শেরপুরে বন্যায় প্লাবিত একটি গ্রামের দৃশ্য, যেখানে মানুষ পানিবন্দি হয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার অপেক্ষায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

প্রতিনিধি শেরপুর: শেরপুরে টানা বৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢলের কারণে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। জেলার বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বেড়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া বন্যায় এ পর্যন্ত ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন। পাশাপাশি ফসল ও কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

স্থানীয় প্রশাসন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও বিজিবি পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধারে কাজ করছে। শনিবার সকাল থেকে নালিতাবাড়ীতে সেনাবাহিনীর সদস্যরাও উদ্ধারকাজে যোগ দিয়েছেন।

শেরপুর সদর ও নকলা উপজেলার আরও ৬টি ইউনিয়ন শনিবার সকালে নতুন করে বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় মহারশি, সোমেশ্বরী, চেল্লাখালি, ভোগাই ও মিরগী নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যার ফলে শেরপুরের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। বর্তমানে শেরপুরের ৫টি উপজেলার ২৮টি ইউনিয়নের দুই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে এবং দেড় লাখেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

নকলা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন, "শনিবার রাতে নকলায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া নালিতাবাড়ীতে ৫ জন এবং ঝিনাইগাতীতে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে।"

ঝিনাইগাতীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, "আমরা পানিবন্দি মানুষদের সঠিকভাবে উদ্ধার করতে পেরেছি এবং তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে গেছি। তাদের জন্য বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। উপজেলার প্রায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।"

নালিতাবাড়ীর ইউএনও মো. মাসুম রানা জানান, "নালিতাবাড়ীতে ১২৩টি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে, যার মধ্যে ৫৮টি কেন্দ্রে ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫টি ইউনিয়ন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।"

শেরপুরের মৎস্য কর্মকর্তা প্রণব কুমার কর্মকার জানিয়েছেন, "ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ীতে ২ হাজার ৫৭টি মাছের ঘের ভেসে গেছে, যার ক্ষতির পরিমাণ প্রাথমিকভাবে ১১ কোটি টাকা হিসেবে ধরা হয়েছে।"

কৃষি অফিসের তথ্য মতে, জেলায় প্রায় ৩০ হাজার হেক্টর আমন ধান এবং ১ হাজার হেক্টর সবজি আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে প্রায় ৭০ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

শেরপুরের যেসব মাধ্যমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, সেগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। জেলা শিক্ষা অফিসার মো. রেজয়ান জানিয়েছেন, আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত বিদ্যালয়গুলো কয়েকদিন বন্ধ থাকবে, তবে যেখানে বন্যার প্রভাব নেই, সেখানে নিয়মিত ক্লাস চলবে।

জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, "জেলার অনেক নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন সতর্ক অবস্থায় রয়েছে এবং দুর্গতদের উদ্ধার ও খাদ্য সরবরাহে কাজ করছে। একই সঙ্গে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাচ্ছি।"