পরীক্ষার দাবিতে রাজশাহী অঞ্চলের নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলছে। বুধবার দুপুরে নগরের সাহেব বাজার জিরো পয়েন্ট এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন
প্রতিনিধি অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থায় দ্রুত পরীক্ষা গ্রহণের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে রাজশাহী অঞ্চলের নার্সিং কলেজগুলোর ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা। শনিবার দুপুরে প্রখর রোদে দীর্ঘক্ষণ অবস্থানের পর অসুস্থ হয়ে ১১ জন নারী শিক্ষার্থী রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরির বিভাগের ইনচার্জ ও হাসপাতালের মুখপাত্র শংকরকে বিশ্বাস বলেন, নার্সিংয়ের ১১ জন নারী শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাঁদের অবস্থা স্থিতিশীল। তীব্র রোদের মধ্যে থাকার কারণে তাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
এর আগে বেলা ১১টার দিকে পরীক্ষার দাবিতে রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাসের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। পরে সেখান থেকে একটি মিছিল নিয়ে তাঁরা নগরের সাহেব বাজার জিরো পয়েন্ট এলাকায় প্রেসক্লাবের সামনে আসেন। সেখানে দুপুর ১২টার দিকে ‘প্রতীকী পরীক্ষা’ দিয়ে পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করেন তাঁরা। পরে বেলা পৌনে ১টার দিকে ‘প্রতীকী বিষপান কর্মসূচি’ পালন করেন। প্রখর রোদের কারণে এ সময় বেশ কয়েকজন ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাঁদের মধ্যে ১১ জনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা অঞ্চলের দুটিসহ মোট ২৩টি নার্সিং কলেজ রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন পরিচালিত হয়। এগুলোর মধ্যে চারটি সরকারি নার্সিং কলেজ আছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের একই শিক্ষাবর্ষের (২০১৯-২০) শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে। সেপ্টেম্বরের মধ্যে পরীক্ষা ও ফলাফল না পেলে তাঁরা ছয় মাসের ইন্টার্নশিপ করতে পারবেন না। এ ছাড়া আগামী বছরের মার্চে নার্সিং নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন না তাঁরা। তাই সেপ্টেম্বরের মধ্যেই পরীক্ষা ও ফলাফল প্রকাশ প্রয়োজন।
প্রখর রোদের কারণে আন্দোলনে অসুস্থ হয়ে পড়েন ১১ শিক্ষার্থী। পরে তাঁদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
শিক্ষার্থীরা বলছেন, তাঁদের ক্লাস ও মধ্যবর্তী পরীক্ষাগুলো অনেক আগেই শেষ হয়েছে। কয়েক মাস ধরে তাঁরা পরীক্ষার অপেক্ষায় আছেন। গত ৩ জুলাই তাঁরা অনশন করে পরীক্ষার রুটিন পেয়েছিলেন। সে অনুযায়ী, আজ ৭ সেপ্টেম্বর থেকে পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ১ সেপ্টেম্বর রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ জেড এম মোস্তাক হোসেন পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করেন। পরে তিনি পদত্যাগও করেছেন। এ ছাড়া পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকও পদত্যাগ করেছেন। এরপর থেকে শিক্ষার্থীরা আবার সেশনজটের আশঙ্কার মধ্যে পড়ে যান।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ক মো. রায়হান আলী বলেন, তাঁরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপে অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনায় পরীক্ষার দাবি করছেন। পরীক্ষা নেওয়াসহ ৭ দফা দাবির কথা বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসককে জানিয়েছেন। কিন্তু তাঁদের বিষয়ে কোনো ধরনের আশ্বাস পাওয়া যাচ্ছে না। আজ তাঁদের পরীক্ষায় বসার কথা ছিল। সে অনুযায়ী তাঁরা প্রতীকী পরীক্ষায় বসেছেন। সেখানে আন্দোলন চলাকালীন অন্তত ১১ জন অসুস্থ হয়ে ভর্তি হয়েছেন। দাবি আদায় হওয়া না পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক খন্দকার মো. ফয়সল আলম শিক্ষার্থীদের এই পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের এই অবস্থার নিরসন দ্রুতই হবে। হয়তো কয়েক দিন পরীক্ষাটা পিছিয়ে যেতে পারে। আগামীকালের মধ্যে নতুন উপাচার্য নিয়োগ হতে পারে।