পরীক্ষার দাবিতে রাজশাহী অঞ্চলের নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থীদের বিভাগীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান। এ সময় কেউ কেউ কাফনের কাপড়ও পরেন। দুপুরের ছবি | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি রাজশাহী: অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থায় দ্রুত পরীক্ষা গ্রহণের দাবিতে এবার বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সামনে অনশন করছেন রাজশাহী অঞ্চলের নার্সিং কলেজগুলোর ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন গায়ে কাফনের কাপড়ও জড়িয়েছেন। আজ রোববার দুপুর ১২টার দিকে মিছিল নিয়ে গিয়ে তাঁরা সেখানে অবস্থান নেন। পরীক্ষার দাবিতে এই শিক্ষার্থীরা গত বুধবার থেকে টানা কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন।

আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পরীক্ষার দাবিতে রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাসের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকে একটি মিছিল নিয়ে তাঁরা নগরের শ্রীরামপুরে অবস্থিত বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে আসেন। সেখানে অবস্থান নিয়ে  তাঁরা পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন।

দুপুর সোয়া ১২টার দিকে সেখানে এসে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে কথা বলেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন ও আইসিটি) মোহাম্মদ কবির উদ্দীন। তিনি শিক্ষার্থীদের জানান, নার্সিংয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে গত বৃহস্পতিবার একটি আবেদন তাঁরা পেয়েছেন। সেটি বিভাগীয় কমিশনারের স্বাক্ষরে তাঁরা ওই দিনই মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন। এ ছাড়া তাঁরা ব্যক্তিগতভাবেও কথা বলেছেন। তিনি আরও জানান, এই আন্দোলনের ব্যাপারটি মন্ত্রণালয়ও জানে। এখানে একজন উপাচার্য নিয়োগ দিতে হবে। একটি প্রতিষ্ঠানে এই নিয়োগ খুব বেশি সহজ নয়। এ বিষয়ে আজ সকালেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাঁরা আশ্বস্ত করেছেন। খুব দ্রুতই বিষয়টির সমাধান হয়ে যাবে।

এ বিষয়ে একটু ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ কবির উদ্দীন। শিক্ষার্থীরা তখন বলতে থাকেন, আর সময় দেওয়া যাবে না। তখন মোহাম্মদ কবির উদ্দীন জানান, দাবি পূরণ হয়ে যাবে। গতকাল শনিবার শিক্ষার্থীদের কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এটা নিউজ হয়েছে, তাঁরা পড়েছেন। তিনি বলেন, ‘অসুস্থ হয়ে পড়লে তো পরীক্ষা দিতে পারবে না তোমরা।’

তখন এক শিক্ষার্থী মাইকে ঘোষণা দেন, এই আশ্বাস তাঁরা পেয়ে আসছেন। আর আশ্বাসে কাজ হবে না। পরীক্ষার ঘোষণা নিয়েই তাঁরা এখান থেকে ফিরবেন। বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে অবস্থান চলাকালে দুই নারী শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েন। বেলা ২টার পর তাঁদের অ্যাম্বুলেন্সে করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরির বিভাগের ইনচার্জ ও হাসপাতালের মুখপাত্র শংকর বিশ্বাস বলেন, আজ দুপুর আড়াইটার দিকে দুই শিক্ষার্থী হাসপাতালে এসেছেন। গতকাল শনিবার প্রথমে ১১ জন এবং পরে আরও দুই শিক্ষার্থী ভর্তি হন। সব মিলিয়ে ১৫ জন ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের অবস্থা স্থিতিশীল আছে। তাঁরা গরমজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন। গতকালকের ১৩ জনের মধ্যে কয়েকজন সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।

রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা অঞ্চলের দুটিসহ মোট ২৩টি নার্সিং কলেজ রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন পরিচালিত হয়। এগুলোর মধ্যে চারটি সরকারি নার্সিং কলেজ আছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের একই শিক্ষাবর্ষের (২০১৯-২০) শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে। সেপ্টেম্বরের মধ্যে পরীক্ষা ও ফলাফল না পেলে তাঁরা ছয় মাসের ইন্টার্নশিপ করতে পারবেন না। এ ছাড়া আগামী বছরের মার্চে নার্সিং নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন না তাঁরা। তাই সেপ্টেম্বরের মধ্যেই পরীক্ষা ও ফলাফল প্রকাশ প্রয়োজন।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, তাঁদের ক্লাস ও মধ্যবর্তী পরীক্ষাগুলো অনেক আগেই শেষ হয়েছে। কয়েক মাস ধরে তাঁরা পরীক্ষার অপেক্ষায় আছেন। গত ৩ জুলাই তাঁরা অনশন করে পরীক্ষার রুটিন পেয়েছিলেন। সে অনুযায়ী, আজ থেকে পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ১ সেপ্টেম্বর রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ জেড এম মোস্তাক হোসেন পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করেন। পরে তিনি পদত্যাগও করেছেন। এ ছাড়া পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকও পদত্যাগ করেছেন।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ক মো. রায়হান আলী বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের অনশন চলবে। তাঁরা উপাচার্য নিয়োগ দেবে না কাকে নিয়োগ দেবে, সেটা তাঁরা জানেন না। তাঁরা চান দ্রুত পরীক্ষায় বসতে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চাইলে তাঁদের হস্তক্ষেপে অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনায় পরীক্ষা নিতে পারে।