ট্রাফিক পুলিশ দায়িত্বে ফিরলেও সড়কে এখনও শৃঙ্খলা ফেরেনি | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

কবির হোসেন: ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়ে। আর এর প্রভাব পড়ে সরকারি-বেসরকারিসহ বিভিন্ন সংস্থায়। এসময় পুলিশ মাঠে না থাকায় সড়কে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে যায়। ট্রাফিক সদস্যদের অনুপস্থিতিতে যানজট নিয়ন্ত্রণে সারা দেশে সড়কে নামেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি আনসার সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর অল্প দিনের মধ্যেই কর্মবিরতি ও হামলার ভয় কাটিয়ে আবারও মাঠে ফেরে পুলিশ। কাজে ফেরেন ট্রাফিক সদস্যরাও। তবে সড়কে ট্রাফিক পুলিশ সক্রিয় থাকলেও ট্রাফিক ব্যবস্থা এখনও নিয়ন্ত্রণহীন।

নির্ধারিত ট্রাফিক সিগন্যাল না মানা, যেখানে-সেখানে গাড়ি পার্কিং, এলোমেলোভাবে গাড়ি চালানো, পারমিটবিহীন গাড়ি, গুরুত্বপূর্ণ প্রধান প্রধান সড়কে অটোরিকশার দখলসহ দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের ওপর চড়াও হওয়া– এমন নানারকম অনিয়ম সড়কে এখন হরহামেশাই চোখে পড়ছে।

বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গুরুত্বপূর্ণ সিগন্যালে ট্রাফিকের ক্ষতিগ্রস্ত বক্সগুলো এখনও মেরামত বা নতুনভাবে নির্মাণ করা হয়নি। ফলে এসব এলাকায় ট্রাফিকের কোনও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারও দেখা পাওয়া যায়নি। তবে ট্রাফিক সার্জেন্ট, পুলিশ সদস্যদের প্রতিটি মোড়েই দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।

ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে ফিরলেও আতঙ্কে আছেন পুলিশ সদস্যরা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

ট্রাফিক পুলিশ জানিয়েছে, তাদের এখনও নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে। তারা সড়কে সক্রিয় থাকলেও আগের মতো কাজে এখনও ফিরতে পারেননি। ফলে এ সুযোগটা নিচ্ছে অনেকে। বিশেষ করে মোড়ে মোড়ে অটোচালকদের আক্রমণের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক ট্রাফিক কর্মকর্তা ও সদস্য।

বুধ ও বৃহস্পতিবার  সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত রাজধানীর ধানমন্ডি সায়েন্স ল্যাব, শাহবাগ, বাংলামোটর, কাওরান বাজার, ফার্মগেট, আসাদগেট ও পান্থপথসহ কিছু পয়েন্ট সরেজমিন দেখা যায়, নির্ধারিত সিগন্যাল না মেনে অনেক যানবাহন নিয়ে চলাচল করছে। অনিয়ন্ত্রিতভাবে প্রবেশমুখ বন্ধ  করে মোড়ে মোড়ে রিকশা, অটোরিকশা ও ছোট ছোট যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। এসব কারণে অলিগলিতে গাড়ির জটসহ প্রধান বড় বড় সড়কে যানবাহন চলাচল বাধাগ্রস্ত হতে দেখা যায়। ট্রাফিক আইন না মানলে জরিমানা বা কেইস ফাইল করা, এমন কোনও কিছুতেই তৎপর হতে দেখা যায়নি দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তাদের।

ট্রাফিক আইন নামতে চাচ্ছেন না চালকরা, তাদের ওপর চাপ প্রয়োগও করতে পারছেন না ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

বিকালে বাংলামোটর ট্রাফিক সিগন্যালে দায়িত্ব পালন করছিলেন দুজন সার্জেন্ট আরিফ রহমান ও নাফিজ। ট্রাফিকের ওই দুজন সার্জেন্ট  বলেন, এখনও আমরা আগের মতো দায়িত্ব পালন করতে পারছি না। চালকরা অনিয়ম করলে কিছু বলতে গেলে আমাদের কথা শুনতে চাচ্ছে না। আমাদের অনেকের কাছে এখন আর্মস নেই। আমরাও আগের মতো আইন প্রয়োগ করতে পারছি না। কোনও অনিয়মের জন্য একজন গাড়িচালককে ধরলে আরও দশ জন চালক চড়াও হয়ে আসে আমাদের কাছে। বিশেষ করে অটোরিকশাচালকরা এ কাজটা বেশি করছে। অনিয়মের কারণে তাদের একজনকে কিছু বলতে গেলে আরও পাঁচ চালক তাদের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছে। আমাদের ওপর চড়াও হচ্ছে। সেখানে আমরা চাইলেও তখন কিছু বলতে পারছি না। করতে পারছি না।

তাদের মতো একই সমস্যার কথা জানালেন শাহবাগে দায়িত্বরত সার্জেন্ট তৌফিক রহমান। তিনি বলেন, এসব এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল, কোনও আন্দোলন, বিশেষ সভা-সমাবেশ ছাড়া খুব একটা যানজট হয় না। তবে বর্তমানে আমাদের বড় সমস্যা হলো অটোরিকশা। তারা কোনও কথা শুনতে চায় না। যেখানে সেখানে এসব রিকশা পার্কিং করায় যানজট লেগে যাচ্ছে।

প্রায় প্রতিদিনই বড় ধরনের যানজট লেগে যাচ্ছে রাজধানীতে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, মাঠে আমাদের সদস্যদের কোনও কমতি নেই। আগে প্রতিটি ট্রাফিক সিগন্যালে যে কয়জন দায়িত্ব পালন করতেন এখনও ঠিক সেই কয়জনই দায়িত্ব পালন করছেন। তদারকিরও কমতি নেই। তাহলে সমস্যাটা কোথায়? এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আরও বলেন, সমস্যা হলো আমাদের আগের মতো নিয়ন্ত্রণ নেই। এজন্য আগের মতো আইনও প্রয়োগ করতে পারছি না। যেমন, অনেক গাড়ি আগে সড়কে চলতো না, সেগুলো এখন চলছে। পারমিট আছে কিনা সেটাও চেক করা হচ্ছে না। তেমন কোনও বাধা ছাড়াই চলাচল করছে। এসব কারণে কিছু সমস্যা হচ্ছে। কোথাও কোথাও যানজট দেখা যাচ্ছে। আমরা আশা করি দ্রুত এসব স্বাভাবিক হয়ে যাবে।