সাক্ষাৎকার
সামান্তা শারমিন
বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্র বলতে বোঝে ভোট দেওয়া
জুলাই অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি মানুষের আকাঙ্ক্ষা অনেক। দেশের বেশিরভাগ মানুষের চাওয়া বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার সংস্কার। সেই আকাঙ্ক্ষাকে পূর্ণ রূপ দিতে গঠিত হয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। এ কমিটির মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সামান্তা শারমিন। নাগরিক কমিটি কীভাবে দায়িত্ব পালন করবে, তাদের ঘোষিত কর্মসূচির কাজ কতটুকু চলমান, বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারীদের বন্দোবস্ত কীভাবে করা হবে–– দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে এরকম নানা বিষয়ে পদ্মা ট্রিবিউনকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তিনি।
সামান্তা শারমিন: গণঅভ্যুত্থানে মানুষ যার যার আকাঙ্ক্ষা থেকে মাঠে নেমে এসেছিল। সেই আকাঙ্ক্ষার বড় একটা জায়গা ছিল, তারা একজন ফ্যাসিস্টকে চিহ্নিত করতে পেরেছিল। তবে আমরা মনে করি, মানুষ ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থাটাকেও ডিটেক্ট করতে পেরেছিল। তারা বুঝতে পেরেছে— এই ব্যবস্থা বিদ্যমান থাকলে তাদের অধিকার আদায় কখনোই হবে না। বরং বংশ পরম্পরায় তাদের এর মধ্য দিয়ে যেতে হবে। সাধারণ মানুষ ফ্যাসিস্টকে ডিটেক্ট করতে না পারলেও বিভিন্ন কার্যক্রম দেখে সেটি বুঝতে পেরেছিল। আদালতে গেলে হয়রানির শিকার, হাসপাতালে গেলে টাকা ছাড়া চিকিৎসা নেই, এরকম নানাভাবে তাকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। হয়তো এলিট ক্লাস সুবিধা পায়, কিন্তু দেশের সাধারণ নাগরিকরা তাদের ন্যূনতম নাগরিক সুবিধাটা পায় না। আমরা এই পুরো ব্যবস্থাটাকেই বলছি ফ্যাসিস্ট। আমরা সাধারণ মানুষের এই জায়গাগুলো অর্জন করতে পারিনি। আমার মনে হয় সাধারণ মানুষ আমাদের সঙ্গে একমত যে বর্তমান ব্যবস্থাটাকে বিলোপ করা দরকার।
পদ্মা ট্রিবিউন: চলমান ‘মব ভায়োলেন্স’, মন্দির ও মাজার ভাঙচুরের ঘটনায় অন্তর্বর্তী সরকারের ‘নিষ্ক্রিয়’ ভূমিকা রাখছে কিনা, এর কারণ কী বলে মনে করেন?
সামান্তা শারমিন: আমরা বিশ্বাস করি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্টাবিলাইজেশনের জন্য একটা সময় দরকার। কিন্তু একইসঙ্গে বুঝতে হবে— বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা বলতে শুধু পুলিশই নয়, আরও অনেক বাহিনী রয়েছে। এর মধ্যে সেনাবাহিনীও আছে এবং তারা জনগণের মধ্য থেকে উঠে আসা একটি বাহিনী। আমরা এমনও দেখেছি, মানুষ সেনাবাহিনী- সরকারের প্রতিও বিশ্বাস রাখতে চায়। আমরা যদি মানুষের চাওয়াগুলো পূরণ করতে না পারি, তাহলে তো রাস্তা হারিয়ে ফেলবো।
দেড়-দুই মাস হয়ে গেছে, এখনও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক দেখছি না। পুলিশের রিফর্ম দরকার, এতে কতটা সময় লাগবে তাও পরিষ্কার নয়। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমরা জবাবদিহির যে জায়গাটা চাই, সেখানে ঘাটতি আছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মানুষের একটি বড় সমর্থন নিয়ে এসেছে। সেই আস্থার জায়গা থেকে জবাবদিহি করে তাদের কাজ করতে হবে। যদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রিফরমেশনের দরকার হয়, করতে হবে। প্রয়োজনে তার ঊর্ধ্বে উঠে তাদের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে হবে। সেটা অবশ্যই জবাবদিহির মধ্যে থেকে করতে হবে।
গত ফ্যাসিবাদী সরকার রাষ্ট্রের প্রত্যেকটা বাহিনীতে দলীয়করণ করেছে, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা কায়েম করেছে। রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে দলীয়করণের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ তৈরি করেছে। সেটাও এই নিষ্ক্রিয়তার একটা কারণ হতে পারে। কিন্তু আমরা মনে করছি, এটা আসলে কোনও কারণ হতে পারে না। সরকারকে সহায়তা করতে জনগণ প্রস্তুত রয়েছে, তাদের মাঝে সেই মানসিকতা রয়েছে। এই ব্যবস্থা বিলোপে সরকারকে কাজ করতে হবে।
পদ্মা ট্রিবিউন: প্রতিবিপ্লবের কোনও শঙ্কা বা সম্ভাবনা দেখছেন কিনা?
