বগুড়ায় শিক্ষক আবদুল বাকী হত্যা মামলায় আগের তথ্য গোপন করেননি, দাবি বাদীর

হত্যা | প্রতীকী ছবি

প্রতিনিধি বগুড়া: ১০ বছর আগে বগুড়ার শিক্ষক আবদুল বাকী হত্যাকাণ্ডের পর ওই সময়ে থানায় কোনো মামলা করেননি বলে তাঁর বাবা ইয়াকুব আলী দাবি করেছেন। ২০১৪ সালের ২১ জানুয়ারি আবদুল বাকী হত্যার শিকার হন। এ ঘটনার পাঁচ দিন পর বগুড়া সদর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়। ওই মামলা সম্পর্কে ইয়াকুব আলী কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন। তিনি সে সময় আদালতের কোনো নথিতেও সই করেননি। পুলিশের দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজিও দেননি। আবদুল বাকী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বুধবার বগুড়া সদর থানায় নতুন করে মামলা করেছেন, সেখানে আগের মামলার তথ্য গোপন করেননি বলে জানান ইয়াকুব আলী।

বৃহস্পতিবার প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে এসব দাবি করেন আবদুল বাকীর বাবা ইয়াকুব আলী। তাঁর বাড়ি বগুড়ার শেরপুর উপজেলার খামারকান্দি গ্রামে। তাঁর ছেলে নিহত আবদুল বাকী ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন বলে জানা গেছে। তিনি বগুড়ার বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক ছিলেন।

আজ গণমাধ্যমে পাঠানো প্রতিবাদপত্রেও একই দাবি করেন ইয়াকুব আলী। এর আগে ‘৫ বছর আগে আদালতে নিষ্পন্ন মামলার তথ্য গোপন করে নতুন হত্যা মামলা দায়ের’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন প্রকাশের আগে ইয়াকুব আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মামলা সম্পর্কে কোনো কথা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।

প্রতিবাদপত্র পাঠানোর বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ইয়াকুব আলী বলেন, ‘২০১৪ সালের ২১ জানুয়ারি আমার ছেলে আবদুল বাকীকে দলীয় কার্যালয়ের সামনে প্রকাশ্যে ছুরিকাহত করে হত্যা করা হয়। এ সময় সেখানে উপস্থিত লোকজন হত্যার ঘটনাটি দেখলেও আসামিরা সরকারদলীয় সন্ত্রাসী হওয়ায় কেউ প্রতিবাদ করার সাহস করেননি। বাকীর মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর আসামিরা ওই স্থান ঘিরে রাখেন। ঘণ্টাখানেক পর বাকীকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। এ সময় চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।’

ইয়াকুব আলী আরও বলেন, ‘লাশ দাফনের পর বগুড়া সদর থানায় মামলা দিতে গেলে তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা ছাড়াও পুলিশ মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে কিছু কাগজে স্বাক্ষর গ্রহণ করে থানা থেকে বের করে দেয়। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা মামলা না করার জন্য বাড়িতে গিয়েও হুমকি দেন। সন্ত্রাসীদের ভয়ে ছেলে হত্যার ঘটনায় কোনো মামলা করতে পারিনি এত দিন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে থানায় মামলা দাখিল করেছি।’

ইয়াকুব আলী বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ২০১৪ সালের ২৬ জানুয়ারি বগুড়া সদর থানায় একটি হত্যা মামলা রেকর্ড হলেও ওই মামলা সম্পর্কে এত দিন কিছুই জানতেন না তিনি। ভয় দেখিয়ে পুলিশ সাদা কাগজে ওই সময় যে স্বাক্ষর নিয়েছিল, সেটি জালিয়াতি করে মামলার কাজে লাগাতে পারে। তিনি আদালতের কোনো নথিতে সই করেননি, পুলিশের তদন্তের বিরুদ্ধে কোনো নারাজি দরখাস্তও দিননি। নতুন করে গতকাল বুধবার থানায় যে মামলা দায়ের করেছেন, ওই মামলার এজাহারেও ইতিপূর্বে ভয়ভীতি দেখিয়ে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন।

আবদুল বাকী হত্যার ঘটনায় তাঁর বাবা ইয়াকুব আলী বাদী হয়ে গতকাল বগুড়া সদর থানায় যে হত্যা মামলা করেছেন, তাতে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের ১৮ জন নেতাকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও ৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।

এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ২১ জানুয়ারি আনুমানিক সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বগুড়া শহরের সাতমাথা ফুলপট্টিতে আসামিরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে আবদুল বাকীকে ঘিরে ধরে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত এবং লাঠি ও রড দিয়ে পিটিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করেন।

তবে বগুড়া আদালতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ২০১৪ সালের ২৬ জানুয়ারি সদর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়। আবদুল বাকীর বাবা ইয়াকুব আলীকে বাদী দেখিয়ে ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে এবং সাত থেকে আটজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে এই মামলা করা হয়। তদন্ত শেষে প্রথমে পুলিশ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। পরে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায় তাঁদের অব্যাহতির আবেদন জানিয়ে ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (বগুড়া সদর) আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। ২০১৯ সালের ২২ আগস্ট আদালত চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করেন। এদিন আদালতের বিচারক মোহাম্মদ বিল্লাল হোসাইন মামলার নথি পর্যালোচনা করে আসামিদের মামলার দায় থেকে অব্যাহতি প্রদান করে মামলার নথিজাত আলামত বিধি মোতাবেক ধ্বংস করার নির্দেশ প্রদান করেন।

নতুন মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে সরকারি আজিজুল হক কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বেনজীর আহম্মেদকে। তিনি আগের মামলায়ও আসামি ছিলেন। তিনিসহ কয়েকজন অব্যাহতি পাওয়া আসামিকে একই অভিযোগে নতুন মামলার আসামি করা হয়েছে।