টানা বৃষ্টিতে ঝুপড়িতে পানি ঢুকছে, প্রতিবন্ধী জহুরা এখন যাবেন কোথায়?

ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে জহুরার ঘরটির চারপাশে পানি জমেছে। উপজেলার সলেমানপুর দাসপাড়া সড়কের ধারে রোববার | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি ঝিনাইদহ: টিনের ছোট একটা ঘর। ঘরের দরজা বেড়ার কাঠামো দিয়ে তৈরি। পলিথিন দিয়ে তা ঢেকে দেওয়া হয়েছে। ঘরের ভেতর পলিথিনের ওপর চাদর বিছিয়ে এক বৃদ্ধা শুয়ে আছেন। আসবাব বলতে আর কিছু নেই। এটা প্রতিবন্ধী জহুরা খাতুনের থাকার ঘর।

টানা বৃষ্টিতে এ ঘরের সামনে দিয়ে বয়ে চলেছে পানির স্রোত। ঘরেও অল্প ঢুকেছে পানি। আরেকটু পানি বাড়লেই ভেসে যেতে পারে তাঁর ওই মাথা গোঁজার ঠাঁইটি। রোববার বিকেলে এমন দৃশ্য দেখা গেল ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার সলেমানপুর দাসপাড়া সড়কের ধারে।

মাঝেমধ্যে জহুরাকে দেখাশোনা করেন রুমা বেগম। তিনি জানান, জহুরা খাতুন বয়স পায় ৬০ বছর। সবাই তাঁকে ‘ডুলি পাগলি’ বলেই চেনেন। ভিক্ষা করে জীবন চালাতেন তিনি। আগে থাকতেন মানুষের ঘরের বারান্দায়। অসুস্থ হয়ে পড়ায় এখন তাঁর জায়গা হয়েছে কোটচাঁদপুর পৌরসভার সলেমানপুর ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সড়কের পাশের এই ঝুপড়িতে।

রুমা বলেন, জহুরার ঝুপড়িটিও বানিয়ে দিয়েছেন তিনিসহ এলাকার কয়েকজন নারী। মানুষের কাছ থেকে বাঁশ-টিন চেয়ে এনেছিলেন তাঁরা। সামর্থ্য না থাকলেও জহুরার খাওয়া আর ওষুধ খরচ চালাচ্ছেন তাঁরাই ভাগাভাগি করে। তবে এভাবে বেশি দিন করা তাঁদের পক্ষেও সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন।

বিষয়টি নিয়ে কয়েক মাস আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উছেন মের শরণাপন্ন হন কোটচাঁদপুরের কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী। এ সময় তিনি উপজেলা সমাজসেবা অফিসের মাধ্যমে দুই হাজার টাকা সহায়তা দেন। তবে ইতিমধ্যে জহুরার প্রতিবন্ধী কার্ড হয়েছে, তবে এখনো ভাতার টাকা পাননি।

এদিকে গত দুই দিনের টানা বর্ষণে ভেসে গেছে জহুরার বাড়ির সামনের পথঘাট। তাঁর ঝুপড়ির চারদিকেও পানি জমেছে। এ অবস্থায় জহুরার কিছু হলে কী করবেন, তা নিয়ে রুমা চিন্তিত। রুমা জানান, জহুরার স্বামীর বাড়ি কালীগঞ্জে। ৩০ বছর আগে মারা যান তাঁর স্বামী। এরপর মেয়ে তাসলিমা খাতুনকে সঙ্গে নিয়ে জহুরা চলে আসেন কোটচাঁদপুরে। আশ্রয় নেন কোটচাঁদপুরের সলেমানপুর দাসপাড়ায়। থাকতেন মানুষের বারান্দায় বারান্দায়। ভিক্ষা করে বেঁচে ছিলেন মা-মেয়ে। মেয়েটিকে বড় করে স্থানীয় ব্যক্তিদের সহায়তায় বিয়ে দেন। মেয়ে মাঝেমধ্যে মাকে দেখাশোনা করতেন। কিন্তু দুই বছর আগে মেয়েটিও মারা গেছেন। এখন জহুরার আর কেউ নেই।

এলাকার লোকজন বলেন, মেয়ের মৃত্যুর পর ভেঙে পড়েন জহুরা খাতুন। বয়সের ভারে কিছুটা ভারসাম্যহীনও হয়ে গেছেন। বর্তমানে অনেক অসুস্থ তিনি। তাঁর এই অবস্থা দেখে এলাকার রুমা, রাহেলা বেগম, সাজেদা বেগম ও পারভিনা বেগম মিলে মানুষের কাছ থেকে বাঁশ আর টিন চেয়ে রাস্তার ধারে ঝুপড়িটি বানিয়ে দিয়েছেন। দেখাশোনাও করেন তাঁরাই।

এ ব্যাপারে ইউএনও উছেন মে জানিয়েছেন, সমাজসেবা কার্যালয়ের মাধ্যমে জহুরা বেগমের জন্য কোনো ব্যবস্থা করা যায় কি না, সেটা দেখবেন।