ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে আজ শনিবার ‘জনপরিসরে অদৃশ্য প্রতিবন্ধী নাগরিক: বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গঠনে আমাদের প্রত্যাশা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন
নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রতিবন্ধিতাকে মানববৈচিত্র্য হিসেবে না দেখে এখনো অভিশাপ বা অসুস্থতা হিসেবে দেখা হয়। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতি সামাজিক-পারিবারিক, সাংস্কৃতিক ও রাষ্ট্রীয়—এই তিন স্তরেই বৈষম্য রয়েছে। প্রতিবন্ধী বিপুল গোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গঠন সম্ভব নয়।
‘জনপরিসরে অদৃশ্য প্রতিবন্ধী নাগরিক: বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গঠনে আমাদের প্রত্যাশা’ শীর্ষক এক উন্মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বক্তারা। শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে এ আলোচনার আয়োজন করে বাংলাদেশ সোসাইটি ফর দ্য চেঞ্জ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি নেক্সাস (বি-স্ক্যান)।
আলোচনায় কবি, প্রাবন্ধিক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার ফরহাদ মজহার বলেন, প্রতিবন্ধী শব্দের কোনো অর্থ হয় না। এই শব্দটিই নেতিবাচক ধারণা দেয়। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা নাগরিকদের একটি অংশ। তাঁরা ভিন্নভাবে তাঁদের প্রতিভা ব্যবহার করেন। তাঁদের সমাজে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম বলেন, প্রতিবন্ধিতার কিছু অংশ প্রাকৃতিক। কিন্তু বড় অংশই মানবসৃষ্ট। যেমন জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ঘিরে বিপুলসংখ্যক মানুষ প্রতিবন্ধী হিসেবে নতুন করে যুক্ত হয়েছেন। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে মনোযোগে আনতে হবে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, নতুন রাষ্ট্র এই মানুষদের অগ্রাধিকারের তালিকায় রাখবে। শুধু কিছু কাঠামোগত সুবিধা দেওয়া হলেই পরিস্থিতি অনেকটা পাল্টে যেতে পারে।
বি-স্ক্যানের সাধারণ সম্পাদক সালমা মাহবুবের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনটির পরিচালক ইফতেখার মাহমুদ। তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫৩ বছরে বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রে এগিয়েছে। কিন্তু সমমর্যাদাপূর্ণ স্বাধীন জীবনযাপন ও নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত প্রতিবন্ধী মানুষের কণ্ঠ যেন রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের কাছে পৌঁছাতে পারছে না। প্রতিবন্ধীদের মানুষ হিসেবে না দেখে অসহায়, দুর্বল, অক্ষম হিসেবে সাহায্য করা দরকার—এই গৎবাঁধা নেতিবাচকতা থেকে সাধারণ মানুষ এখনো বের হতে পারেনি।
আলোচনা আয়োজনে বি-স্ক্যানকে সহায়তা করেছে প্রতিবন্ধী নাগরিক সংগঠনের পরিষদ (পিএনএসপি) ও সাইটসেভার্সের ক্যাম্পেইন সমতার বাংলাদেশ। আলোচনায় লিখিত বক্তব্যে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে ন্যূনতম একজন প্রতিবন্ধী মানুষকে নিয়োগ দেওয়া, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি উন্নয়ন অধিদপ্তর কার্যকর করা এবং সরকারি চাকরিতে প্রতিবন্ধীদের জন্য কোটা ব্যবস্থার পুনর্মূল্যায়নসহ বেশ কিছু দাবি উপস্থাপন করা হয়।