কারাগার | প্রতীকী ছবি |
প্রতিনিধি নওগাঁ: নওগাঁয় জমি নিয়ে বিরোধের জেরে মান্দা উপজেলার ভরট্ট শিবনগর গ্রামের কৃষক আজিমুদ্দিনকে (৫৫) হত্যার মামলায় ২৬ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাঁদের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আজ সোমবার দুপুরে নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক মো. মোখলেছুর রহমান এ রায় দেন।
২৬ বছর আগে ১৯৯৮ সালের ২ ডিসেম্বর নওগাঁর মান্দা উপজেলার ভরট্ট শিবনগর গ্রামে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে আজিমুদ্দিন নামের এক কৃষককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহত আজিমুদ্দিনের ছেলে আমজাদ হোসেন বাদী হয়ে মান্দা থানায় মামলা করেন। মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত ২৬ আসামির মধ্যে ২২ জনকে আজ আদালতে আনা হয়। চারজন পলাতক। এই চারজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আদালতে উপস্থিত থাকা যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত ২২ আসামি হলেন মান্দা উপজেলার ভরট্ট শিবনগর গ্রামের মনছুর আলী, আলতাব হোসেন, দেলোয়ার হোসেন, ফজের আলী, ফজলুর রহমান, কাদের আলী, জবেদ আলী, কাজেমুদ্দিন, অহিদুল ইসলাম, আছিব উদ্দিন, মোখলেছার রহমান মণ্ডল, কাশেম আলী, লিয়াকত আলী, জালাল, শাহজাহান আলী, ছাইদুর রহমান, পৈক্যা ওরফে বুলু, আজাদ আলী মৃধা, আশরাফুল মৃধা, কলিমুদ্দিন মণ্ডল, পটল ওরফে পরশ উল্যা ও গুল মাসুদ। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক চার আসামি হলেন একই গ্রামের এনামুল হক, আনিছুর রহমান, মোখলেছুর রহমান ও মোজাহার আলী।
আদালত ও মামলার নথি সূত্রে জানা গেছে, মান্দা উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের ভরট্ট শিবনগর গ্রামের বাসিন্দা আজিমুদ্দিন গ্রামের মসজিদের নামে থাকা জমি লিজ নিয়ে ভোগদখল করতেন। সেই জমি নিয়ে আজিমুদ্দিনের সঙ্গে একই গ্রামের বাসিন্দা মনসুর আলী, শাহজাহান আলী ও আলতাব হোসেন মণ্ডলের বিরোধ ছিল। ১৯৯৮ সালের ২ ডিসেম্বর সকাল ছয়টার দিকে মনসুর আলী, শাহজাহান আলী ও আলতাব হোসেন মণ্ডল লোকজন নিয়ে আজিমুদ্দিনের ভোগদখল করা জমিতে ধানের চারা রোপণ করতে যান। এ সময় আজিমুদ্দিন তাঁদের বাধা দিতে গেলে মনসুর আলী, শাহজাহান আলী, আলতাব হোসেন ও তাঁদের সহযোগীরা লাঠি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁর শরীর ও মাথায় আঘাত করেন। গুরুতর আহত অবস্থায় আজিমুদ্দিনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে পরদিন তাঁর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আজিমুদ্দিনের ছেলে আমজাদ হোসেন বাদী হয়ে মান্দা থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ১৯৯৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর আদালতে ৩৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেন। আদালতে বিচারাধীন থাকা অবস্থায় মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আট আসামির মৃত্যু হওয়ায় তাঁদের নাম বাদ দেওয়া হয়। ফলে পরবর্তীকালে ২৬ জনের বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম চলমান থাকে। ১২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ এবং রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের শুনানি শেষে দীর্ঘ ২৬ বছর পর সোমবার দুপুরে মামলাটির রায় ঘোষণা করা হয়।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি শুনানি করেন অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) সামসুর রহমান এবং আসামিপক্ষে মামলাটি শুনানি করেন আইনজীবী ইউসুফ আলী।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সামসুর রহমান বলেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে কৃষক আজিমুদ্দিনকে নির্মমভাবে পিটিয়ে ও অস্ত্র দ্বারা আঘাত করে হত্যা করেছেন। রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত দণ্ডবিধির ৩০২ ও ৩৪ ধারা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হওয়ায় আদালত মামলায় অভিযুক্ত সব আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। রায়ে আদালত বলেছেন, রায় ঘোষণার আগে আসামিদের হাজতবাস ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৫ ধারা মোতাবেক সাজার মেয়াদ থেকে বাদ যাবে।