আয়েশেনুর আইগি সম্প্রতি সিয়াটলে ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটন থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন | ছবি: আইগি পরিবার/এপি |
পদ্মা ট্রিবিউন ডেস্ক: অধিকৃত পশ্চিম তীরে শুক্রবার ইসরায়েলের অবৈধ ইহুদি বসতি সম্প্রসারণের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে গুলি চালিয়েছেন দেশটির সেনারা। এতে বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী একজন তুর্কি–মার্কিন নারী নিহত হয়েছেন। ফিলিস্তিন ও তুরস্কের কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন।
নিহত নারীর নাম আয়েশেনুর এজগি আইগি। হোয়াইট হাউস বলেছে, ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে তাঁর নিহত হওয়ার ঘটনায় তারা ভীষণভাবে বিরক্ত। সেই সঙ্গে এ ঘটনার তদন্ত করতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
এ ঘটনা প্রসঙ্গে তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, আয়েশেনুরকে মাথায় গুলি করে মারা হয়েছে। তাঁর মৃত্যুর জন্য ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরকার দায়ী।
ফিলিস্তিনি এক কর্মকর্তা বলেন, ২৬ বছর বয়সী আয়েশেনুর যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলের বাসিন্দা। তিনি ফিলিস্তিনি পক্ষের একজন কর্মীও। যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্কের দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে তাঁর।
আয়েশেনুর সম্প্রতি সিয়াটলে ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটন থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। তাঁর নিহত হওয়ার ওই খবরকে ভয়ানক বলে আখ্যায়িত করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রেসিডেন্ট আনা মারি কস। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, অন্য শিক্ষার্থীদের ওপর আইগির একটি ইতিবাচক প্রভাব ছিল।
ঘটনাটি নিয়ে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলেছে, তাদের সেনারা একজন পুরুষ বিক্ষোভকারীকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন; যিনি ছিলেন ‘মূল ইন্ধনদাতা’। তিনি পাথর ছুড়ে ইসরায়েলি সেনাদের ঝুঁকিতে ফেলেছিলেন।
গুলিতে একজন বিদেশি নারী নিহত হওয়ার খবর সেনাবাহিনী খতিয়ে দেখছে বলেও জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। তবে নেতানিয়াহুর দপ্তর থেকে এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আয়েশেনুরকে নাবলুসের রাফিদিয়া হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালটির প্রধান ফুয়াদ নাফা বলেন, মাথায় গুরুতর জখম অবস্থায় আনা হয়েছিল তাঁকে। তাঁর অবস্থা ছিল সংকটাপন্ন। তিনি আরও বলেন, ‘তাঁকে বাঁচানোর আশায় আমরা অস্ত্রোপচার করেছিলাম। তবে দুঃখজনকভাবে মারা যান তিনি।’
নাবলুস শহরের কাছে বেইতা গ্রামে অধিকারকর্মীরা নিয়মিত ওই বিক্ষোভ আয়োজন করেছিলেন এবং সেই সময় ইসরায়েলি বাহিনী গুলি ছোড়ে বলে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের সরকারি বার্তা সংস্থা ডব্লিউএএফএর খবরে বলা হয়। এ গ্রামে মাঝেমধ্যেই ফিলিস্তিনিদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে থাকেন অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপনকারীরা।
ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের মিডল ইস্টার্ন ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড কালচার বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আরিয়া ফ্যানি আয়েশেনুরকে একজন ব্যতিক্রমী ব্যক্তিত্বের অধিকারী বলে বর্ণনা করেন। প্রভাবশালী ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে তিনি বলেন, ‘তাঁকে আমি সেখানে না যাওয়ার (পশ্চিম তীর) অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু জনগণের (ফিলিস্তিনি) ওপর নিপীড়ন (ইসরায়েলের) ও তাঁদের প্রতিবাদের সাক্ষী হতে দৃঢ়প্রত্যয়ী ছিলেন তিনি।’
গাজায় চলমান যুদ্ধে ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত সমর্থনের প্রতিবাদে সম্প্রতি দেশটির বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে ব্যাপক বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। ওই বিক্ষোভেও আয়েশেনুর অংশ নিয়েছিলেন বলে জানান ওই অধ্যাপক।