রাঙামাটিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হলে কয়েকটি যানবাহন পুড়ে যায়। সকালে রাঙামাটি শহরের উত্তর কালিন্দী পুর এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রতিনিধি চট্টগ্রাম: পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে সংঘর্ষের প্রভাব পড়েছে রাঙামাটি জেলায়ও। আজ শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত রাঙামাটি সদরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, দোকানপাট ও বাড়িঘরে ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষের ঘটনায় একজন পাহাড়ি যুবক নিহত ও আহত হয়েছেন দুই পক্ষের ৫৫ জন।
খাগড়াছড়িতে বাড়ি ও দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ এবং গুলিতে তিন পাহাড়ির মৃত্যুর প্রতিবাদে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলে ঢিল ছোড়াকে কেন্দ্র করে রাঙামাটির সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। জেলা সদরের বনরূপা, উত্তর কালিন্দীপুর, কালিন্দীপুর এবং বিজন সরণি এলাকার দেড় কিলোমিটারজুড়ে সংঘর্ষ চলে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাঙামাটিতে শুক্রবার বেলা একটা থেকে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।
সংঘর্ষে নিহত যুবকের পরিচয় পাওয়া যায়নি। তাঁর মরদেহ রাঙামাটি সদর হাসপাতালে রয়েছে। হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা শওকত আকবর বলেন, বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ৫৬ জনকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। এর মধ্যে অজ্ঞাতপরিচয় একজনকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তাঁর বয়স আনুমানিক ২৫ থেকে ৩০ বছর। মাথায় আঘাত পাওয়ার কারণে তাঁর মৃত্যু হয় বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
আহতদের মধ্যে তিনজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রামে পাঠানো হয়েছে। ১৯ জনকে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বাকিদের বহির্বিভাগে চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। তাঁদের শরীরে জখম, পাথরের আঘাতসহ নানা ক্ষত রয়েছে বলে চিকিৎসকেরা জানান।
এর আগে সকাল ১০টার দিকে খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি–বাঙালির সংঘর্ষের জের ধরে তিনজন পাহাড়ি নিহত হওয়ার প্রতিবাদে রাঙামাটির স্টেডিয়াম এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে পাহাড়ি ছাত্র জনতা। এতে কয়েক হাজার লোকের সমাগম হয়। স্টেডিয়াম থেকে মিছিলটি বনরূপা এলাকায় পৌঁছালে তাতে কে বা কারা পাথর নিক্ষেপ করে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা দেখা দেয়। এরপর পাহাড়ি ও বাঙালির মধ্যে সংঘর্ষ বাধে।
এরপর পাহাড়িরা মিছিল নিয়ে বনরূপা থেকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে চলে আসে। সেখানেও দুই পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে পাহাড়িরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। বিভিন্ন অলিগলিতে তাঁরা আশ্রয় নেন। সেখান থেকে ইটপাটকেল ছুড়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করছিলেন অনেকে। এর মধ্যে বনরূপা, কালিন্দীপুর এলাকায় বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘরে ভাঙচুর এবং আগুন দেওয়া হয়। বাস, মোটরসাইকেল ও সিএনজি অটোরিকশায় ভাঙচুর চালানো হয়। আগুন দেওয়া হয় কয়েকটি যানবাহনে।
এ সময় আঞ্চলিক পরিষদ কার্যালয়সহ অন্তত ৩০–৪০টি বাড়িঘর ও দোকানপাটে ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। প্রথম আলোর রাঙামাটি প্রতিনিধি সাধন বিকাশ চাকমার মোটরসাইকেলসহ অন্তত ৩০টি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। বিভিন্ন বাড়ি ও অফিসের নিচতলায় গিয়ে ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ।
এরপর বেলা একটার দিকে রাঙামাটি পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেন জেলা প্রশাসক মো. মোশারফ হোসেন খান। সেনাবাহিনী ও পুলিশের টহল জোরদার করা হয়। পুনরায় হামলা ও সংঘর্ষের আশঙ্কায় পাহাড়ি পাড়াগুলোতে পাহারা দিচ্ছেন স্থানীয় লোকজন।
রাঙামাটি জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহ ইমরান বলেন, সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। এ সময় প্রচুর গাড়ি ও দোকানপাট ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করা হয়। ১৪৪ ধারা জারির পর থেকে পরিস্থিতি আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হচ্ছে। আতঙ্ক রয়েছে কিছু কিছু এলাকায়। সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিজিবির টহল রয়েছে।
উল্লেখ্য, খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় পাহাড়ি ও বাঙালির মধ্যে সংঘর্ষের জেরে বৃহস্পতিবার রাতভর খাগড়াছড়ি জেলা সদরে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। রাতের গোলাগুলি ও বিকেলের সংঘর্ষের ঘটনায় তিনজন পাহাড়ি নিহত হন। আহত হন অন্তত ১৫ জন। বুধবার মোহাম্মদ মামুন (৩০) নামের এক ব্যক্তিকে মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে মারধর করার ঘটনার জের ধরে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয় বলে জানা গেছে। আহত মামুন বুধবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তিনি খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার বাসিন্দা। বৃহস্পতিবার বিকেল দীঘিনালায় পাহাড়িদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘরে আগুন দেওয়া হয়। তবে সেখানে কিছু বাঙালির দোকানও পুড়ে যায়।