পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ সেতু পয়েন্টে হু হু করে বাড়ছে পানি । শুক্রবার বিকেলে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি ঈশ্বরদী: হঠাৎ পদ্মার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পাবনার ঈশ্বরদীতে নদী তীরবর্তী এলাকায় আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। পদ্মার চরাঞ্চলের ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় চরের কৃষকরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার সাঁড়া ও লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নের পদ্মার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বিশেষ করে সাঁড়ার মোল্লার চর ও বিলবামনির প্রায় ৩২৫ হেক্টর জমি পানির নিচে চলে গেছে। এখানকার ২২৫ বিঘা আখ চাষের জমিও প্লাবিত হয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে আরও ক্ষতির শঙ্কা করছেন স্থানীয় কৃষকরা। এদিকে, হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ১৫টি গার্ডারের মধ্যে ১৩টির নিচে পানি উঠে গেছে, বাকি দুই গার্ডারের নিচে যেকোনো সময় পানি প্রবাহিত হতে পারে। পানির উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে আশপাশের ফসলি জমিও প্লাবিত হয়েছে।

পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, গত ৭ দিনে ঈশ্বরদী এলাকায় পদ্মার পানি ১ দশমিক ৫০ মিটার বেড়েছে। ১৭ সেপ্টেম্বর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির উচ্চতা ১০ দশমিক ৮৮ মিটার ছিল, যা ২৬ সেপ্টেম্বর ১২ দশমিক ৩৮ মিটারে দাঁড়িয়েছে।

মোল্লার চরের কৃষক আতাহার বিশ্বাস বলেন, 'পানি এখনো বিপদসীমার নিচে থাকলেও আমাদের ফসলের জমি প্লাবিত হয়ে গেছে। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে আরও জমি পানির নিচে তলিয়ে যাবে। ধারদেনা করে চাষ করেছি, পানিতে সব চলে গেলে দেনা পরিশোধ করা কঠিন হয়ে যাবে।'

সাঁড়া ইউনিয়নের সাত্তার হোসেন, যিনি ৩০ বিঘা জমিতে আখ চাষ করেছেন, জানান, 'আমার জমি পানির নিচে চলে গেছে। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে কয়েক দিনের মধ্যে পুরো চরাঞ্চলই প্লাবিত হয়ে যাবে। এতে কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বেন।'

পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন শাহ সেতু এলাকায় পদ্মা নদীর পানি এখনও বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি। শুক্রবার বিকেলে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

পদ্মার তীরবর্তী বাসিন্দা লতিফ খাঁ বলেন, 'গত ৭-৮ দিন ধরে পানি বাড়ছে। শুনেছিলাম, ফারাক্কা বাঁধের পানি ছাড়া হয়েছে, কিন্তু তখনও পদ্মায় এত পানি ছিল না। হঠাৎ করে এত পানি বেড়েছে, তা বুঝতে পারছি না। এবছরের মধ্যে পদ্মায় এখনই সবচেয়ে বেশি পানি, গত বছর এতটা বাড়েনি।'

হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এলাকার নৌকার মাঝি নাসিম মালিথা বলেন, 'এই কয়েকদিনে হুট করে পদ্মায় পানি বেড়ে গেছে। এতদিন প্রায় খালি থাকা নদী এখন পানিতে ভরা। এতে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এলাকায় দর্শনার্থীদের ভিড়ও বেড়েছে। নৌকায় ঘুরে ঘুরে ভরা পদ্মা দেখছেন তারা, কিন্তু চরের নিচু জমিগুলো ডুবে গেছে। নৌকা পারাপারের সময় কৃষকদের হতাশা দেখতে পাচ্ছি।'

পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, 'হঠাৎ করেই পদ্মার পানি বেড়েছে। পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে বিপৎসীমা ১৩ দশমিক ৮০ মিটার। বর্তমানে পানি ১২ দশমিক ৩৮ মিটার। তবে বিপদসীমা অতিক্রম করার সম্ভাবনা নেই, এবং দুই একদিনের মধ্যে পানি কমতে শুরু করবে।'