সামান্তা শারমিন: অবশ্যই আমরা প্রতিবিপ্লবের শঙ্কা বোধ করছি। প্রতি মুহূর্তেই অনুভব করেছি। কতটা ভঙ্গুর অবস্থায় আমাদের ফেলে পালিয়ে গিয়েছে! বিগত সময়ে যে যে রাজনৈতিক উদ্যোগের মাধ্যমে বলা হচ্ছিল রাষ্ট্রীয় কাঠামো ভেঙে পড়ছে, গত ফ্যাসিবাদী সরকার সেই কারণগুলো এখানে ঘটিয়েছে। আমরা মনে করি, প্রতিবিপ্লবের পুরো প্লট এখনও চলমান। এর থেকে উত্তরণের জন্য সরকারকে অবশ্যই অনেক বেশি কঠোর হতে হবে। কঠোর হতে হবে জনগণের জন্য নয়, তার বাহিনীগুলোর জন্য, তার প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যকর করার জন্য। জনগণের প্রতি জবাবদিহি থাকতে হবে। এই জিনিসটা যদি আমরা স্টাবলিশ করতে না পারি, তাহলে প্রতিবিপ্লবের সম্ভাবনা প্রতি মুহূর্তে আরও বাড়তে থাকবে।
পদ্মা ট্রিবিউন: সংবিধান সংস্কারে কমিশন করা হয়েছে, সেটা গণঅভ্যুত্থানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক মনে করেন কিনা?
সামান্তা শারমিন: সরকার বিভিন্ন সেকটরে ছয়টি কমিশন গঠন করেছে। আমরা মনে করি, এখানে আরও কিছু কমিশন হওয়া দরকার। এখনও পর্যন্ত কিন্তু ক্রয় সংক্রান্ত অনুমোদন সংস্কার কমিশন হয়নি। তবে সংবিধান সংস্কারে যে কমিশন রয়েছে, সেটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশের জন্য। কারণ আমরা সংবিধান সংস্কারের কথা বলছি, নতুন সংবিধানের কথা বলছি। সংবিধান সংস্কার গণআলোচনার মধ্যে দিয়ে হওয়া প্রয়োজন। জনগণের সঙ্গে কথা বলা উচিত, তারা সংবিধান নিয়ে কী ভাবছে। তারা না ভাবলে সে বিষয়ে তাদের বোঝানো উচিত। সংবিধান সংস্কার আমাদের আন্দোলনের স্পিরিটের মধ্যে ছিল। কমিশনের এখানে অনেক কাজ করার সুযোগ রয়েছে। তাই স্পিরিটের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না, বরং প্রাসঙ্গিক।
পদ্মা ট্রিবিউন: অন্তর্বর্তী সরকারকে কত দিন সময় দেওয়া উচিত?
সামান্তা শারমিন: এ বিষয়ে আমরা বলতে চাই দ্রুততম সময়। মন্থর গতি কাটিয়ে উঠতে না পারলে দ্রুততম সময়ে সংস্কার সম্ভব নয়। এখনও কারও পক্ষ থেকে কোনও সংস্কার প্রস্তাবনা নেই। তাই সেটি আমাদের প্রস্তাবনার ওপর নির্ভর করবে। শুধু কমিশনগুলোর প্রস্তাবনা নয়, পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাবনা তৈরির জন্য সমাজ ও রাষ্ট্রের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলতে হবে। আমাদের পরামর্শের আলোকেই প্রস্তাবনা তৈরি হবে। তার ওপরই সময় নির্ভর করছে। আমরা যদি মনে করি দ্রুততম সময়ে তা সম্ভব, সেটি আসলে ঠিক না। তার মানে এই না যে, আমরা মন্থর গতি মেনে নেবো।
পদ্মা ট্রিবিউন: নাগরিক কমিটি কোন বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলবে? কথা বলার পদ্ধতি কী হবে?
