মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মুইজ্জু |
পদ্মা ট্রিবিউন ডেস্ক: মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মুইজ্জু শিগগিরই ভারত সফরে যাবেন। ‘ইন্ডিয়া আউট’ কর্মসূচি দিয়ে গত বছরের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিপুল ভোটে জিতেছিলেন তিনি। তবে সরকার গঠনের পর অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপ। এর মধ্যে মুইজ্জুর ভারত সফরের কথা শোনা যাচ্ছে।
মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের প্রধান মুখপাত্র হিনা ওয়ালিদ গত সপ্তাহে জানান, ‘প্রেসিডেন্ট শিগগিরই ভারত সফরে যাবেন৷’
গত এপ্রিলে মুইজ্জুর সরকার মালদ্বীপে থাকা ভারতের সেনাদের একটি দলকে মালদ্বীপ ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছিল। এরপর মে মাসে চীনের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি সই করে তারা৷
এ ছাড়া বছরের শুরুতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করেছিলেন মালদ্বীপের দুজন উপমন্ত্রী। ভারতের লাক্ষ্মাদ্বীপে মোদির পর্যটন প্রসারের পরিকল্পনার পরিপ্রেক্ষিতে ওই মন্তব্য করেছিলেন মালদ্বীপের মন্ত্রীরা। এর উত্তরে ভারতের পর্যটকেরা মালদ্বীপ বর্জনের ডাক দেন, যেটি পর্যটননির্ভর মালদ্বীপের জন্য মারাত্মক হুমকি ছিল৷
সম্পর্ক মেরামতের চেষ্টা
মুইজ্জুর ভারত সফর দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কে মেরামতের চেষ্টা কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে গবেষণা সংস্থা মন্ত্রয়ার প্রধান শান্থি ম্যারিয়েট ডি সুজা বলেন, মুইজ্জুর সরকার আপাতদৃষ্টে ভারতের সঙ্গে অনুকূল সম্পর্ক থাকলে যে সুবিধা পাওয়া যায়, তার বাস্তবতা যাচাই করেছে৷ ‘এটাকে নীতি পরিবর্তন বলা এখনই ঠিক হবে না, তবে এটা অবশ্যই ভারত-মালদ্বীপের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ইতিবাচক অগ্রগতি।’
শান্থি ম্যারিয়েট ডি সুজা আরও বলেন, মালদ্বীপ ভারত ও চীনের সঙ্গে সম্পর্কে ভারসাম্য রেখে লাভবান হতে চাইছে৷
ডি সুজা বলেন, ‘মোদিকে নিয়ে ঠাট্টা করা দুই উপমন্ত্রীর পদত্যাগ বলে দিচ্ছে মুইজু নয়াদিল্লির সঙ্গে সুন্দর সম্পর্ক বজায় রাখতে চান। তবে এতে চীনের প্রতি তাঁর যে পক্ষপাত, সেটি পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা নেই।’
আর্থিক সংকটে মালদ্বীপ
মালদ্বীপের ঋণের বোঝা বাড়ছে। রাজস্বের পরিমাণ কম। রিজার্ভও কমে যাওয়ায় বাজেট ঘাটতি আছে। সে কারণে আর্থিক সহায়তা খুঁজছে দেশটি।
দেশটি চীনের দিকে ঝুঁকে পড়ুক, এটা ভারত চায় না। তাই গত মাসে মালদ্বীপ সফরে গিয়েছিলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। সে সময় মালদ্বীপের সঙ্গে সম্পর্ক ভারতের জন্য একটি অগ্রাধিকার বিষয় বলে তিনি উল্লেখ করেছিলেন।
দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের অধ্যাপক পি সাহাদেবন বলেন, ‘মুইজ্জুর সরকার তাঁর চীনপন্থী অবস্থান পরিবর্তন না করেও ভারতের প্রতি তার অবস্থান নরম করেছে।’ মালদ্বীপের অর্থনৈতিক সংকট এর একটি কারণ বলে মনে করেন তিনি৷
অভিজ্ঞ কূটনীতিক অনিল ওয়াধওয়া মনে করছেন, মুইজ্জুর আসন্ন সফর তাঁর ‘ইন্ডিয়া আউট’ অবস্থান থেকে সরে আসার একটি সংকেত৷ ‘মালদ্বীপ বুঝতে পেরেছে যে ভারতই একমাত্র দেশ, যেটি মালদ্বীপের সংকটে দ্রুত সাড়া দিতে পারে। আর্থিক সংকটের সময়ে তাঁকে উদ্ধার করতে পারে।’