প্রতিনিধি গাজীপুর: ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাজধানীর উত্তরা এলাকায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে ২৮ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১৯ জন শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় ১৯৭ জন আহত হয়েছেন এবং একজন নিখোঁজ রয়েছেন।
শনিবার দুপুরে উত্তরার মাইলস্টোন কলেজ মিলনায়তনে ‘চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে উত্তরা’ নামে পেশাজীবী অভিভাবকদের একটি সংগঠন এই তালিকা প্রকাশ করে।
অনুষ্ঠানে সংগঠনের সদস্য মনীষা মাফরুহা লিখিত বক্তব্যে সংঘর্ষের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন। পরে তালিকাটি নিহত মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর বড় ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধর হাতে হস্তান্তর করা হয়। সংগঠনটি চারটি প্রস্তাবও তুলে ধরে।
মীর মাহবুবুর রহমান বলেন, "এই সংগঠনটি আন্দোলনের কঠিন সময়ে আমাদের পাশে ছিল। আমরা এই তালিকাটি যাচাই করে চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করব। পরে নিয়ম মেনে আহত ও নিহতদের পরিবারকে সহায়তা করা হবে।"
কান্না ছড়িয়ে যায় সবার মধ্যে
ছাত্র–জনতার আন্দোলনে ছেলেকে হারানোর কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন ফাতেমাতুজ্জোহরা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
অনুষ্ঠান চলছিল নিয়ম মেনে, যেখানে অনেকেই বক্তব্য দিচ্ছিলেন। কিন্তু ফাতেমাতুজ্জোহরার মন যেন অন্য কোথাও ছিল। মঞ্চের এক কোণে মাথা নিচু করে বসে থাকা ফাতেমাতুজ্জোহরার চোখে ক্লান্তি আর অশ্রু। তাঁকে কথা বলতে ডাকা হলে মাইক্রোফোনের কাছে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাঁর সেই কান্না উপস্থিত সবাইকে ছুঁয়ে যায়। গণমাধ্যমকর্মীসহ সবাই তখন চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি।
ফাতেমাতুজ্জোহরা হলেন গত ৫ আগস্ট রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকায় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় নিহত একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ বিন জাহিদের (১৬) মা। তিনি বলেন, ‘আমার ছোট ছেলে ক্যানসারে আক্রান্ত, মৃত্যুপথযাত্রী। বড় ছেলেটা ছিল আমাদের একমাত্র আশা। কিন্তু এখন সেও নেই। ছেলের কথা ভাবলেই বুক ফেটে যায়।’
আন্দোলনকারীদের পানি দিতে গিয়ে গুরুতর আহত হওয়া তাবাসসুম নামের এক শিক্ষিকা এখনো সেই আঘাতের ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন। আজ তিনিও উপস্থিত ছিলেন সংবাদ সম্মেলনে। তাবাসসুম বলেন, ‘আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর অত্যাচার দেখে নিজেকে আর আটকে রাখতে পারিনি। হাতে আঘাত পেলেও আন্দোলনে অংশ নিতে পেরে গর্ব হয়।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ফাতেমাতুজ্জোহরার মতো আরও অনেক অভিভাবক, যাঁরা স্বজন হারিয়েছেন, কিংবা যাঁদের প্রিয়জন আহত হয়েছেন। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন।
‘চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে উত্তরা’ নামের সংগঠনটি ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় আহতদের চিকিৎসা, নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত করা, এবং অন্যান্য সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করতে গড়ে ওঠে। সংগঠনের সদস্য মনীষা মাফরুহা জানান, প্রথমে ৯ অভিভাবক মিলে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলে আন্দোলনে ছাত্রদের পাশে দাঁড়ানোর উপায় নিয়ে আলোচনা করেন। ধীরে ধীরে সদস্য সংখ্যা বেড়ে এখন গ্রুপে মোট ৮২ জন সদস্য আছেন।