বাণিজ্য ডেস্ক: ভারতে পেঁয়াজের দাম আবার বেড়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে দাম কমাতে সরকারি মজুতভান্ডার থেকে খোলাবাজারে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করেছে মোদি সরকার। দেশটির সরকার কিছুদিন আগে পেঁয়াজ রপ্তানিতে ন্যূনতম মূল্য তুলে নেওয়ার জেরে দাম বাড়ছে বলে অভিযোগ।
ইতিমধ্যে রাজধানী নয়াদিল্লিসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শহরে এই পেঁয়াজ ভর্তুকি মূল্যে বিক্রি শুরু হয়েছে। দেশটির কয়েকটি রাজ্যে সামনেই বিধানসভা নির্বাচন। সেই নির্বাচনের আগে যেন মূল্যস্ফীতি লাগামছাড়া না হয়, তা নিশ্চিত করতেই এ উদ্যোগ। বড় শহরগুলোর পর সারা দেশেই ভর্তুকি মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি করা হবে বলে জানানো হয়েছে। খবর ইকোনমিক টাইমসের
ভারত সরকারের লক্ষ্য হলো দেশের সবখানেই প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৩৫ রুপিতে বিক্রি করা। বিশেষ করে যেসব অঞ্চলে পেঁয়াজের দাম জাতীয় গড় দামের চেয়ে বেশি, সেসব অঞ্চলে জোর দিয়েই সারা দেশে এই খুচরা বিক্রি কার্যক্রম চলবে। সরকারের মুখপাত্র জানিয়েছেন, ভান্ডার থেকে ৪ দশমিক ৭ লাখ টন পেঁয়াজ বাজারে ছাড়া হচ্ছে; সেই সঙ্গে এবার খারিফ শস্যও (হেমন্তকালীন ফসল) ভালো হবে। তাঁর আশাবাদ, পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
৫ সেপ্টেম্বর থেকেই ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার রাজধানী নয়াদিল্লিসহ বিভিন্ন রাজ্যের রাজধানী শহরে ভ্যানে করে ৩৫ রুপি কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি করছে।
দেশের ভেতরে জোগান বাড়াতে নির্দিষ্ট দামের নিচে পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছিল ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। লক্ষ্য ছিল দাম নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা। কিন্তু আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে কিছু রাজ্যের চাষিদের সন্তুষ্ট করতে সম্প্রতি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার সে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, কার্যত তার পর থেকেই পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করে।
ভারতের রাজধানী দিল্লিতে এখন পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজি ৫৫ রুপি; এক বছর আগে যা ছিল কেজিপ্রতি ৩৮ রুপি। মুম্বাই ও চেন্নাই শহরে পেঁয়াজের দাম উঠেছে যথাক্রমে ৫৮ ও ৬০ রুপি। বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে পেঁয়াজের দাম ৭০ থেকে ৮০ রুপি।
ইকোনমিক টাইমসে বলা হয়েছে, সরকারি মজুত থেকে বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হবে সরকারি সমবায় সংস্থার মাধ্যমে। তবে ব্যবসায়ীদের সংগঠন ফেডারেশন অব ট্রেডার্স অর্গানাইজেশনস বলছে, এ পদক্ষেপে দাম আদৌ কমবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। দাম কতটা ও কত দিনে কমানো সম্ভব, সেটাও বড় প্রশ্ন।
চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর বিধিনিষেধ আরও শিথিল করে। প্রতি টন পেঁয়াজ রপ্তানির ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ৫৫০ ডলার মূল্যের যে শর্ত ছিল, তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। পাশাপাশি রপ্তানি শুল্কও কমানো হয়। গুরুত্বপূর্ণ পেঁয়াজ উৎপাদন অঞ্চল মহারাষ্ট্র রাজ্যে নির্বাচনের আগে পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর শর্ত শিথিল করা হয়।
অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে ভারত একসময় পেঁয়াজ রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছিল। চলতি বছরের মে মাসে রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে পেঁয়াজের সর্বনিম্ন রপ্তানিমূল্য ৫৫০ ডলার নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এ ছাড়া রপ্তানির ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে দেশটির সরকার। এখন তা–ও কমিয়ে অর্ধেক করা হয়েছে।
কিন্তু ভারত সরকার পেঁয়াজচাষিদের সন্তুষ্ট করতে গিয়ে ক্রেতাদের অসন্তুষ্টির কারণ হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে তারা কী সিদ্ধান্ত নেয়, সবাই এখন তা দেখার অপেক্ষায়।