শেখ হাসিনা | গ্রাফিকস পদ্মা ট্রিবিউন
নিজস্ব প্রতিবেদক: ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের সময় গুলি করে হত্যা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়েছে। গত শনিবার, গতকাল সোমবার ও আজ মঙ্গলবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত ও বিভিন্ন থানায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও সাতটি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। এ নিয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০৪। এর মধ্যে হত্যা মামলার সংখ্যা দাঁড়াল ১৭৯।
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়। ওই দিনই শেখ হাসিনা ভারত চলে যান।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ১৫ আগস্ট ঢাকার আদালতে প্রথম মামলা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে করা মামলাগুলোয় অভিযোগ আনা হয়েছে, গত ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গুলি ছোড়েন। এতে অনেক আন্দোলনকারী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। আহত হন অনেকে।
অধিকাংশ মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়া তাঁর সরকারের সাবেক মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের নেতা, পুলিশের সাবেক আইজিপি, ডিএমপির সাবেক কমিশনারসহ পুলিশের বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন হত্যা মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানসহ কয়েকজন মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার শীর্ষস্থানীয় ৩৫ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গত শনিবার, গতকাল ও আজ যে সাতটি মামলা হয়েছে, সেগুলো নিচে তুলে ধরা হলো।
সাইফুলকে হত্যায় মায়ের মামলা
যাত্রাবাড়ীতে সাইফুল ইসলাম নামের এক তরুণকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গতকাল সাইফুলের মা রেবেকা সুলতানা বাদী হয়ে এ মামলা করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ৫ আগস্ট বিকেলে যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতার মিছিলে গুলি চালান ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও পুলিশ সদস্যরা। এ সময় মাথায় গুলিবিদ্ধ হন সাইফুল ইসলাম। পরে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, ১৪ দলের মুখপাত্র আমির হোসেন আমু, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানকে আসামি করা হয়েছে।
গুলিতে নিহত শাওনের বাবার মামলা
যাত্রাবাড়ীতে শাওন তালুকদারকে (২১) হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ৪৬৭ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে। শাওনের বাবা নূর নবী বাদী হয়ে গত শনিবার এ মামলা করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ৫ আগস্ট বেলা আড়াইটার দিকে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা পুলিশ বক্সের সামনে ছাত্র–জনতার আন্দোলন চলছিল। তখন স্থানীয় ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও পুলিশ সেখানে গুলি ছোড়ে। এ সময় শাওন তালুকদার গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়া সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুন, ডিএমপির সাবেক গোয়েন্দা প্রধান হারুন অর রশীদকে আসামি করা হয়েছে।
পল্লবীতে কলেজছাত্রকে গুলি করে হত্যা
রাজধানীর পল্লবীর সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের ছাত্র মমিনুল ইসলামকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ৬৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গতকাল রাজধানীর মিরপুর থানায় এ মামলা রেকর্ড হয়েছে। মামলার এজাহারে অভিযোগ আনা হয়, ১৯ জুলাই বিকেলে মিরপুর ১০ নম্বরে গোলচত্বরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার মিছিল চলছিল। এ মিছিলে অংশ নেন কলেজছাত্র মমিনুল। এ মিছিলে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতারা নির্বিচার গুলি চালান। এতে মমিনুল গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাঁকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়া সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত, সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সেলিম, মাহবুব উল আলম হানিফ ও বাহাউদ্দিন নাছিমকে আসামি করা হয়েছে।
রামপুরায় ব্যবসায়ীকে হত্যাচেষ্টা
রামপুরায় গুলি করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৩৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী আবদুল্লাহ আল মামুন। গতকাল রামপুরা থানায় এ মামলা করেন তিনি। মামলার এজাহারে বলা হয়, রামপুরার বনশ্রী ফরাজী হাসপাতালের সামনে ১৯ জুলাই বিকেলে ছাত্র–জনতার মিছিলে গুলি ছোড়েন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা–কর্মীরা। তখন ব্যবসায়ী আবদুল্লাহ আল মামুন গুলিবিদ্ধ হন।
যাত্রাবাড়ীতে গুলি করে হত্যার চেষ্টা
যাত্রাবাড়ীতে শুক্কুর আলী নামের এক যুবককে গুলি করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৬১ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গতকাল ভুক্তভোগী শুক্কুর আলী বাদী হয়ে যাত্রাবাড়ী থানায় এ মামলা করেন। মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়া ও সাবেক সংসদ সদস্য মশিউর রহমান মোল্লা, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুন, ওয়ারী বিভাগের সাবেক ডিসি ইকবাল হোসেন, সাবেক ডিসি আশরাফ ইমাম ও যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্তকর্তা আবুল হাসানকে আসামি করা হয়েছে।
চালকের পায়ে গুলি লাগে
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মো. ছলেমান নামের এক চালককে গুলি করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ঢাকার সিএমএম আদালতে আজ এ মামলা করেন ভুক্তভোগী নিজে। মামলার আরজিতে বলা হয়েছে, মোহাম্মদপুরের আল্লাহ করিম মসজিদের সামনে ৩ আগস্ট বেলা ১১টার দিকে ছাত্র–জনতার মিছিল চলছিল। তখন পুলিশ ও স্থানীয় ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ অন্য সন্ত্রাসীরা ছাত্র–জনতার মিছিলে গুলি ছোড়ে। তখন চালক ছলেমানের পায়ে গুলি লাগে। পরে তাঁকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়া সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ও সাবেক সংসদ সদস্য সাদেক খানকে আসামি করা হয়েছে।
মোহাম্মদপুরে তরুণের মাথায় গুলি লাগে
মোহাম্মদপুরে মোহাম্মদ আসিফ নামের এক তরুণকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ১২৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গতকাল ঢাকার সিএমএম আদালতে এ মামলা করেন ভুক্তভোগী নিজে। মামলার আরজিতে অভিযোগ আনা হয়েছে, ১৯ জুলাই বেলা আড়াইটার দিকে মোহাম্মদপুরের ময়ূর ভিলার সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতার মিছিল চলছিল। এ মিছিলে অংশ নেন মোহাম্মদ আসিফ। এ সময় আওয়ামী মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীরা গুলি করে। তখন আসিফের কপালে একটি, কবজিতে চারটি ও মাথার বাঁ পাশে একটি গুলি লাগে। পরে তাঁকে বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।