রাজশাহীতে কৃষক দলের নেতার বিরুদ্ধে মামলা–বাণিজ্যের অভিযোগ বিএনপি নেতাদের

কৃষক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল হামিদের বহিষ্কারের দাবিতে মানববন্ধনও করেছেন বিএনপির কর্মীরা। গত শনিবার গোগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের পাশে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি রাজশাহী: রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগে জেলা কৃষক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল হামিদের করা মামলায় বিএনপির ৫ নেতা-কর্মীকেও আসামি করা হয়েছে। ভুক্তভোগী নেতারা এখন বাদীর বিরুদ্ধে মামলা–বাণিজ্যের অভিযোগ তুলেছেন। শুধু তা–ই নয়, এই নেতাকে তাঁরা দল থেকে বহিষ্কারের দাবিতে মানববন্ধনও করেছেন।

তবে পুলিশ বলছে, মামলা রেকর্ড হয়ে যাওয়ার পর এজাহার সংশোধনের আর কোনো সুযোগ নেই। মামলাটির অধিকাংশ ধারা জামিনের অযোগ্য। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের অপেক্ষা করতে হবে। বাদী ভুল করে থাকলে বা উদ্দেশ্যমূলকভাবে এজাহারে কারও নাম দিলে তার দায় পুলিশের নয়।

গত শনিবার গোগ্রাম এলাকায় স্থানীয় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা মামলার বাদী বাবলুকে দল থেকে বহিষ্কার এবং আসামি হওয়া পাঁচ বিএনপি নেতা-কর্মীর নাম বাদ দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন। গোগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের সামনে এ মানববন্ধনে বিএনপির শতাধিক নেতা-কর্মী অংশগ্রহণ করেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কৃষক দলের নেতার মামলায় ২৪ নম্বর আসামি করা হয়েছে উপজেলার গোগ্রাম ইউনিয়ন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলামকে। ২৫ নম্বর আসামি হয়েছেন ইউনিয়ন যুবদল নেতা বকুল হোসেন। ১৯ নম্বর আসামি করা হয়েছে ইউনিয়ন যুবদল নেতা আবদুল বারীকে। মামলায় ২০ নম্বর আসামি হয়েছেন যুবদল নেতা শাহীন এবং ৩৯ নম্বর আসামি করা হয়েছে ইউনিয়ন যুবদল নেতা সুমনকে। ঘটনাস্থল দেখানো হয়েছে গোদাগাড়ী উপজেলা পরিষদের প্রধান গেটের সামনে।

এ ব্যাপারে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘যে পাঁচ নেতা-কর্মীর নামে মামলা করেছে, তাঁরা অবশ্যই বিএনপির সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাঁরা দলীয় সব অনুষ্ঠানেই থাকেন। মামলার ব্যাপারে আবদুল হামিদ কারও সঙ্গে আলোচনা করেনি। মামলা করার পর জানতে চেয়েছিলাম, কেন এই কাজ করল? তখন আমাকে শুধু বলেছে, দেখছি, দেখছি।’

মামলার আসামি গোগ্রাম ইউনিয়ন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম দাবি করেছেন, ৩ আগস্ট সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে বাদী কৃষক দল নেতা আবদুল হামিদ বাবলুর সঙ্গে তাঁদের কথা-কাটাকাটি হয়েছিল। বাদী মামলা–বাণিজ্য করতেই কাজটি করেছেন। দল থেকে তাঁর বহিষ্কার দাবি করেন তিনি।

নিজের দলের নেতা-কর্মীদের মামলায় জড়ানোর অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার বাদী আবদুল হামিদ বলেন, যাঁরা নিজেদের এখন বিএনপির নেতা-কর্মী দাবি করছেন, তাঁদের কাগজ দেখাতে বলেন। তাঁরা আওয়ামী লীগের সুবিধা নিয়েছেন, এখন বিএনপির সুবিধা নিতে চান। তাঁরা দিনে বিএনপি করেন আর রাতে আওয়ামী লীগ করেন।

আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে মামলা–বাণিজ্যের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কেউ প্রমাণ করতে পারলে ৩১ বছরের রাজনীতি ছেড়ে দেব।’

গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আতাউর রহমান বলেন, মামলা যেহেতু রেকর্ড হয়ে গেছে, এজাহার থেকে কারও নাম এ মুহূর্তে বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই। তদন্তে দোষী প্রমাণিত না হলে তাঁদের নাম বাদ যাবে।

মামলার প্রধান আসামি জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী। আসামি হিসেবে মোট ৪৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ৫০০ থেকে ৬০০ জনকে আসামি করা হয়।