকান্দা, পূর্বধলা, নেত্রকোনা সদর ও বারহাট্টার বিভিন্ন এলাকায় ঘরবাড়ি, রাস্তা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও পুকুর তলিয়ে গেছে। এতে ১৮ হাজার ১০৪ হেক্টর জমির আমন ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোফাজ্জল হোসেন জানিয়েছেন, "বন্যার কারণে ১৮৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে।"
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. নুরুজ্জামান জানিয়েছেন, "জেলার ১০টি উপজেলায় ১ লাখ ৩৫ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদ করা হয়। বন্যায় ১৮ হাজার ১০৪ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। তবে স্থানীয় মানুষের মতে, প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমির ফসল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।"
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শাহজাহান কবীর জানিয়েছেন, "৫টি উপজেলায় ২০৩টি পুকুরের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয়ের কাজ চলছে।"
জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস বলেন, "বন্যা মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কলমাকান্দা, দুর্গাপুর, পূর্বধলা ও নেত্রকোনা সদর উপজেলার জন্য নগদ ৩ লাখ টাকা, ২ হাজার ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার ও ৬০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।"