ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হতাহত ও নিখোঁজদের তথ্য সংগ্রহের জন্য উদ্বোধন করা হয়েছে রেডজুলাই ডট লাইভের। রোববার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে এটির উদ্বোধন করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

নিজস্ব প্রতিবেদক: ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত, আহত ও নিখোঁজ বা গুম ব্যক্তিদের তথ্য সংগ্রহের ওয়েব পোর্টাল ‘রেডজুলাই ডট লাইভের’ উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ রোববার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এটির উদ্বোধন করেন।

তাঁরা জানান, আন্দোলনে নিহত, আহত ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের সঠিক তালিকা করা, তাঁদের আর্থসামাজিক অবস্থা তুলে ধরা, তাঁদের স্মরণে রাখা এবং ইতিহাসের বিকৃতি রোধে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আপাতত তাঁদের টাকায় ওয়েব পোর্টালটির কাজ চলবে। একটা পর্যায়ে তাঁরা এটি সরকারের কাছে হস্তান্তর করার চেষ্টা করবেন।

ওয়েব পোর্টালটির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অংশ নেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন, ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক মাফরুহি সাত্তার, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক শামসুল আলম, কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগের অধ্যাপক আবু সাঈদ মো. মোস্তাফিজুর রহমান, অধ্যাপক মোহাম্মদ সালেহ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আরিফ সোহেল ও আবদুর রশিদ, জাবি সমন্বয়ক আহসান হাবিব, বিশ্ববিদ্যালয়টির সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থী মালিহা নামলাহ্ প্রমুখ।

ওয়েব পোর্টালটি তৈরিতে কাজ করেছেন অধ্যাপক আবু সাঈদ মো. মোস্তাফিজুর রহমান, বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক শিক্ষার্থী মাসুদ আলম ও ৫০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, যে কেউ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত, আহত ও নিখোঁজ বা গুমের শিকার ব্যক্তিদের তথ্য এই ওয়েব পোর্টালে দিতে পারবেন।

রেডজুলাই ডট লাইভে ঢুকে দেখা যায়, এখানে আহত, শহীদ ও নিখোঁজ অপশনে তথ্য সংযোজন করার সুযোগ সবার জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। সেখানে ভুক্তভোগীর নাম, মা–বাবার নাম, জন্মতারিখ, লিঙ্গ, মোবাইল নম্বর, পেশা, মৃত্যুর কারণ, জেলা, বর্তমান ঠিকানা, স্থায়ী ঠিকানা, যেখানে ঘটেছে, আহত হওয়ার তারিখ, ঘটনার সময়, কখন মারা গেছে, ছবি, মৃত্যুসনদ, হাসপাতালের নাম, নিহতের জীবনী প্রভৃতি তথ্য-উপাত্ত জমা দেওয়া যাবে। পোর্টাল কর্তৃপক্ষ তা যাচাই-বাছাই করে প্রকাশ করবে।

তথ্য যাচাই-বাছাই করার জন্য সারা দেশে রেডজুলাই ডট লাইভের পক্ষ থেকে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। প্রতিনিধিদের অবশ্যই শিক্ষার্থী হতে হবে। কোনো নাগরিক কোনো নিহত, আহত বা নিখোঁজ ব্যক্তির তথ্য জমা দিলে তা সরেজমিন যাচাই–বাছাই করবেন এই প্রতিনিধিরা। এরপর তা প্রকাশ করা হবে। এ ছাড়া ওয়েব পোর্টালটির প্রতিনিধিরাও তথ্য সংগ্রহ করবেন।

অনুষ্ঠানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের অধ্যাপক আবু সাঈদ মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ওয়েব পোর্টালটির কাজ এখনো চলমান আছে। কোনো ভুয়া তথ্য যেন না আসে, সে জন্য সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আরিফ সোহেল বলেন, ‘আন্দোলনে হতাহত ও নিখোঁজদের তথ্য সংগ্রহ করে রাখতে না পারলে পরে তা বিকৃত করার চেষ্টা হবে।’ অপর কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আবদুর রশিদ বলেন, ‘এই আন্দোলনের বীরদের যেন ভুলে না যাই, তাই এমন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।’

মালিহা নামলাহ্ বলেন, ‘দেশে অনেক মুক্তিযোদ্ধা আছেন, যাঁরা সরকারি সুবিধা পান না। আবার অনেকে আছেন, যাঁরা মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও সুবিধা নিচ্ছেন। তাই এই আন্দোলনের যথাযথ তথ্য থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

রেডজুলাই ডট লাইভ ওয়েব পোর্টালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক আহসান হাবিব। অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য দেন অধ্যাপক শামসুল আলম। আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসার ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপে হতাশা প্রকাশ করেন তিনি।