আদানি পাওয়ার | ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হঠাৎ আলোচনায় উঠে এসেছে আদানি পাওয়ার। ভারতের গোড্ডায় স্থাপিত আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চুক্তি নিয়ে সমালোচনা চলছে। প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশ কি ইচ্ছে করলেই এ ধরনের চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে পারে? কিংবা চুক্তি সই করার এতদিন পরে এসে পরিবর্তন করা সম্ভব কি না? 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন আদানির সঙ্গে হওয়া চুক্তি পর্যালোচনার সুযোগ নেই, তবে আলোচনা হতে পারে। সূত্রে জানা গেছে, এখনো কোনো আলোচনা শুরু হয়নি, এবং সরকারের কোনো অনুরোধ রাখা না রাখা আদানির ওপর নির্ভর করছে।

আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদন ক্ষমতা ১ হাজার ৪৯৮ মেগাওয়াট। অন্য বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর চুক্তির সঙ্গে এর পার্থক্য হলো, পিডিবি চাইলেও এই ১ হাজার ৪৯৮ মেগাওয়াটের ৩৪ শতাংশের কম বিদ্যুৎ কিনতে পারবে না। এমনকি যদি প্রয়োজন না থাকে, তবুও ৩৪ শতাংশ বিদ্যুৎ কিনতেই হবে। না কিনলে সেই পরিমাণ বিদ্যুতের জন্য আদানিকে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট দিতে হবে। চুক্তিতে আরও উল্লেখ রয়েছে, প্রতি চার মাসের জন্য বিদ্যুতের চাহিদা আগেই জানাতে হবে। জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বিদ্যুতের চাহিদা ডিসেম্বরেই দিতে হবে। পিডিবি বিদ্যুৎ না নিলেও আমদানি করা কয়লার মূল্য পরিশোধ করতে হবে।

আদানির চুক্তি নিয়ে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট বেশি নেওয়ারও সমালোচনা রয়েছে। গ্যাস এবং তেলভিত্তিক বেসরকারি রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর গড় ইউনিটপ্রতি ক্যাপাসিটি চার্জ ৯০ পয়সা থেকে ১ টাকা ২০ পয়সা, অথচ আদানির ক্যাপাসিটি চার্জ সবচেয়ে বেশি, ইউনিটপ্রতি ৪ দশমিক ২৫ সেন্ট, যা আজকের ডলারের মূল্য অনুযায়ী প্রায় ৫ টাকা ১ পয়সা। যদিও এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বাংলাদেশের জন্য নির্মিত, আদানি অন্যদের কাছেও বিদ্যুৎ বিক্রি করতে পারবে এবং এ বিষয়ে ভারতের সরকারের অনুমোদনও পেয়েছে।

এখন প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশ কি এই চুক্তি থেকে বের হতে পারবে? অথবা আদানির সঙ্গে এ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না? পিডিবি থেকে কেউ এ বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি হয়নি। আদানি সংশ্লিষ্ট একজন জানান, এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। চুক্তি পর্যালোচনা হচ্ছে, তবে ইচ্ছে করলেই কেউ চুক্তি বাতিল করতে পারে না। এর প্রভাব শুধু আদানি নয়, অন্য দেশগুলোর ওপরও পড়বে, এবং ভবিষ্যতে তারা বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করতে চাইবে না। এক সরকারের করা চুক্তি যদি অন্য সরকার এসে বাতিল করে, এতে দেশের ভাবমূর্তিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

জ্বালানি খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চুক্তিতে উল্লেখ থাকে যে, অতিমারি, মহামারি, ভূমিকম্প, সাইক্লোন বা অন্য কোনো দুর্যোগ হলে উভয় পক্ষ আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তবে, চুক্তি থেকে বের হতে হলে বিনিয়োগকারীর ক্ষতিপূরণ দিতে হয়। বিনিয়োগকারী যাতে তার মুনাফাসহ বিনিয়োগের অর্থ তুলে নিতে পারে, তা নিশ্চিত না হলে কোনো ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান ঋণ দিতে রাজি হয় না।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বিডি রহমত উল্লাহ জানান, "যেকোনো চুক্তি ইচ্ছে করলেই বাতিল করা যায় না। তবে চুক্তির ক্ষতিকর দিকগুলো প্রমাণ করা গেলে আদালতের মাধ্যমে তা বাতিল করা সম্ভব। আদানির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আদালতে যেতে হবে এবং সেখানে কী কী কারণে বাংলাদেশের ক্ষতি হচ্ছে তা আগে উপস্থাপন করতে হবে। আন্তর্জাতিক আদালত যদি অনুমতি দেয়, তবে চুক্তি বাতিল হতে পারে। তিনি আরও বলেন, এত বেশি দামে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কিনে আমরা লোকসানের শিকার হবো কেন? আমাদের অন্যান্য বিদ্যুৎকেন্দ্রের তুলনায় এর দাম অনেক বেশি। অতিরিক্ত টাকা কেন দেওয়া হবে, সেটিও আমাদের তুলে ধরতে হবে।"