ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে শনিবার ‘গণ-অভ্যুত্থান ও নারী প্রশ্ন’ শীর্ষক সংলাপের আয়োজন করা হয় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
নিজস্ব প্রতিবেক: স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে রাজপথে পুরুষের সঙ্গে অংশ নিয়েছেন নারীরা। শ্রমিক থেকে খেলোয়াড়—নারীরা সবভাবে অবদান রেখে চলেছেন রাষ্ট্রে। কিন্তু স্বীকৃতি দেওয়ার সময় নারীর কথা মনে থাকে না কারও। সংস্কারের জন্য অনেক কমিশন হচ্ছে। কিন্তু নারী অধিকার কমিশন, শ্রমিক অধিকার কমিশন গঠনের উদ্যোগ নেই।
শনিবার বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘গণ-অভ্যুত্থান ও নারী প্রশ্ন’ শীর্ষক সংলাপে উঠে আসে এসব কথা। ‘ক্ষুব্ধ নারী সমাজ’-এর আয়োজনে এ সংলাপে অংশ নেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেওয়া বিভিন্ন পেশার নারীরা। সংলাপে উপস্থিত ছিলেন আন্দোলনে হতাহত অনেকের পরিবারের সদস্যরাও।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে পুরুষের পাশাপাশি নারীর অংশগ্রহণ নিয়ে এই সরকার প্রথম থেকেই সচেতন ছিল। বারবার নাম চাওয়া হয়েছে। কিন্তু সমন্বয়টা ঘটেনি। তিনি আরও বলেন, আন্দোলনের সময় অন্যতম সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুমকেও ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়েছিল। তবে পরে তিনি গুরুত্বপূর্ণ কোনো দায়িত্ব পাননি। এটি ব্যক্তিগতভাবে তাঁকে (ফরিদা আখতার) আহত করেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হতাহত ব্যক্তিদের পরিবারের জন্য নির্ধারিত ৫ লাখ ও ১ লাখ টাকা সহায়তা নিয়ে কথা বলেন সরকারের উপদেষ্টা শারমিন মুরশিদ। তিনি বলেন, এটি সূচনা মাত্র। আরও সহায়তা তহবিল হবে। একই সঙ্গে সরকারের পরিকল্পনায় আহতদের কর্মসংস্থানে ফিরিয়ে আনা হবে।
দেশের পার্বত্যাঞ্চলের পরিস্থিতির উল্লেখ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মির্জা তাসলিমা আখতার বলেন, আন্দোলনে আদিবাসীরাও একসঙ্গে পথে নেমেছিল। এ সময় শিল্পী ওয়ারদা আশরাফ বলেন, ‘আমাদের ছেলেমেয়েদের যেন এভাবে বারবার পথে না নামতে হয়। আর যাঁরা আহত হয়েছেন তাঁদের যেন কখনো মনে না হয়—অহেতুক নিজের একটি অঙ্গ হারিয়েছেন।’
আন্দোলনে নিহত মাহমুদুর রহমানের বোন সাবরিনা সেবন্তী বলেন, ‘মিছিলে যারা গুলি ছুড়েছিল, তাদের অনেককেই চিহ্নিত করা গেছে। কিন্তু তাদের কেন আটক করা যাচ্ছে না? যেমন আমার ভাইয়ের মাথা তাক করে যে পুলিশ কর্মকর্তা গুলি করেছিল, সে এখন পলাতক। পুলিশ খুঁজছেও না।’
সংলাপের শুরুতে আলোচনার মূল বক্তব্য পড়ে শোনান ক্ষুব্ধ নারী সমাজের সদস্য সীমা দাস। লিখিত এ বক্তব্যে নারীর অধিকার বাস্তবায়নে রাষ্ট্র ও সংবিধানের সংস্কার, হাইকোর্ট প্রণীত যৌন নিপীড়নবিরোধী নীতিমালাকে সব প্রতিষ্ঠানে কার্যকর করা, পারিবারিক উত্তরাধিকার আইনে নারী-পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ ১০টি প্রত্যাশার কথা জানানো হয়।
সংলাপের সঞ্চালনা করেন শিল্পী ঋতু সাত্তার। আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিনা লুৎফা, আলোকচিত্রী তসলিমা আখতার, নিউইয়র্কের কোলগেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাভিন মুরশিদ, ব্যারিস্টার সাদিয়া আরমানসহ আরও অনেকে।