ডিমের দাম আগে থেকেই বাড়তি ছিল, এখন সবজির দামও বাড়তে শুরু করেছে | কোলাজ |
আসাদ আবেদীন জয়: অনেকদিন ধরেই উচ্চ মূল্যে বিক্রি হচ্ছে ফার্মের মুরগির ডিম। এখন ডিমের দাম আরেকটু বেড়েছে, গত সপ্তাহের চেয়ে ৫ টাকা বেড়েছে ডজনে। ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা ডজন দরে বিক্রি হচ্ছে ডিম। ‘গরিবের আমিষ’ বলা হলেও সীমিত আয়ের মানুষের সামর্থের বাইরে চলে যাচ্ছে এই পণ্য। শুধু ডিম নয়, মধ্যবিত্তের পণ্য ফার্মের মুরগির দামও বাড়ছে নানা অজুহাত। গত কয়েক সপ্তাহে বিভিন্ন ধরনের সবজির দাম কমে আসলেও টানা বৃষ্টির কারণে সেটাও এখন বাড়তির দিকে।
শুক্রবার রাজধানীর মিরপুর ১ নম্বরের কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায় বাজারের এই চিত্র।
বেশিরভাগ সবজির দাম বেড়েছে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
আজ বাজারে ভারতীয় টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়, দেশি গাজর ১৩০ টাকা, চায়না গাজর ১৬০ টাকা, লম্বা বেগুন ৮০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ৮০ টাকা, কালো গোল বেগুন ১২০ টাকা, শসা ৮০ টাকা, উচ্ছে ৮০ টাকা, করল্লা ৭০ টাকা, কাঁকরোল ৮০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, মূলা ৭০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০-৭০ টাকা, পটল ৬০-৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, ধুন্দল ৬০ টাকা, ঝিঙা ৭০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা, কচুরমুখী ৮০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৫০ টাকা, কাঁচা মরিচ ২২০-২৪০ টাকা, ধনেপাতা ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মানভেদে প্রতিটি লাউ ৬০ টাকা, চাল কুমড়া ৬০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি হালি কাঁচা কলা ৪০ টাকা, হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা করে।
বৃষ্টি কমলে সবজির দাম আবার কমতে পারে বলে জানান বিক্রেতারা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
গত সপ্তাহের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায় আজ দেশি গাজর, কালো গোল বেগুন, শসা, উচ্ছে, মূলা, পটল, কচুরমুখীর দাম কমেছে ১০ টাকা থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া বরবটি ও লাউয়ের দাম কমেছে যথাক্রমে ২০ ও ১০ টাকা।
সবজির দাম বেড়ে যাওয়া নিয়ে বিক্রেতা মো. রাজিব বলেন, এই সময়ে সবজির দাম এতো বেশি থাকার কথা না। কিন্তু কয়েকদিনের বৃষ্টির কারণে সবজির দাম বেড়ে গেছে। বৃষ্টিতে সবজি নষ্ট হয়ে যায়, একদিনেরটা পরের দিন বিক্রি করা যায় না। তাই দাম বেশি যাচ্ছে এখন। তবে বৃষ্টি কমে গেলে দাম আবার কমে যাবে।
বাজার করতে আসা শফিক আহমেদ বলেন, এখন না হয় বৃষ্টির কারণে দাম বেশি বুঝলাম, কিন্তু অন্য সময় কি দাম কম থাকে? ৬০/৭০ টাকার নিচে সবজি পাওয়া যায় না, এটা কীভাবে কম দাম হয়?