সামান্তা শারমিন: নাগরিক কমিটি এখানে বড় একটা কার্যপরিধি ঠিক করেছে। এটা ছাড়া আমাদের কোনও উপায় ছিল না। কারণ বাংলাদেশের মানুষ তার নাগরিক সুবিধা পাচ্ছে না। এই নাগরিক সুবিধা বলতে আমরা শুধু তার ঘরে গ্যাস-বিদ্যুৎ পৌঁছাচ্ছে কিনা সেটা বোঝাচ্ছি না। পুরো বিশ্বে নাগরিকের যে মিনিং এবং সেই নাগরিকদের যে সুবিধা, নাগরিক হিসেবে তাদের সেই সুবিধা পাচ্ছে কিনা, সেটা নিয়েই আমাদের কথা। তাদের যে সার্বভৌমত্ব, নাগরিক মর্যাদা কখনোই দেওয়া হয়নি, সেটি স্টেবিলাইজ করতে আমরা চেষ্টা করছি। সে জায়গা থেকে আমাদের কার্যপরিধি অনেক বড়। এটা অনেক কষ্টসাধ্য, কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি, মানুষের সহায়তায় আমরা এগুলো করতে পারবো। মোট কথা হচ্ছে, জনগণের সার্বভৌম নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া এবং সেটির জন্য কাজ করা।
পদ্মা ট্রিবিউন: আপনারা জাতীয় নাগরিক কমিটির মাধ্যমে রাজনৈতিক বন্দোবস্তের কথা বলেছেন? সেটা আসলে কোন কোন মানদণ্ডে ঠিক করবেন?
সামান্তা শারমিন: আমরা গণঅভ্যুত্থানকে কোনোভাবেই সামাজিক আন্দোলন হিসেবে দেখছি না, রাজনৈতিক আন্দোলন হিসেবেই দেখছি। এসব জায়গায় নাগরিক কমিটিকে অবস্থান নিতে হচ্ছে, যেখানে জনগণের নানা উদ্যোগ একসঙ্গে করার একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। সেজন্য আমরা এমন একটা প্ল্যাটফর্ম দিতে চাই, যেখানে দেশের সব নাগরিক দল-মতের বাইরে এসেও শুধু দেশ ও রাষ্ট্রের জন্য চিন্তা করার, কথা বলার সুযোগটা যেন পায়।
পদ্মা ট্রিবিউন: জাতীয় নাগরিক কমিটির মাধ্যমে গ্রামে, পাড়া- মহল্লায় কাজ করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। সে কাজের অগ্রগতি কতটুকু?
সামান্তা শারমিন: আমরা রুট লেভেল পর্যন্ত মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করবো, তাদের মতামত নেবো। এটি আমাদের অন্যতম প্রধান টার্গেট। কারণ আমরা চাই, আবারও এমন কোনও সংবিধান তৈরি না হোক, এমন নীতি তৈরি না হোক, যেখানে দেশের সর্বসাধারণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিপালন থাকবে না, তাদের নাগরিক অধিকার সুনিশ্চিত করবে না, কথা বলার অধিকার থাকবে না। জনগণের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো তাদের কাছ থেকেই জানতে হবে, এটাই হচ্ছে আমাদের বটম লাইন।
আমরা ওপেন রয়েছি, আমাদের কমিটি যা চিন্তা করছে, দেশের মানুষের মধ্যে রাজনৈতিক দলের প্রতি আকাঙ্ক্ষা বেশি দেখা যাচ্ছে, রাজনৈতিক দলের ঊর্ধ্বে ওঠে দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত। সেই জায়গা থেকে রাজনৈতিক দল করা। আমাদের এই কাজগুলো করতে গিয়ে যদি কোনও বাধা দেখা দেয়, তাহলে আমাদের চিন্তা করতে হবে কমিটিগুলো আমরা কীভাবে ফর্ম করবো। আলোচনার ভিত্তিতে আমাদের এই ব্যবস্থাটা গড়ে উঠবে এবং তা জনগণের মধ্য থেকেই। গ্রাম পঞ্চায়েতের কাজ আমরা এখনও শুরু করিনি, প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
পদ্মা ট্রিবিউন: আত্মপ্রকাশের দিন আট দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন। সেই কর্মসূচি কতটা এগোলো?
