হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন | কোলাজ
পদ্মা ট্রিবিউন ডেস্ক: ইসরায়েলের হামলায় গত শুক্রবার নিহত হন হিজবুল্লাহপ্রধান হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হয়েছেন। এই হামলাকে ‘ন্যায়বিচারমূলক পদক্ষেপ’ বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
এদিকে কয়েকটি দেশের সরকার, গোষ্ঠী ও রাজনীতিবিদেরা শোক প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, এ হামলার ফলে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে অস্থিতিশীলতা আরও ছড়িয়ে পড়বে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, নাসরুল্লাহর হাতে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও লেবাননের হাজারো সাধারণ মানুষ মারা গেছে। হিজবুল্লাহ, হামাস, ইয়েমেনের হুতি এবং ইরানের সমর্থনপুষ্ট অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হামলা থেকে ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। আর সেই অধিকারে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণ সমর্থন থাকার কথাটি আবার জোর দিয়ে উল্লেখ করেন বাইডেন।
হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করে দেওয়া এক বিবৃতিতে হিজবুল্লাহ জানায়, ‘হিজবুল্লাহর সেক্রেটারি জেনারেল হাসান নাসরুল্লাহ সংগঠনটির মহান ও অমর শহীদ কমরেডদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন, যাদের তিনি ৩০ বছর ধরে নেতৃত্ব দিয়েছেন।’ তারা গাজার সমর্থনে ও লেবাননের প্রতিরক্ষায় লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
ইসরায়েলের জেনারেল স্টাফের প্রধান হার্জি হালেভি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘নাসরুল্লাহ ইসরায়েলের অসংখ্য সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে। তাঁর লক্ষ্য ছিল এই যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ইসরায়েলকে ধ্বংস করা। এটি আর হচ্ছে না, আমরা তা নিশ্চিত করলাম। আমরা তাঁকে মুছে দিয়েছি এবং আমরা দিন দিন আরও শক্তিশালী হব।’
লেবাননের সাবেক প্রেসিডেন্ট মিশেল আউন এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ইসরায়েলের চলমান আগ্রাসনের মুখে দেশ যে ভয়ংকর পরিস্থিতিতে পড়েছে, তা মোকাবিলায় আমাদের সর্বোচ্চ পর্যায়ের জাতীয় সংহতি দরকার।’
দেশটির
সাবেক প্রধানমন্ত্রী সাদ আল হারিরিও নাসরুল্লাহর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ
করেছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘হাসান নাসরুল্লাহর গুপ্তহত্যা লেবানন ও এই
অঞ্চলকে সংঘাতের নতুন ধাপে ঠেলে দিয়েছে। আমরা সর্বাত্মকভাবে এই
কাপুরুষোচিত কাজের নিন্দা জানাচ্ছি।’
লেবাননের প্রথম সারির খ্রিষ্টান
রাজনীতিবিদ জেব্রান বাসিল নাসরুল্লাহর মৃত্যুকে বড় ক্ষতি বলে উল্লেখ
করেছেন। লেবাননের সব মানুষ বর্তমানে কঠিন সময় পার করছে উল্লেখ করে তিনি
বলেন, ‘ইসরায়েলি শত্রুর মোকাবিলায় লেবাননের নাগরিক হিসেবে আমাদের একসঙ্গে
থাকা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।’
নাসরুল্লাহ নিহত হওয়ার খবর আসার পর ইসরায়েলের নীতিকে ‘অদূরদর্শী’ মন্তব্য করে এক বিবৃতি দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। শুক্রবার লেবাননে ইসরায়েলের ওই হামলাকে ‘অপরাধমূলক’ মন্তব্য করে তিনি ‘সারা বিশ্বের মুসলমানদের লেবাননের জনগণ ও গর্বিত হিজবুল্লাহর’ পাশে থাকার আহ্বান জানান।
অন্যদিকে এক বিবৃতিতে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেন, নাসরুল্লাহর হত্যাকাণ্ড প্রতিরোধকেই কেবল শক্তিশালী করবে।
ইরানের সহায়তাপুষ্ট ইয়েমেনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হুতি জানায়, তারা নাসরুল্লাহর নিহত হওয়ার ঘটনায় শোক প্রকাশ করছে। এই শাহাদাত ত্যাগ ও সংকল্পের শক্তিকে আরও দৃঢ় করবে।
ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানি নাসরুল্লাহর হত্যাকে ‘এই অঞ্চলের মানুষের (জীবন), তাদের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার বিনিময়ে সংঘাতকে বাড়িয়ে তোলার বেপরোয়া আকাঙ্ক্ষা’ বলে উল্লেখ করেছেন।
অন্যদিকে ইরাকের শিয়া মুসলিম রাজনীতিবিদ মোকতাদা এল সাদর জানান, তিনি ‘প্রতিরোধ সংগ্রামে’ নিজের সঙ্গীকে হারিয়ে শোকগ্রস্ত।
ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র সংগঠন হামাস এক বিবৃতিতে নাসরুল্লাহর হত্যাকাণ্ডকে ‘কাপুরুষোচিত’ ও ‘সন্ত্রাসী কাণ্ড’ বলে উল্লেখ করেছে।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান নাসরুল্লাহর হত্যাকাণ্ডের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে একটি পোস্ট দিয়েছেন। কিন্তু এতে তিনি সরাসরি নাসরুল্লাহর নাম উল্লেখ না করলেও লেবাননে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। এসব হামলাকে তিনি ইসরায়েলের ‘গণহত্যা, দখলদারি ও আগ্রাসনের’ নীতি বলে উল্লেখ করেছেন।
এক বিবৃতিতে ফ্রান্সের ইউরোপ ও বিদেশবিষয়ক মন্ত্রণালয় জানায়, ওই অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা প্রতিরোধে তারা লেবাননের কর্তৃপক্ষগুলোর পাশাপাশি অঞ্চলটির ফরাসি অংশীদারদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। তা ছাড়া সাধারণ মানুষের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করারও আহ্বান জানায় দেশটি।