অস্থিরতা অব্যাহত পোশাকশিল্পে, বন্ধ ২৫৭ কারখানা

সাভারের পলাশবাড়ী এলাকায় মহাসড়কে বিক্ষোভ করেন পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা | ফাইল ছবি

ঢাকা, সাভার এবং গাজীপুর: বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে শ্রমিক বিক্ষোভের জেরে তৈরি পোশাক খাতের অস্থিরতা টানা দুই সপ্তাহ চলছে। শ্রমিক অসন্তোষের কারণে বৃহস্পতিবারও সাভার-আশুলিয়া ও গাজীপুরের ২৫৭টি তৈরি পোশাক কারখানা বন্ধ ছিল। এর মধ্যে ৯৪টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে মালিকপক্ষ।

তবে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ দাবি করেছে, সাভার-আশুলিয়া ও গাজীপুরে ১১৫টি পোশাক কারখানা বন্ধ ছিল। সার্বিকভাবে আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৭৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ কারখানা (বিজিএমইএর সদস্য) আগস্ট মাসের মজুরি পরিশোধ করেছে। মজুরি বাকি রয়েছে ৫৪৯ কারখানায়।

এদিকে চলমান শ্রমিক বিক্ষোভে দেশ ও দেশের বাইরের মানুষের ইন্ধন আছে বলে মন্তব্য করেছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। তিনি বলেন, স্থানীয়ভাবে ঝুট ব্যবসার দ্বন্দ্বে পোশাক কারখানার শ্রমিকদের ব্যবহার করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিষয়টি কঠোরভাবে দেখছে। শ্রমিকদের অধিকার এই মুহূর্তে শতভাগ নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তবে শ্রমিকদের অনেক দাবি যৌক্তিক, মালিকেরা চাইলে সেগুলো পূরণ করতে পারেন।

গাজীপুরের টঙ্গী বাজার এলাকায় আজ দুপুরে শিল্প সম্পর্ক শিক্ষায়তনে আয়োজিত শ্রম অসন্তোষ ও শ্রম পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণবিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক আবদুর রহিম খান, শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. তরিকুল আলম প্রমুখ।

এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ৫ আগস্টের পর অনেক শিল্পমালিক পলাতক। গ্রেপ্তারও হয়েছেন কেউ কেউ। মালিক না থাকা কারখানায় শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করতে সমস্যা হচ্ছে। এ বিষয়ে বাণিজ্য সংগঠনের নেতারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করছেন। প্রয়োজনে ব্যবসায়ীদের আর্থিক সহযোগিতা করবে ব্যাংকগুলো।

শ্রমসচিব আরও জানান, পোশাকশিল্পের চলমান সংকট নিরসনে ঢাকা মহানগর, নারায়ণগঞ্জ, আশুলিয়া, গাজীপুর—এই চার অঞ্চলের জন্য ১২ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কর্মকর্তারা প্রতিদিন কারখানাগুলোর বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করবেন। পাশাপাশি খোলা হয়েছে অভিযোগ কেন্দ্র। এখানে অভিযোগ জানাতে পারবেন শ্রমিকেরা। পরে শ্রমসচিব তিনটি পোশাক কারখানা সরেজমিনে ঘুরে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

জানা যায়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিজিএমইএর নেতারা সাধারণ শ্রমিকদের পাশাপাশি শ্রমিক সংগঠনের নেতা ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দফায় দফায় সভা করছেন। আজ জামগড়া এলাকায় সাধারণ শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিজিএমইএর নেতারা। বৈঠকটি আয়োজন করেন সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির পরিবারকল্যাণ বিষয়ক সহসম্পাদক দেওয়ান মো. সালাউদ্দিন।

জানতে চাইলে বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবদুল্লাহ হিল রাকিব বলেন, ‘শিল্প তার সক্ষমতা অনুযায়ী সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। শিল্প বেঁচে থাকলে দেশের অর্থনীতি সচল থাকবে। বিষয়টি বিবেচনা নিয়ে শ্রমিকদের আমরা কাজে যোগ দিতে আহ্বান জানাচ্ছি। সাধারণ শ্রমিকেরা কাজ করতে চান। আশা করছি, আগামী সপ্তাহের শুরু থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।’

আশুলিয়ায় কারখানা বন্ধ বেশি
হাজিরা বোনাস ও টিফিন ভাতা বৃদ্ধি, শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ, সমানুপাতিক হারে নারী ও পুরুষ শ্রমিক নিয়োগসহ বিভিন্ন দাবিতে সাভার-আশুলিয়া অঞ্চলের শ্রমিকদের বিক্ষোভের জেরে আজ ২১৯টি তৈরি পোশাক কারখানা বন্ধ ছিল। এর মধ্যে ১৩৩টি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। আর শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারা অনুযায়ী বন্ধ রয়েছে ৮৬টি কারখানা। এসব কারখানায় শ্রমিকেরা কাজ না করলে মজুরি পাবেন না।

আশুলিয়ায় আজ ১২ সেপ্টেম্বর সকালে অধিকাংশ কারখানায় কাজে যোগ দেন শ্রমিকেরা। তবে কিছু কারখানায় শ্রমিকেরা বিভিন্ন দাবিতে কাজ বন্ধ করে বসে থাকেন। তখন কারখানাগুলোতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। নিরাপত্তা নিশ্চিতে দিনভর সড়কে টহল দিয়েছেন সেনাবাহিনী, র‍্যাব, বিজিবি ও পুলিশ সদস্যরা।

আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১–এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, ‘বুধবার থেকে শ্রমিকদের শান্তিপূর্ণভাবে কাজে যোগ দিতে অনুরোধ জানিয়ে আমরা মাইকিং করেছি। পরিস্থিতি থেকে কীভাবে উত্তরণ ঘটানো যায়, সে বিষয়ে সব পক্ষের সঙ্গে কথা হচ্ছে।’

এদিকে শ্রমিক বিক্ষোভের জেরে আজ গাজীপুরে আটটি পোশাক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে ৩০টি পোশাক কারখানায়।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারওয়ার আলম বলেন, ‘শ্রমিক বিক্ষোভের কারণে মহানগর ও মহানগরের বাইরে ৮টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করেছে মালিকপক্ষ। ছুটি হয়েছে ৩০ কারখানায়। অনেক সময় একটি কারখানায় ঝামেলা হলে ওই কারখানার শ্রমিকেরা আশপাশের আরও কারখানায় গণ্ডগোল করার চেষ্টা করেন। এসব কারণে বিশৃঙ্খলা এড়াতে কিছু কারখানা কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’