সাংবাদ সম্মেলনে সাকিব আল হাসান | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
ক্রীড়া প্রতিবেদক: সাকিব আল হাসান টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন আজ। কানপুরে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আসন্ন হোম সিরিজে মিরপুরেই খেলবেন শেষ টেস্ট। তবে টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় বলার এই ভাবনার কথা প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেনকে তিনি জানিয়েছেন গত পাকিস্তান সফরের সময়ই।
সূত্র জানিয়েছে, রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তান সিরিজ চলাকালে প্রধান নির্বাচককে সাকিব জানান, টেস্ট ক্রিকেটটা আর না খেলার চিন্তাই করছেন তিনি। তাঁর মনে হচ্ছে, টেস্ট ছাড়ার এটাই সঠিক সময়। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট আর খেলবেন কি খেলবেন না, সেটা নিয়েও চিন্তাভাবনা করছিলেন তখন থেকেই।
নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে সাকিবের প্রাথমিক চিন্তা জানার পর বিষয়টি নিয়ে বোর্ড এবং নির্বাচক কমিটি নিজেদের মধ্যে বেশ কয়েক দফা আলোচনা করে। তাঁদেরও মনে হয়েছে, সাকিবের আর টেস্ট না খেলার সিদ্ধান্ত সঠিক এবং তাঁর দেশের মাটিতে শেষ টেস্ট খেলার ইচ্ছাকে সম্মান জানানো উচিত।
পাকিস্তান সিরিজের পর কাউন্টিতে খেলে এসেছেন সাকিব | সারে ক্রিকেট |
পাকিস্তান সিরিজের পর সাকিব কাউন্টি ক্রিকেটের একটি ম্যাচ খেলতে চলে যান ইংল্যান্ডে। এ নিয়ে তখন আর আলোচনাটা তাই এগোয়নি। তবে ভারত সফরে চেন্নাই টেস্টের আগে সাকিব কথা বলেন দলের সঙ্গে তখন চেন্নাইতেই থাকা বিসিবি পরিচালক এবং সাকিবের গুরু নাজমুল আবেদীন ও নির্বাচক হান্নান সরকারের সঙ্গে। সে আলোচনায় মোটামুটি ঠিক হয়ে যায়, ভারত সফরের মধ্যেই টেস্ট থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেবেন সাকিব। দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে খেলবেন শেষ টেস্ট।
সরকার পরিবর্তনের পর তাঁর নামে যদিও একটি হত্যা মামলা হয়েছে, বোর্ড থেকে নাকি সাকিবকে আশ্বস্ত করা হয়েছে, ঘরের মাঠে নির্বিঘ্নে ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলার ব্যবস্থা করা হবে তাঁর। সাকিবও আজ বলেছেন, ‘আমি যেন গিয়ে খেলতে পারি এবং নিরাপদ অনুভব করি। যখন দেশের বাইরে আসার দরকার হবে, দেশের বাইরে আসতেও যেন আমার কোনো সমস্যা না হয়। বোর্ড খেয়াল করছে। বিষয়গুলোর সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তাঁরা দেখছেন। তাঁরা হয়তো আমাকে একটা সিদ্ধান্ত দেবেন, যেটার ভিত্তিতে আমি দেশে গিয়ে খুব ভালোভাবে খেলে অন্তত টেস্ট ফরম্যাটটা ছাড়তে পারব।’
আমি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলো খেলতে থাকি, ছয় মাস-এক বছর পরে যদি বিসিবি মনে করে আমার টি-টোয়েন্টিতে কিছু দেওয়ার আছে, আমি পারফর্ম করছি এবং ফিট আছি, তাহলে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি। কিন্তু এই মুহূর্তে নিজেকে টি-টোয়েন্টিতে দেখছি না।
সাকিব আল হাসানঅবসরের ঘোষণা নিয়ে চেন্নাই টেস্টের পর সাকিব আরও বিস্তারিত আলোচনা করেন বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ এবং নির্বাচকদের সঙ্গে। সর্বশেষ আলোচনাটা হয় কানপুরে গতকাল রাতে টিম হোটেলে ডিনারের পর। সাকিব নিজেই নির্বাচক হান্নান সরকারকে ডেকে আজ অবসরের ঘোষণা দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান।
পরে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন এবং মিডিয়া ম্যানেজার রাবীদ ইমামও যোগ দেন সে আলোচনায়। অবসরের ঘোষণার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের পর সাকিব ফোনে কথা বলেন বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের সঙ্গে। সাকিবের ইচ্ছায় তিনিও সম্মতি জানালে কানপুর টেস্ট–পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে আজ দলের পক্ষ থেকে যান সাকিব এবং এরপর সেখানেই দেন ঘোষণাটা।
ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টটা দেশের মাটিতে খেলতে চান সাকিব | এএফপি |
কানপুর থেকে সূত্র জানিয়েছে, সাকিবের টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত দলের সবাই সহজভাবে নিয়েছেন। তবে দলের সবারই চাওয়া—সাকিব যেন মিরপুরে খেলেই টেস্টকে বিদায় জানাতে পারেন। তাঁর রাজনৈতিক পরিচয় যেন দেশের মাটিতে খেলতে কোনো বাধা না হয়।
সংবাদ সম্মেলন সাকিব টেস্টের পাশাপাশি টি-টোয়েন্টি থেকেও অবসরের কথা বললেও একটু ফাঁক নিজেই রেখে দিয়েছেন। ‘আমার তো মনে হয় টি-টোয়েন্টিতে আমার শেষ ম্যাচ খেলে ফেলেছি বিশ্বকাপে’, কথাটা বললেও পরে আবার বলেছেন, ‘আমি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলো খেলতে থাকি, ছয় মাস-এক বছর পরে যদি বিসিবি মনে করে আমার টি-টোয়েন্টিতে কিছু দেওয়ার আছে, আমি পারফর্ম করছি এবং ফিট আছি, তাহলে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি। কিন্তু এই মুহূর্তে নিজেকে টি-টোয়েন্টিতে দেখছি না।’
টি-টোয়েন্টির ভবিষ্যৎ নিয়ে সাকিবের এমন বক্তব্যকে চূড়ান্ত অবসরের ঘোষণা হিসেবে নিচ্ছে না নির্বাচক কমিটি। কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ‘সাকিব কিন্তু টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নেয়নি। হয়তো আপাতত খেলবে না, তবে ফেরার পথ কিন্তু খোলা রেখেছে। আমরা তাই এটাকে অবসর ধরছি না। ভবিষ্যতে যদি মনে হয় জাতীয় দলের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে সে অবদান রাখতে পারবে, আমরা অবশ্যই তাকে বিবেচনা করব।’