কুষ্টিয়া মিরপুরে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হয় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

প্রতিনিধি কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলায় বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রহমত আলীসহ উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রহমত আলীর অবস্থা গুরুতর। তাঁকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের অস্ত্রোপচার কক্ষে নেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার বেলা দুইটার দিকে উপজেলার ঈগল চত্বরে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল হক ও সাধারণ সম্পাদক রহমত আলীর অনুসারী নেতা-কর্মীদের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। আহত ব্যক্তিদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, মিরপুর পৌর ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মনিরুল ইসলাম সারের ব্যবসা করেন। গতকাল সোমবার সকালে একটি ট্রাকে থাকা সারের বৈধ চালান দেখতে যান উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রহমত আলী ওরফে রব্বান। চালানের বৈধ কোনো কাগজপত্র দেখাতে না পারার অভিযোগ তুলে ট্রাক আটকে রেখে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে খবর দেন তিনি। মনিরুলের লোকজনকে মারধরও করেন।

এ ঘটনার পর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল হকের সমর্থক ফুলবাড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি খন্দকার টিপু সুলতানসহ তাঁর লোকজন জোর করে সার নামিয়ে দেন। এতে দুই পক্ষের মধ্যেই উত্তেজনা শুরু হয়। এরপরই রহমতের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলে ওই সার ব্যবসায়ী সংবাদ সম্মেলন করেন। এর প্রতিবাদে আজ সকালে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপি নেতা রহমত। এরপর উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের সামনে রহমতের ভাই জাহেদ আলীর সঙ্গে সার ব্যবসায়ীর ছেলে আসিফের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়।

এ সময় ফুলবাড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি টিপু সুলতানসহ অন্যরা আসিফের পক্ষ নিয়ে পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও রহমত আলীর ছোট ভাই ইব্রাহিম আলীর সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ান। বিষয়টি জানতে পেরে রহমতের লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে আসিফকে মারধর করেন। এ ঘটনার কিছুক্ষণ পর টিপু সুলতানের নেতৃত্বে তাঁর লোকজন দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অতর্কিতে হামলা করেন। এতে উভয়পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে রহমত আলী, তাঁর ভগ্নিপতি সালাম, টিপু সুলতানের পক্ষের আতাউলসহ অন্তত ১০ জন আহত হন। তাঁদের মিরপুর উপজেরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের অস্ত্রোপচার কক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন রহমত আলীর ভাগনে আল সাইফ। তিনি বলেন, আবদুল হক ও টিপু সুলতান তাঁর মামাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিতে নানা পরিকল্পনা করছেন। রহমতের জনপ্রিয়তা দেখে তাঁদের ঈর্ষা হয়। এ জন্য হামলা চালিয়ে আহত করেছেন। তাঁর বাবাও আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় থানায় মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

হাসপাতালের ১০ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন টিপু সুলতানের পক্ষের কর্মী আতাউল হক বলেন, তাঁর মাথায় আটটি সেলাই পড়েছে। রহমত আলী ৫ আগস্টের পর এলাকায় ব্যাপক চাঁদাবাজি করে আসছেন। তারই প্রতিবাদ করা হয়। এতে তাঁরা উত্তেজিত হয়ে লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা করেন। এতে তিনিসহ আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন।

উপজেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক মারফত আফ্রিদী বলেন, ফুলবাড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি খন্দকার টিপু সুলতানের লোকজন দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা করেন। এতে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রহমত আলী, তাঁর দুই ভাই ও ভগ্নিপতি আহত হন। রহমত আলীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হতে পারে।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক ইকবাল হোসেন বলেন, রহমত আলীর হাত, মাথা ও পিঠে কয়েকটি স্থানে কেটে গেছে। তাঁর এক হাত ভেঙে গেছে। বাকি আরেকজনের মাথায় কাটা দেখা গেছে।

এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল হকের মুঠোফোনে কল দিলে তিনি কুষ্টিয়ার বাইরে আছেন জানিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যান।

জানতে চাইলে জেলা বিএনপির সদ্য বাতিল হওয়া কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন সরকার বলেন, বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে যে ঘটনা ঘটেছে, তা অপ্রত্যাশিত। তাদের আচরণ অসহিষ্ণু। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান তিনি।

মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তফা হাবিবুল্লাহ বলেন, বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।