বৃহস্পতিবার লেবাননে হামলা চালাতে উড়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান | ছবি : এএফপি |
পদ্মা ট্রিবিউন ডেস্ক: দক্ষিণ লেবাননে বৃহস্পতিবার ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এই পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যে পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা আরও বেড়েছে।
লেবাননের জাতীয় সংবাদ সংস্থার তথ্যমতে, বৃহস্পতিবার জেজিন শহরের মাহমুদিহ, কাসর আল-আরুশ ও বিরকেট জাব্বুর এলাকায় নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলের যুদ্ধবিমান।
লেবাননের নিরাপত্তা বাহিনীর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনটি সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানায়, গত বছরের অক্টোবরে গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বৃহস্পতিবারই লেবাননে সবচেয়ে বেশি বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানায়, দেশটির বিমানবাহিনী লেবাননে প্রায় ১০০টি রকেট লঞ্চার ও অন্যান্য অবকাঠামোতে হামলা চালিয়েছে। এসব হামলায় হতাহতের তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে হিজবুল্লাহকে ‘চড়া মূল্য দিতে হবে’ বলে হুঁশিয়ারি দেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সামরিক কার্যক্রমের ফলাফল অব্যাহত থাকবে।’
গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহের মধ্যে নিয়মিত পাল্টাপাল্টি বিমান ও রকেট হামলা অব্যাহত রয়েছে। হিজবুল্লাহর হামলার কারণে লেবাননের সীমান্তবর্তী নিজেদের উত্তরাঞ্চল থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষকে সরিয়ে নিয়েছে ইসরায়েল। এখন তাঁদের নিজ বাসস্থানে ফেরত পাঠাতে চায় দেশটি। এ জন্য উত্তর সীমান্ত নিরাপদ করা দরকার। অঞ্চলটিতে হামলা চালানো হবে না—হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে এমন নিশ্চয়তা চায় ইসরায়েল। কিন্তু গাজা যুদ্ধ বন্ধ না হলে সেখানে হামলা অব্যাহত রাখা হবে বলে জানিয়েছে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠীটি।
এই পরিস্থিতিতে গত মঙ্গল ও বুধবার লেবানন ও সিরিয়ায় হিজবুল্লাহর সদস্যদের ব্যবহার করা তারহীন যোগাযোগযন্ত্র পেজার ও ওয়াকিটকিতে একযোগে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এসব বিস্ফোরণে অন্তত ৩৭ জন নিহত ও প্রায় তিন হাজার মানুষ আহত হন।
ইসরায়েল পরিকল্পিতভাবে এসব বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে লেবানন সরকার ও হিজবুল্লাহ। তবে এসব বিস্ফোরণ নিয়ে এখনো পর্যন্ত মুখ খোলেনি ইসরায়েল।
দুই দিনের বিস্ফোরণের ঘটনার পর গতকাল বৃহস্পতিবার ভাষণ দিয়েছেন হিজবুল্লাহর নেতা হাসান নাসরুল্লাহ। সিরিজ বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে ইসরায়েল ‘সব ধরনের সীমা’ লঙ্ঘন করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গাজা যুদ্ধ বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
এদিকে সব পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়ে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র কারিন জ্যঁ-পিয়েরে বলেন, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হলে অঞ্চলটির (মধ্যপ্রাচ্য) উত্তেজনা কমে আসবে। কিন্তু ইরানের সহায়তাপুষ্ট যেকোনো ধরনের হুমকির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ‘অবিচল’ রয়েছে বলেও জানান তিনি।
মঙ্গল ও বুধবারের বিস্ফোরণ নিয়ে এরই মধ্যে প্রাথমিক তদন্ত শেষ করেছে লেবাননের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো। জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলে দেওয়া প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, লেবাননে পৌঁছার আগেই তারহীন যোগাযোগ যন্ত্রগুলোতে বিস্ফোরক ঢোকানো হয়েছিল। পেজার ও হাতে ব্যবহারের রেডিওসহ এসব যন্ত্র বৈদ্যুতিক বার্তার সাহায্যে বিস্ফোরণ করা হয়েছিল।