পদ্মা ট্রিবিউন ডেস্ক: গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সফলভাবে উত্তরণ নিশ্চিতে বাংলাদেশকে সহায়তা করার কথা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটের চার সদস্য।
ছাত্র–জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে শেখ হাসিনা ভারতে চলে যাওয়ার পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ও শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে লেখা এক চিঠিতে এ কথা জানান ওই সিনেটররা।
সাম্প্রতিক কালে হওয়া ব্যাপক বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে দেশে জরুরি ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক সংস্কারকাজ চালানো ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয় চিঠিতে। দাবি জানানো হয় বাস্তবিক অর্থেই দেশে একটি রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তন আনার।
কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের পররাষ্ট্র সম্পর্কবিষয়ক কমিটির ওয়েবসাইটে গতকাল শুক্রবার এ চিঠি প্রকাশ করা হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষরকারী আইনপ্রণেতারা হলেন, এই কমিটির প্রধান ও সিনেটর বেন কার্ডিন, সিনেটর ক্রিস মারফি, সিনেটর ক্রিস ভ্যান হলেন ও সিনেটর জেফ মার্কলে।
বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বদানের ভার গ্রহণ করায় চিঠির শুরুতেই অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে ধন্যবাদ জানান চার সিনেটর।
সাম্প্রতিক কালে হওয়া ব্যাপক বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে দেশে জরুরি ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক সংস্কারকাজ চালানো ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয় চিঠিতে। দাবি জানানো হয় বাস্তবিক অর্থেই দেশে একটি রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তন আনার।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি এ সিনেটররা আরও কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করা, হিন্দু সম্প্রদায়, কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাসহ ঝুঁকিতে থাকা সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ওপর হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দ্রুত জবাবদিহি করার ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
আইনপ্রণেতারা লেখেন, ‘সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় বাংলাদেশের মানুষ কীভাবে সম্মিলিত পদক্ষেপের মাধ্যমে একটা পরিবর্তন আনয়নকারী শক্তির সাহসী প্রদর্শন করেছেন, সেটি নিজেদের সরকার (শেখ হাসিনার সরকার) ও বিশ্ববাসী দেখেছে। এই রূপান্তর প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার, মানবাধিকার রক্ষা ও শাসনব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্তিমূলক অংশগ্রহণের বিষয় নিশ্চিত করার এক ঐতিহাসিক সুযোগ এনে দিয়েছে।’
এ প্রসঙ্গে আইনপ্রণেতারা আরও বলেন, ‘এ রূপান্তর বাংলাদেশে মানবাধিকার নিশ্চিত করা, যেমন মতপ্রকাশ ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতার সুরক্ষা; নানা বৈচিত্র্যের মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী সরকারে অন্তর্ভুক্তিমূলক অংশগ্রহণের সুযোগ প্রদান; নাগরিক সমাজ ও স্বাধীন গণমাধ্যমের প্রতি সমর্থনদান এবং দেশের জনগণের বিরুদ্ধে সহিংসতার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনার বিরাট সুযোগ। বাংলাদেশের জনগণ এমন একটি সরকার প্রতিষ্ঠার অধিকার রাখেন, যা তাঁদের মতামত সম্মান জানাবে, অধিকারের সুরক্ষা দেবে ও মর্যাদা সমুন্নত রাখবে।’
ছাত্র–জনতার আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে সিনেটররা লিখেছেন, ‘যখন নাগরিকেরা একত্র হন, তখন তাঁদের কণ্ঠস্বর এমনকি সবচেয়ে অনমনীয় ও কর্তৃত্ববাদী নেতাদেরও ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করতে পারে।’
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘ঐতিহাসিক এ মুহূর্ত এমনিতেই আসেনি। বিক্ষোভকারীদের যৌক্তিক দাবিদাওয়ার সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত না করে র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বরং নিষ্ঠুরভাবে শক্তি খাটিয়েছে। এতে নিহত হয়েছেন শত শত বিক্ষোভকারী। আহত হয়েছেন হাজারো মানুষ। গ্রেপ্তার করা হয়েছে অনেককে।’
এদিকে বিক্ষোভকারীরা নিহত হওয়ার ঘটনায় শোক জানিয়ে সিনেটররা বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত পরিচালনা করতে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে গ্রহণযোগ্য প্রক্রিয়া অনুসরণের অনুরোধ জানাচ্ছেন তাঁরা। বিক্ষোভকারীদের অধিকারের প্রতি অধ্যাপক ইউনূসের সম্মান দেখানোর প্রতিশ্রুতি রক্ষা ও তাঁদের দাবিদাওয়া নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের আস্থার সঙ্গে কাজ করার আগ্রহের ইঙ্গিত—এ উভয় বিষয়ের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ।