রাজবাড়ী সদরে পদ্মা নদীতে পানিপ্রবাহের তারতম্যের কারণে বালুভর্তি জিও ব্যাগ সরে গিয়ে সিসি ব্লকে ধস দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি উড়াকান্দার পশ্চিম ভবদিয়া এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রতিনিধি গোয়ালন্দ: রাজবাড়ীর পদ্মা নদী তীরে জেলা শহর রক্ষা বাঁধের দেড় কিলোমিটার অংশের অন্তত পাঁচটি স্থানে সিসি ব্লক ধসে গেছে। এসব স্থানে নিচ থেকে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ধসে যাওয়ায় বাঁধের ওপরের সিসি ব্লক সরে গেছে। এতে ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে আশপাশের এলাকার স্কুল, মসজিদসহ শতাধিক বসতবাড়ি ও কৃষিজমি।
জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, রাজবাড়ীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের দৈর্ঘ্য প্রায় ৮৫ কিলোমিটার। পাউবোর তত্ত্বাবধানে ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত শহর রক্ষা বাঁধ প্রকল্পের (সদর উপজেলার বরাট ইউনিয়নের উড়াকান্দা থেকে লালগোলা পর্যন্ত তিন কিলোমিটার এবং গোদার বাজার থেকে চর সেলিমপুর পর্যন্ত দেড় কিলোমিটারসহ চার কিলোমিটার) কাজ হয়।
গত বছর নদীতীর রক্ষার কয়েকটি স্থানে সিসি ব্লকে ধস দেখা দেয়। চলতি বছর পানি বাড়া ও কমার সঙ্গে নদীর ঢেউ পাড়ে আছড়ে পড়ে। এতে পানির তলদেশে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ধসে পড়তে থাকে। কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে উড়াকান্দা, ভবদিয়ার প্রায় দেড় কিলোমিটার অংশের কয়েকটি স্থানে সিসি ব্লক ধসে পড়ে। পানি কমতে থাকায় ভাঙনের ক্ষত স্পষ্ট ফুটে উঠছে। ফলে ভাঙন–আতঙ্কে আছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
সরেজমিন গত মঙ্গলবার দেখা যায়, উড়াকান্দা থেকে লালগোলা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে সিসি ব্লক ধসে গেছে। এসব অংশে উড়াকান্দা বাজার, পূর্ব উড়াকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মোল্যাবাড়ি জামে মসজিদ, বায়তুল আহাদ জামে মসজিদ, পশ্চিম উড়াকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ মোল্যা পাড়া, ভবদিয়া, লক্ষ্মীকোল এলাকার শতাধিক পরিবার বসবাস করছে। এসব প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় বাসিন্দারা ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছেন।
ঝুঁকিপূর্ণ পূর্ব উড়াকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে স্তূপ করে রাখা হয়েছে বালুভর্তি জিও ব্যাগ। সম্প্রতি তোলা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
নদীপাড়ের বাসিন্দা বৃদ্ধা ময়না বেগম বলেন, ‘আমাগের বাড়ি বেড়িবাঁধের সঙ্গে। যেভাবে পানি উইঠা এসে বাড়ি মারে, ভয়ে রাতে ঘুমাতে পারি না। আমাগোর যাওয়ার মতো জায়গা নাই। অহন ভাঙন যদি না ঠেহায়, তাহলে আমাগো থাকা মুশকিল হবে।’
এমন অবস্থায় ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে পূর্ব উড়াকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠানটির সহকারী শিক্ষক জেসমিন পারভীন বলেন, ‘সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় আমাদের বিদ্যালয়টি অনেক আগেই সরানোর কথা। কিন্তু না সরানোয় আমরা ভাঙন আতঙ্কে থাকি।’
এ বিষয়ে পাউবো রাজবাড়ীর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী এম এ শামীম বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করে গত জুনে কাজ বাস্তবায়নে বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল। বরাদ্দ না থাকায় আপৎকালীন জরুরি মেরামত হিসেবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মামুন গ্রুপকে পূর্ব উড়াকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশপাশের ৩৮ মিটার এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলতে বলা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ২৪-২৫ লাখ টাকা ব্যয় হবে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে ক্ষতিগ্রস্ত অন্যান্য অংশে কাজ হবে।
পাউবোর নির্দেশে জরুরি মেরামতকাজের অংশ হিসেবে মামুন গ্রুপ বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের প্রতিনিধি শহিদুল ইসলাম।