পেঁয়াজ-রসুনের দাম মোটামুটি স্থিতিশীল | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
আজ বাজারে আকার ও মানভেদে ক্রস জাতের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০-১২০ টাকায়। এর মধ্যে ছোট পেঁয়াজ ১১০ টাকা ও বড় সাইজের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। আর মানভেদে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১৫-১২০ টাকা করে। এছাড়া লাল আলু ৬০ টাকা, সাদা আলু ৬০ টাকা, বগুড়ার আলু ৭০ টাকা, দেশি রসুন ২৪০ টাকা, চায়না রসুন ২২০ টাকা, চায়না আদা ২৮০ টাকা, ভারতীয় আদা ২৮০ দরে বিক্রি হচ্ছে। এক্ষেত্রে দেখা যায় ছোট আকারের ক্রস পেঁয়াজের দাম কমেছে কমেছে ৫ টাকা।
দাম বাড়ানোয় কত অজুহাত
‘সাপ্লাই কম’, ‘মুরগির খাদ্যের দাম বেশি’ এরকম নানা অজুহাতে বেড়েই চলছে ফার্মের মুরগি ও ডিমের দাম। আজ ডজন-প্রতি মুরগির লাল ও সাদা ডিমের দাম বেড়েছে ৫ টাকা করে। আর ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ৫-৮ টাকা। লেয়ার মুরগির দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা। তবে কক মুরগির দাম কমেছে ১৭ টাকা।
ডিমের দাম কমছেই না কোনোমতে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
ডিমের দাম কেন বেড়েছে জানতে চাইলে আব্দুল জব্বারের ডিমের দোকানের বিক্রেতা বলেন, মুরগির খাবারের দাম বেশি, তাই ডিমের দামও বাড়ছে। খাবারের দাম না কমলে ডিমের দামও কমবে না।
মুরগির দাম সীমিত আয়ের লোকজনের ক্রয়সীমার বাইরে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
আরেক বিক্রেতা বলেন, ডিমের সাপ্লাই কম বলে দাম বেশি। আড়তদাররা আমাদের ডিম কম দেয়, বলে যে ডিম কম আছে। এর জন্য নাকি দাম বাড়তি।
এদিকে বি.বাড়িয়া চিকেন হাউজের বিক্রেতা বলেন, ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে কারণ মুরগির খাদ্যের দাম বেশি।
এছাড়া আজ গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা কেজি দরে। খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১১০০ টাকা কেজি দরে।
ইলিশ ছাড়া অন্যান্য মাছের দামও কিছুটা বেশি বলে অভিযোগ ক্রেতাদের | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
মাছের বাজারও বাড়তির দিকে বলে জানান ক্রেতারা। বিশেষ করে ইলিশ মাছের দাম বাড়ছে হু হু করে। আজ বাজারে ইলিশ মাছ ওজন অনুযায়ী ১৬০০ থেকে ২৪০০ টাকা, রুই মাছ ৩৪০-৭০০টাকা, কাতল মাছ ৪০০-৬৫০ টাকা, কালবাউশ ৪০০-৭০০ টাকা, চিংড়ি ৯০০-১৬০০ টাকা, কাঁচকি ৪০০ টাকা, কৈ ২০০-৩০০ টাকা, পাবদা মাছ ৪০০-৮০০ টাকা, শিং মাছ ৫০০ ১৪০০ টাকা, টেংরা ৬০০- ১০০০ টাকা, বেলে মাছ ৭০০-১২০০ টাকা, বোয়াল মাছ ৭০০-১২০০ টাকা, কাজলী মাছ ৭০০-১৪০০ টাকা, রুপচাঁদা মাছ ৮০০-১৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
আজ ছোট মসুরের ডাল ১৩৫ টাকা, মোটা মসুরের ডাল ১১০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৪০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৮০ টাকা, খেশারি ডাল ১০০ টাকা, বুটের ডাল ১৪০ টাকা, মাশকলাইয়ের ডাল ২০০ টাকা, ডাবলি ৮০ টাকা, ছোলা ১২৫ টাকা, প্যাকেট পোলাওয়ের চাল ১৫০ টাকা, খোলা পোলাওয়ের চাল মান ভেদে ১১০- ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মুদি দোকানের বেশিরভাগ পণ্যের দাম আগের মতোই আছে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৭ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৪৭ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১৩৫ টাকা, খোলা চিনি ১৩০, টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১১৫ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গত সপ্তাহের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায় বুটের ডাল ও ছোলার দাম বেড়েছে ১০ টাকা করে। আর প্যাকেট পোলাও চালের দাম কমেছে ৫ টাকা।