দি মারিয়ার চোখ ভিজিয়ে চিলির জালে তিন গোল আর্জেন্টিনার

দি মারিয়াকে প্রাপ্য সম্মানই জানিয়েছে আর্জেন্টিনা দল | এএফপি

খেলা ডেস্ক: ম্যাচটা ২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইয়ের হলেও আদতে ব্যাপারটা আরেকটু গভীর ছিল। দলের দুই কান্ডারি লিওনেল মেসি ও আনহেল দি মারিয়া নেই। প্রথমজন চোট থেকে ফিরতে পারেননি, পরেরজন কোপা আমেরিকা জিতেই জাতীয় দল থেকে অবসর নিয়েছেন। ২০১৩ সালের ১৫ অক্টোবরের পর এই প্রথম অফিশিয়াল প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে দুই কিংবদন্তিকে ছাড়াই মাঠে নামল আর্জেন্টিনা। দুজনকে যেহেতু চিরকাল পাওয়া যাবে না, আর তাঁদের শূন্যতা পূরণের প্রস্তুতিও তো নিতে হবে! বুয়েনস এইরেসে চিলির বিপক্ষে ম্যাচটা তাই একরকম পরীক্ষাই ছিল লিওনেল স্কালোনির দলের জন্য।

আর্জেন্টিনাকে সে পরীক্ষায় লেটার মার্কসসহ পাস করালেন অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার, হুলিয়ান আলভারেজ ও বদলি হয়ে নামা পাওলো দিবালা। তাঁদের গোলে চিলিকে ৩–০ ব্যবধানে বিধ্বস্ত আর্জেন্টিনা। তিনটি গোলই এসেছে দ্বিতীয়ার্ধে।

প্রথমার্ধে তেমন ভালো খেলতে পারেনি আর্জেন্টিনা। গতিময় ফুটবল খেলার চেষ্টা করলেও বলের নিয়ন্ত্রণ রাখতে হিমশিম খেয়েছে। চিলিও গতির জবাব গতি দিয়েই দেওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু প্রথমার্ধে একবার বল পোস্টে মারা ছাড়া তেমন কিছু করতে পারেনি। তবে বিরতির পর দ্বিতীয়ার্ধে তিন মিনিটের মাথায় আর্জেন্টিনার করা গোলটি চোখ জুড়িয়ে দিতে পারে ভক্তদের। মাঝমাঠে খেলার দিক পাল্টে ডান প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা রদ্রিগো দি পলকে পাস দেন আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডার ক্রিস্টিয়ান রোমেরো। বল নিয়ে বেশ খানিকটা এগিয়ে চিলির বক্সের ডান কোণ বরাবর দৌড়ানো ফরোয়ার্ড হুলিয়ান আলভারেজকে পাস দেন মিডফিল্ডার দি পল। আলভারেজ চলতি বলই ক্রস করেন চিলির গোলপোস্টের সামনে। দৌড়ের সময় সামনে সেই ক্রস পেলেও ডামি করেন আরেক ফরোয়ার্ড লাওতারো মার্তিনেজ। বোকা বনে যায় চিলির রক্ষণ। কারণ ওখান থেকে যে কারও শট নেওয়াই স্বাভাবিক। মার্তিনেজ বলটি ছাড়ায় সুবিধাজনক অবস্থানে দাঁড়িয়ে থাকা ম্যাক অ্যালিস্টার শট নিয়ে গোল করেন। আর্জেন্টিনার হয়ে এটি ম্যাক অ্যালিস্টারের তৃতীয় গোল।

নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার ৬ মিনিট আগে আলভারেজের কাছ থেকে ম্যাচের দ্বিতীয় গোলটি পায় আর্জেন্টিনা। চিলির বক্সের বাইরে থেকে বাঁ পায়ের দারুণ শটে চোখধাঁধানো গোলটি করেন আতলেতিকো মাদ্রিদ ফরোয়ার্ড। ম্যাক অ্যালিস্টারের জায়গায় ৭৯ মিনিটে বদলি হয়ে নামা অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার দিবালা আর্জেন্টিনাকে এনে দিয়েছেন তৃতীয় গোল। যোগ করা সময়ের ১ মিনিটে আলেহান্দ্রো গারনাচোর পাস পেয়ে বাঁ কোনো দুরহ জায়গা থেকে কোনাকুনি শটে গোল করেন মেসির ১০ নম্বর জার্সি পরে মাঠে নামা দিবালা।

যুক্তরাষ্ট্রে গত জুলাইয়ে কোপা আমেরিকা জয়ের পর এটা ছিল আর্জেন্টিনার প্রথম ম্যাচ। কোপার ফাইনাল খেলেই অবসর নেওয়া দি মারিয়াকে এই ম্যাচে আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (এএফএ) সম্মাননা দেওয়ার ব্যাপারটি আগেই জানা গিয়েছিল। আর্জেন্টিনা দল গা গরম করতে নামার আগেই পরিবার নিয়ে রিভার প্লেটের মাঠে উপস্থিত হন দি মারিয়া। আর্জেন্টিনা দলের হয়ে মাঠে তাঁর স্মরণীয় সব মুহূর্ত দেখানো হয় স্টেডিয়ামের জায়ান্ট স্ক্রিনে। ব্যাকগ্রাউন্ডে পাঠ করা হয় দি মারিয়াকে লেখা তাঁর মেয়ে মিয়ার চিঠি। মায়ামি থেকে রেকর্ড করা ভিডিওতে মেসির পাঠানো বার্তাও শোনানো হয় দি মারিয়াকে। আবেগে টইটম্বুর এমন সব মুহূর্তে চোখ মুছেছেন আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি।

প্রথমার্ধে বলার মতো আক্রমণ করতে পারেনি আর্জেন্টিনা। তবে ৩১ মিনিটে চিলির এদুয়ার্দো ভার্হাসের হেড আর্জেন্টিনার পোস্টে লাগায় গোল পায়নি চিলি। বিরতির পর অবশ্য ঘুরে যায় পাশার দান। চিলির বক্সে বেশ কিছু সুযোগ তৈরি করেন আলভারেজ-মার্তিনেজরা। আর মাঝমাঠ নিয়ন্ত্রণ করেছেন দি পল, ম্যাক অ্যালিস্টার ও এনজো ফার্নান্দেজ। আর্জেন্টিনার মাটিতে এর আগে স্বাগতিকদের কখনো হারাতে পারেনি চিলি। মার্তিনেজ-আলভারেজ-দিবালাদের কল্যাণে আজও তাঁর ব্যতিক্রম ঘটল না। তবে ফুটবলের পরিসংখ্যানবিষয়ক এক্স হ্যান্ডল ‘মিস্টারচিপ’ জানিয়েছে, পয়েন্ট টেবিলে নবম স্থানে থাকা চিলি দক্ষিণ আমেরিকার বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ইতিহাসে সবচেয়ে বাজে শুরু করেছে। (৭ ম্যাচ) সম্ভাব্য ২১ পয়েন্টের মধ্যে তারা তুলে নিতে পেরেছে মাত্র ৫ পয়েন্ট।

আর্জেন্টিনার অবশ্য দুশ্চিন্তা নেই। ৭ ম্যাচে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে দক্ষিণ আমেরিকান বাছাইয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে লিওনেল স্কালোনির দল। ৬ ম্যাচ খেলে দ্বিতীয় উরুগুয়ের সঙ্গে ৫ পয়েন্ট ব্যবধানে এগিয়ে আর্জেন্টিনা। অন্য ম্যাচে ভেনেজুয়েলাকে ৪-০ গোলে হারিয়েছে বলিভিয়া।