রাজশাহীতে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। রোববার দুপুরে ভুবন মোহন পার্কে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি রাজশাহী: বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে চাইলে আখেরে ভালো হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। রোববার দুপুরে রাজশাহী নগরের ভুবন মোহন পার্কে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে রাজশাহীতে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ নামে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল। ভুবন মোহন পার্কে বক্তব্য শেষে তাদের আর্থিক অনুদান দেয় দলটি।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘যাঁরা শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছেন, তাঁদের বলে রাখি। আপনারা আশ্রয় দিচ্ছেন, ঠিক আছে। কিন্তু তাঁর কথা শুনে যদি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কিছু করতে যান, বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে চান, তাহলে আপনাদের জন্য আখেরে ভালো হবে না। বাংলাদেশ সিকিমও নয়, ভুটানও নয়। ১৮ কোটি মানুষ। এটা পাশের দেশের নীতিনির্ধারকদের মনে রাখতে হবে।’

বিএনপির এই কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ‘ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ভারতকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশ স্থিতিশীল হবে না। আপনারা কিসের আলামত দিচ্ছেন? এগুলো কী কথা বলছেন? বাংলাদেশের মানুষ অদম্য সাহসী ও বীরের জাতি। এরা কীভাবে নিজের দেশকে পরিচালনা করবে, কাকে নির্বাচিত করবে, সেই অধিকারটুকু তারা জানে, সেই অধিকারে তারা বিশ্বাসী। অন্য কোনো দেশ থেকে প্রেসক্রিপশন দিয়ে রাখা যাবে না। অত্যন্ত মনোযন্ত্রণা; তাদের অত্যন্ত মন খারাপ। তারা শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে পারেনি।’

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘এই আবু সাঈদ, মুগ্ধ, সাকিব—এদের আত্মত্যাগ, রক্তের আলপনার মধ্য দিয়েই তো আজকে এত বড় দৈত্যের মতো এক দানব শেখ হাসিনা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা পালায় না। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যা আওয়ামী লীগের নেতা, মন্ত্রী, কর্মী সবাইকে বিপদে ফেলে প্লেনে চলে গেলেন ভারতে। হায়রে তার দলের প্রতি, আওয়ামী লীগের প্রতি মায়া। কিন্তু আমার নেত্রী খালেদা জিয়াকে কেউ এই বাংলা থেকে সরাতে পারেনি। আর উনি সুড় সুড় করে পালিয়ে গেলেন ভারতে।’

রিজভী আরও বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সব রাজনৈতিক দল সমর্থন দিয়েছে। সবাই সহযোগিতা করতে চায়। কিন্তু প্রশাসনের মধ্যে যদি এমন লোক থাকে, যারা শেখ হাসিনার ১৫-১৬ বছর ক্ষমতায় থাকাকালীন ফ্যাসিবাদ-লুণ্ঠনে সহায়তা করেছে, তারা একটি বিপ্লবী সরকারকে কখনোই সমর্থন দিতে পারে না। তারা যদি ক্যাবিনেট সেক্রেটারি হয়, সচিব হয়, গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে বসে, তাহলে নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে, এই সংস্কার বাস্তবায়ন হবে না। এরা সংস্কার ব্যর্থ করে দেবে।

শেখ হাসিনার উন্নয়ন নিয়ে প্রশ্ন তুলে রুহুল কবির রিজভী বলেন, শেখ হাসিনার আমলে ১৮ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে। আর ১৭ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এটা কিসের উন্নয়ন! উনি কী উন্নয়ন করেছেন? উনি তাঁর ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী, লোকজনদের কালোটাকা বানানোর সুযোগ দিয়েছেন। সেই কালোটাকা তাঁরা বিদেশে রেখে দিয়েছেন। কিন্তু হাসিনা ভুলে গেছেন, বিপদে পড়লে ঘনিষ্ঠজনেরাও এগোয় না।

রাজশাহী নগর বিএনপির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা এরশাদ আলীর সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব মামুন-অর-রশীদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’–এর উপদেষ্টা এম রশিদুজ্জামান (মিল্লাত), আশরাফ উদ্দিন (বকুল), আলমগীর কবীর, আহ্বায়ক আতিকুর রহমান (রুমন), বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য ফারজানা শারমিন (পুতুল), মৌলভীবাজার বিএনপির উপদেষ্টা ও কাতার বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরীফুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।