সজীব ওয়াজেদ | ফাইল ছবি: রয়টার্স |
রয়টার্স, নয়াদিল্লি: দেড় বছরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন নিয়ে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের বক্তব্যে সন্তোষ জানিয়েছেন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ (জয়)। তিনি বলেছেন, এ সময়সীমা তাঁর প্রত্যাশার চেয়ে বেশি। একই সঙ্গে সজীব ওয়াজেদ বলেছেন, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকে ছাড়া সত্যিকার সংস্কার ও নির্বাচন সম্ভব ছিল না।
মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ কথাগুলো বলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ। এর আগে সোমবার রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছিলেন, এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে গণতন্ত্র ফেরা উচিত।
সজীব ওয়াজেদ রয়টার্সকে বলেন, ‘অন্তত এখন যে আমরা (নির্বাচনের) একটা সময়সূচি পেলাম, এতে আমি খুশি। তবে এ ধরনের নাটকীয় পরিস্থিতি আমরা আগেও দেখেছি, যেখানে একটি অসাংবিধানিক ও অনির্বাচিত সরকার সংস্কারের নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু তখন পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছিল।’
১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশে কতগুলো সেনা অভ্যুত্থান হয়েছে, সেগুলোর উল্লেখ করেন সজীব ওয়াজেদ। সাম্প্রতিকতম হয়েছিল ২০০৭ সালে, যখন সেনাসমর্থিত একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় ছিল। সেই সরকারের পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। এরপর গত ৫ আগস্ট পদত্যাগের আগে শেখ হাসিনা ১৫ বছরের বেশি সময় ক্ষমতায় ছিলেন।
শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর পুলিশ বাহিনীতে বিশৃঙ্খলা দেখা দেওয়ায় পরবর্তী ঘটনাবলিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সেনাবাহিনী। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জানিয়েছেন, তিনি প্রতি সপ্তাহে একবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করছেন। সরকারের স্থিতিশীলতা ফেরানোর চেষ্টায় সমর্থন দিচ্ছে সেনাবাহিনী।
বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ ও তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি উভয়ই অন্তর্বর্তী সরকার আগস্টে ক্ষমতা গ্রহণের তিন মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়েছে।
শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অনির্বাচিত অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের আগে বিচার বিভাগ, পুলিশ ও আর্থিক খাতের সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সীমা সম্পর্কে কিছু তারা জানায়নি। সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার ছয়টি কমিশন গঠন করেছে। (গত) বুধবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় জানিয়েছে, ছয় কমিশনের সুপারিশ পাওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসবে সরকার।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সংস্কার নিয়ে ঐকমত্য তৈরি হলে এবং ভোটার তালিকা প্রস্তুত হয়ে গেলে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হবে।’
যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন আয়োজনের দাবি বিএনপির। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে বসবাসরত সজীব ওয়াজেদ বলেছেন, দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁর সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকার যোগাযোগ করেনি এবং তিনিও সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। ‘দেশের সবচেয়ে পুরোনো ও সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দলকে বাদ দিয়ে আইনসংগত সংস্কার ও নির্বাচন অসম্ভব’, বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা গত মাসে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির কাছে আছেন। আওয়ামী লীগের অনেক জ্যেষ্ঠ নেতাকে সংঘাতে ভূমিকা রাখার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যে সংঘাতে এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আত্মগোপনে আছেন আওয়ামী লীগের অনেক নেতা।
সজীব ওয়াজেদ বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। তাঁর এই বক্তব্যের বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিনিধিদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত ছয়টি কমিশনের একটি নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। এই কমিশনের প্রধান সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। পর্যালোচনার ভিত্তিতে আগামী তিন মাসের মধ্যে সংস্কারের সুপারিশ করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনায় বসবে কি না বা নির্বাচন কখন হবে, সে সিদ্ধান্ত সরকারের ওপর নির্ভর করছে।’
সজীব ওয়াজেদ গত মাসে রয়টার্সকে বলেছিলেন, শেখ হাসিনা দেশে ফিরে বিচারের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত এবং আওয়ামী লীগ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চায়।
শেখ হাসিনা কবে দেশে ফিরবেন, এই প্রশ্ন করা হলে সজীব ওয়াজেদ গতকাল বলেছেন, ‘এটা তাঁর (শেখ হাসিনা) ওপর নির্ভর করছে। এই মুহূর্তে আমি আমার দলের নেতা-কর্মীদের নিরাপদে রাখতে চাই। তাই ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন সরকার তাঁদের (আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী) ওপর যে নৃশংসতা চালাচ্ছে, সে বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সচেতন করতে চাই।’