সংঘর্ষে আহত একজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রতিনিধি গোয়ালন্দ: রাজবাড়ী সদর উপজেলায় সন্ত্রাস-নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভাকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুটি পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় ভাঙচুর করা হয়েছে মোটরসাইকেল, চেয়ার, দোকান ও মাইক। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে সদর উপজেলার চন্দনী বাসস্ট্যান্ড বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
আহত ব্যক্তিদের মধ্যে বিএনপির কর্মী কামরুল শেখ (৩৮), শামীম (২৪) ও আরাফাত ইসলাম রাফি (১৮)। তাঁরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। শসী (১৯) ও হাচান (৩৫) নামের দুজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অপর পক্ষের আহত পাঁচজন বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা নিয়েছেন।
বিএনপি ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পদত্যাগের পর চন্দনী ইউনিয়নে প্রায় অর্ধশত বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ এবং চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটে। জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সহসভাপতি আসলাম মিয়ার অনুসারী চন্দনী ইউনিয়ন বিএনপির নেতা-কর্মীরা গতকাল বিকেলে সন্ত্রাস-নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে চন্দনী বাসস্ট্যান্ড বাজারে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেন। সেখানে মিছিল শেষে মুক্তমঞ্চে বক্তব্য চলাকালে বিএনপির অপর পক্ষের লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালান। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হন। ভাঙচুর করা হয় মোটরসাইকেল, চেয়ার, হোটেল ও মাইক। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সংঘর্ষের সময় ভাঙচুর চালানো হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজবাড়ী সদর উপজেলার চন্দনী বাসস্ট্যান্ড বাজার এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
চন্দনী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি (আসলামপন্থী) রেজাউল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন জেলা কৃষক দলের সদস্যসচিব ও চন্দনী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল আলম চৌধুরী, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম, ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহিন শেখ প্রমুখ।
রেজাউল ইসলাম বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজা সামনে রেখে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে ইউনিয়ন বিএনপি সভা ডাকে। গতকাল দুপুরে ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি কাজী ইশারতের আহ্বানে একই স্থানে সভা ডেকে মাইকিং করা হয়। বিকেল পাঁচটার দিকে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম অনুসারী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি আবুল হোসেনের নেতৃত্বে জেলা যুবদল নেতা মালেক শিকদারের নেতৃত্বে শতাধিক লোক লাঠিসোঁটা, দেশি অস্ত্র নিয়ে অতর্কিতভাবে তাঁদের ওপর হামলা করেন। এ সময় ভাঙচুর চালানো হয়েছে।
এ বিষয়ে চন্দনী ইউনিয়ন বিএনপির বর্তমান সভাপতি দাবি করে আবুল হোসেন বলেন, ‘আমরা আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়মের নেতৃত্বে রাজনীতি করি। ওরা অ্যাডভোকেট আসলামের বিএনপি করে। গুটিকয় লোক নিজেদের মতো কমিটি করেছে। যুবদলের আহ্বানে সভায় হাজারো মানুষ যাচ্ছিলাম। ওরা সভা না ডেকেই ঘরোয়া সভা করতে থাকে। দুই পক্ষ কাছাকাছি হওয়ায় উত্তেজনা দেখা দেয়। এ সময় তাঁদের লোকজন আমাদের লোকজনের ওপর হামলা করে। এতে আমাদের পাঁচ-ছয়জন আহত হন। তাঁদের বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা দেওয়া হয়।’
জেলা কৃষক দলের সদস্যসচিব সিরাজুল আলম চৌধুরী বলেন, বিএনপি প্রতিবাদ সভায় অতিথি হিসেবে বক্তব্যকালে মঞ্চের দুই পাশ থেকে ৫০ থেকে ৬০ জন সশস্ত্র হামলা করেন। এতে তাঁদের অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন। হামলার সময় জেলা যুবদলের সদস্য মালেক শিকদারের নামে ‘মালেক ভাই, ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’ এমন স্লোগান দেওয়া হয়। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্রসহ বিএনপির কর্মীরা তাঁদের প্রতিহত করেন।
রাজবাড়ী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইফতেখারুল আলম প্রধান বলেন, বিএনপির দুটি পক্ষ একই স্থানে সভা করা নিয়ে সংঘর্ষের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এ ঘটনায় এখনো কেউ অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।