সামান্তা শারমিন: আমাদের বড় একটি কাজ চলমান রয়েছে। তা হলো শহীদ ও আহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি। এই কমিটিতে দেশের নানান পর্যায়ের নানা শ্রেণির মানুষ কাজ করছে। আহত ও শহীদদের পরিবারের পক্ষে মামলাগুলো করা, সেগুলো কীভাবে পরিচালিত হবে, সে বিষয়ে প্রস্তাবনা ও গাইডলাইন তৈরি নিয়ে আমাদের কমিটি কাজ করছে। আহতদের চিকিৎসা পরবর্তী সময়ে কীভাবে চলবে, সে বিষয় নিয়েও কাজ করছি। এ কাজটি মোটা দাগে চলমান রয়েছে।
এছাড়া আমরা এক নম্বর যে পয়েন্টটা বলেছি, গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে সমুন্নত রাখা। আহত ও শহীদদের তালিকা তৈরি করে, তাদের ওপর যারা হামলা করেছে, তাদের বিচারের মুখোমুখি করা, বিচার প্রক্রিয়ায় এগিয়ে নেওয়া, এটি আমাদের গুরুত্বপূর্ণ একটি পার্ট যাতে করে গণঅভ্যুত্থানকে আন্তর্জাতিকভাবেও প্রতিষ্ঠা করতে পারি। এজন্য আমাদের কাজ চলছে।
পদ্মা ট্রিবিউন: দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি উঠেছে। বেশিরভাগ শিক্ষার্থী ছাত্ররাজনীতির বিপক্ষে। আবার শিক্ষার্থীদের একটি অংশ রাজনীতি চায়। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যেই প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনারা কীভাবে রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরি করবেন?
সামান্তা শারমিন: রাজনীতির প্রতি দেশের মানুষের বিতৃষ্ণা ছিল। রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই কিন্তু তারা অভ্যুত্থান করেছে, তারা আবারও অ্যাক্টিভ হয়ে ওঠেছে। ক্যাম্পাসভিত্তিক রাজনীতি নিয়ে তাদের যে প্রশ্ন, কারণ হলো এখান থেকেই সারা দেশে কনসেন্টটা (ধারণা) ম্যানুফ্যাকচার করা হতো। দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব করা হতো। সে জায়গা থেকে এই প্রশ্নটা করা বৈধ— ক্যাম্পাসভিত্তিক রাজনীতি থাকবে কি থাকবে না। দেশের ছাত্র-জনতার অবশ্যই অধিকার রয়েছে এখানে রাজনীতির থাকা না থাকার বিষয়ে কথা বলার। তবে রাজনৈতিক জাতি হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কোনও পথই রুদ্ধ করা উচিত না। আমরা যদি নিজেদের রাজনৈতিক জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে না পারি তাহলে পুরো বিশ্বের দরবারে নিজেদের কীভাবে প্রতিষ্ঠিত করবো। তা নিয়ে চিন্তা করার সুযোগ রয়েছে।
ছাত্ররাজনীতি যদি আমাদের রিথিঙ্ক করতে হয়, রিডাম্পশনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, সেটায় সময় দেওয়া উচিত। শিক্ষার্থীদেরও সময় দেওয়া উচিত। এখানে প্রেশার তৈরি করার কোনও সুযোগ নেই। শিক্ষার্থীদের এখানে পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। সমাধান যাই হোক, সেটা অবশ্যই আলোচনার ভিত্তিতে হতে হবে।
পদ্মা ট্রিবিউন: আপনাদের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্পর্কটা আসলে কেমন?
সামান্তা শারমিন: আপনারা দেখেছেন, তাদের ডাকে এখনও মানুষ নামছে এবং এই অভ্যুত্থান তাদের নেতৃত্বেই হয়েছে সে বিষয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। বাংলাদেশের যত বড় বড় আন্দোলন হয়েছে, সেগুলো ছাত্রদের নেতৃত্বেই হয়েছে। বাংলাদেশের ভাগ্যে ছাত্রদের অবদান লেখা আছে। আমাদের সঙ্গে তাদের সম্পর্কটা বোঝাপড়ার। সেখানেই আমরা আছি।
পদ্মা ট্রিবিউন: আত্মপ্রকাশের পর থেকে আপনারা এখনও পর্যন্ত ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী কী কী কর্মসূচি পালন করেছেন?
