চট্টগ্রাম বন্দর | ফাইল ছবি |
নিজস্ব প্রতিবেদক: যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে (জানুয়ারি-জুলাই) বাজারটিতে ৪৫৭ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছেন বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ দশমিক ২৭ শতাংশ কম।
ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) হালনাগাদ পরিসংখ্যানে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ৪ হাজার ৩৬৩ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক আমদানি করেছেন। এই আমদানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ কম।
অটেক্সার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশসহ শীর্ষ পাঁচ রপ্তানিকারক দেশের পোশাক রপ্তানি কমেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কমেছে বাংলাদেশের। গত বছর এই বাজারে বাংলাদেশ ৭২৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার হিস্যার ৯ শতাংশ দখলে নিয়ে বাংলাদেশ তৃতীয় সর্বোচ্চ পোশাক রপ্তানিকারক দেশ।
যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে শীর্ষ দেশ চীন। চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে ৮৭৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে দেশটি। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪ দশমিক ২২ শতাংশ কম।
এই বাজারে দ্বিতীয় শীর্ষ রপ্তানিকারক ভিয়েতনাম চলতি বছরের সাত মাসে ৮০৮ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। গত বছরের একই সময়ে তারা রপ্তানি করেছিল ৮২২ কোটি ডলারের পোশাক। সেই হিসাবে তাদের রপ্তানি কমেছে দেড় শতাংশ।
অটেক্সার তথ্যানুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার পোশাক রপ্তানিও কমেছে। চলতি বছরের সাত মাসে ভারত ২৮৫ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। তাদের রপ্তানি কমেছে ২ দশমিক ২১ শতাংশ। অন্যদিকে ইন্দোনেশিয়ার রপ্তানি কমেছে ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ। তাদের রপ্তানির পরিমাণ ২২৮ কোটি ডলার। এই বাজারে ভারত ও ইন্দোনেশিয়া যথাক্রমে চতুর্থ ও পঞ্চম শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশ।
গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি ২৫ শতাংশ কমে যায়। পাশাপাশি এই বাজারে আরেক দুশ্চিন্তাও তৈরি হয় চলতি বছর। মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি দপ্তরের (ইউএসটিআর) অনুরোধে বাংলাদেশসহ শীর্ষ পাঁচ পোশাক রপ্তানিকারক দেশ নিয়ে তদন্ত শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি সংস্থা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কমিশন (ইউএসআইটিসি)। কীভাবে এ দেশগুলো মার্কিন পোশাকশিল্পের বাজারের এত বড় অংশ দখল করে রেখেছে, তা তথ্যানুসন্ধান করে দেখবে কমিশন। এই পাঁচ দেশের কেউ অসুস্থ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বাজার দখল করেছে কি না, তা খুঁজে বের করাই প্রধান উদ্দেশ্য এ কমিশনের। অন্য চার দেশ হলো ভারত, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তান।
অবশ্য নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর যুক্তরাষ্ট্রের বাজার নিয়ে আশাবাদী হয়েছেন তৈরি পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা। যদিও কোটা সংস্কার আন্দোলন, ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান, বন্যা ও শ্রম অসন্তোষের কারণে দুই মাস ধরে পোশাক খাতের উৎপাদন ও রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন,
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর আমরা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানি বাড়ানো নিয়ে খুবই আশাবাদী। ইতিমধ্যে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দৃঢ় সমর্থন জানিয়েছেন ১৯৮ বিশ্বনেতা। তাঁদের মধ্যে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাসহ ৯২ জন নোবেলজয়ী রয়েছেন। এ ছাড়া বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে প্রাপ্তি ঘটবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে প্রাপ্তি ঘটবে বলে আমাদের বিশ্বাস।