কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন অন্তবর্তীকালীন সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রতিনিধি কক্সবাজার ও মহেশখালী: কক্সবাজারের মহেশখালীতে ৫৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মাতারবাড়ী ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রকে ‘প্রকল্প বিলাস’ বলে অভিহিত করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। এই প্রকল্প থেকে সাধারণ মানুষ খুব বেশি উপকৃত হচ্ছে না মন্তব্য করে উপদেষ্টা বলেন, মূল প্রকল্পের ধারণা অনুসারে গভীর সমুদ্রবন্দর, শিল্পকারখানা, রেল ও সড়ক সংযোগ না করেই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের বিলাসী প্রকল্প থেকে সরকার সরে আসবে। ছোট প্রকল্পে মনোযোগী হবে, যাতে তা মানুষের কাজে আসে।
শনিবার সন্ধ্যায় কক্সবাজার হিলডাউন সার্কিট হাউসে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেন, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদনের জন্য মাত্র ৩০ দিনের কয়লা মজুত রয়েছে। শিগগিরই এ সংকটের সমাধান হবে।
এ সময় বিদ্যুৎ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. হাবিবুর রহমান, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মো. নুরুল আলম, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সঞ্জয় কুমার বণিক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে উপদেষ্টা মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিদর্শনে যান। সেখানে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। এ সময় তাঁদের কয়লা–সংকট দূর করে বিদ্যুৎ উৎপাদন ধরে রাখার তাগিদ দেন। এ ছাড়া মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও মতবিনিময় করেন উপদেষ্টা।
বঙ্গোপসাগরের কূল ঘেঁষে মাতারবাড়ীর ১ হাজার ৬০০ একরের পরিত্যক্ত লবণ মাঠে নির্মাণ হচ্ছে দেশের বৃহৎ ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ধারণক্ষমতার তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে খরচ হচ্ছে প্রায় ৫১ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাপানের উন্নয়ন সংস্থা জাইকা দিচ্ছে প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা, বাকি টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড। ২০২৩ সালের জুলাই মাসে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট থেকে ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়। আগামী ডিসেম্বর মাসে দ্বিতীয় ইউনিট থেকে আরও ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা রয়েছে।
তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, কিছুদিন ধরে প্রকল্পে কয়লা আমদানি বন্ধ রয়েছে। তাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধের শঙ্কা দেখা দেয়। বর্তমানে কেন্দ্রে কয়লা মজুত রয়েছে ২ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টনের মতো।
আজ সকালে কক্সবাজার পৌঁছান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। এরপর দুপুর ১২টা থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত মাতারবাড়ী প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখেন। উপদেষ্টা বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের চাপ কমাতে মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর দরকার আছে। মহেশখালীতে সমুদ্রের গভীরতা বেশি, বড় জাহাজ ভিড়তে পারে, তাই ব্যয়ও কম হবে।
ব্যয়বহুল তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প জনগণের কোনো কাজে আসছে না জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, এত বিশাল জায়গা নিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলেও মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে না। যাঁরা প্রকল্প নিয়েছেন (গ্রহণ) তাঁরাই লাভবান হয়েছেন। এখানকার বিদ্যুৎ ঢাকায় ব্যবহার হলেও মহেশখালীর মানুষ পাচ্ছেন না।
প্রকল্পের অনিয়ম-দুর্নীতি তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, ‘দুর্নীতি সব জায়গাতে, এখানেও। দুর্নীতির দায়ে ইতিমধ্যে একজন শীর্ষ কর্মকর্তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত করছে দুদক। দুর্নীতি রোধে মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে।’