সামান্তা শারমিন: আমরা প্রথমেই বলেছি, আহত ও শহীদদের তালিকা তৈরি এবং মামলার কথা। সে কাজটা আমরা করছি। সেই মামলাগুলো যে অস্পষ্ট বিষয়ের ওপর দাঁড় করিয়ে করা হচ্ছে, এটি আসলে উচিত না। মামলাগুলো ঠিকঠাকভাবে করার জন্য আমরা কাজ করছি। আমাদের কাজ চলমান রয়েছে। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর মতো প্রথাগত যে কর্মসূচি তা আমরা এখনও শুরু করিনি। আমরা একটু সময় নিচ্ছি, অচিরেই সেসব কর্মসূচি শুরু করবো। কারণ আমরা কর্মসূচি পালন করবো পারস্পরিক মতামতের ওপর ভিত্তি করে।
পদ্মা ট্রিবিউন: বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ কম। আপনারা যে রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরি করতে যাচ্ছেন— সেখানে নারীদের অবস্থান কী হবে?
সামান্তা শারমিন: বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্র বলতে বোঝে ভোট দেওয়া। এটা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। দেশের সব শ্রেণির নাগরিকের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারী নেতৃত্ব নিয়ে যে প্রশ্ন, এখনও সেটার কোনও সমাধান হয়নি। সেই সঙ্গে সমাধান হয়নি আরও অনেক প্রশ্নের।
বাংলাদেশের মানুষ বিভিন্ন ধরনের শ্রেণি থেকে উঠে আসা। আমাদের প্রতিবন্ধীদের কথা শুনতে হবে, শ্রমিকদের কথা শুনতে হবে, নারীদের কথা শুনতে হবে। কমিটিতে আমরা সেই জায়গাটা রেখেছি। অনেক ইনক্লুসিভ হওয়ার চেষ্টা করেছি। আমরা চেয়েছি, আমাদের কমিটিতে একটা বড় সংখ্যক নারীর অংশগ্রহণ থাকুক। আমাদের একটা লিগেসি আছে কোটার বিরুদ্ধে কথা বলা। আমরা যদি কোটা চিন্তা না করে, রিপ্রেজেন্টেশনের জায়গা থেকে চিন্তা করি, আপনাকে চিন্তা করতে হবে ক্যাপাবল লোক তৈরির বিষয়ে। নারীদের রাজনীতিতে এগিয়ে আসার ক্ষেত্রে অনেক বেশি ক্যাপাবল হওয়ার প্রয়োজন। সংবিধানে নারীদের জন্য সংরক্ষিত যেসব আসন রয়েছে, সেগুলো নারীদের রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা তৈরিতে কতটুকু ভূমিকা রেখেছে? সেটা তো পুরোপুরি ফেল করেছে।
আমাদের ভাবতে হবে, সংরক্ষিত আসন না রেখেও নারীদের কীভাবে স্টাবলিশ করা যায়। কিছু জায়গা নারীদের জন্য নির্দিষ্ট থাকতে পারে, না হলে দেশের মানুষ প্রশ্ন তুলবে, নারীকে আপনি কোথায় রেখেছেন? প্রতিবন্ধীদের কোথায় রেখেছেন? দলিত শ্রেণিকে কোথায় রেখেছেন? দেশের মানুষ যেন সেই প্রশ্নটা তুলে আমরা সেই জায়গায় যেতে চাই। আমরা মনে করি না কোনও নির্দিষ্ট ফ্রেম বেঁধে দিলে তাদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে। আমাদের উদ্দেশ্য একটি রাজনৈতিক সচেতন জনগোষ্ঠী তৈরি করা, তার মধ্যে সবাই ইনক্লুডেড থাকবে।
পদ্মা ট্রিবিউন: আপনি ব্যক্তিগতভাবে কোনও রাজনীতিতে যোগ দেবেন কিনা?
সামান্তা শারমিন: আমাদের কাজ হচ্ছে রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরি করা। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় স্বার্থে রাজনীতি কী রকম হওয়া উচিত, কীভাবে রাজনৈতিক দলগুলো পরিচালিত হবে, সে বিষয়টি ঠিক করা। জাতীয় নাগরিক কমিটিতে থেকে অন্য কিছু নিয়ে চিন্তা করার সুযোগ নেই। রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরি হওয়ার পর তখনকার প্রেক্ষাপটই সব বলে দেবে।