বাসস, নিউইয়র্ক: বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের সতর্ক হতে হবে, এই সংকটের সমাধান না হলে শুধু বাংলাদেশ নয়, সমগ্র অঞ্চল সমস্যায় পড়বে।’
নিউইয়র্কে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে উচ্চপর্যায়ের একটি আলোচনা সভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই এ বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে।’
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রসিকিউটর করিম এ এ খান, আইওএমের মহাপরিচালক অ্যামি পোপ প্রমুখ সভায় বক্তব্য দেন।
প্রধান উপদেষ্টা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে নতুন করে ভাবার প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, ‘প্রথমত আমরা চাই জাতিসংঘ মহাসচিব যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে সব পক্ষের উপস্থিতিতে একটি সম্মেলনের আয়োজন করুন।’
সম্মেলনে সংকটের সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যালোচনাপূর্বক নতুন ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সমাধানের উপায় কী হতে পারে, তেমন প্রস্তাব আসতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ড. ইউনূস বলেন, দ্বিতীয়ত জাতিসংঘ ও বাংলাদেশ যৌথভাবে পরিচালিত ‘জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান’ কার্যক্রমে নতুন করে প্রাণশক্তি যোগ করা প্রয়োজন। যেহেতু এখন রোহিঙ্গাদের পেছনে ব্যয় করার মতো তহবিলের অভাব রয়েছে, তাই রাজনৈতিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে অর্থ সংগ্রহের প্রক্রিয়া আরও জোরদার করতে হবে।
তৃতীয় প্রস্তাবে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সংঘটিত গণহত্যা অপরাধের বিচার নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই আন্তরিক সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দীর্ঘমেয়াদি শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে মিয়ানমারের সামরিক জান্তার দ্বারা নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে পেরে সম্মানিত বোধ করছি। প্রতিবছরের মতো এবারও অনুষ্ঠান হচ্ছে। কিন্তু এবার ড. ইউনূসের উপস্থিতি ও তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি এবারের আলোচনাকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।’
ফিলিপ্পো গ্রান্ডি আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য বৈষম্য, রাষ্ট্রহীনতা এবং জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত বন্ধ করতে আমাদের অবশ্যই প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।’
বৈঠকের পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বাসসকে বলেন, রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে এবারের বৈঠকটি অত্যন্ত সফল হয়েছে। সবাই বাংলাদেশের প্রচেষ্টার প্রশংসা ও তাদের অব্যাহত সমর্থনের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
আইওএমের মহাপরিচালক অ্যামি পোপ বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে ভুলে যাওয়া উচিত নয়। তিনি বলেন, ‘এই সংকট সমাধানে আমাদের আরও কাজ করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা ও দীর্ঘমেয়াদি সমাধান প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে হবে।’ তারা এই লক্ষ্য অর্জনে সম্ভাব্য সবকিছু করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলেও জানান তিনি।
রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে উচ্চপর্যায়ের এই আলোচনায় অংশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং বাংলাদেশ ও তাদের আশ্রয়দানকারী জনগোষ্ঠীর জন্য প্রায় ১৯ কোটি ৯০ লাখ মার্কিন ডলারের নতুন সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেন।
এই মার্কিন সহায়তা জীবন রক্ষা, বিশেষ করে সহিংসতা ও নিপীড়নের কারণে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা, আশ্রয় এবং খাদ্য সরবরাহে সহায়তা করবে।
এদিকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলাকালে বাংলাদেশে অবস্থানরত কিছু রোহিঙ্গা শরণার্থী বিশ্বনেতাদের উদ্দেশে ‘আমাদের হতাশ করবেন না’ মর্মে একটি বার্তা পাঠিয়েছেন। রোহিঙ্গা শরণার্থীরা ওই ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে ভুলে যাওয়া যাবে না।’