আলোচিত ইউটিউবার আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলমকে বগুড়ার আদালত চত্বর থেকে চ্যাংদোলা করে তুলে নিয়ে মারধর করা হয় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রতিনিধি বগুড়া: বগুড়ায় আলোচিত ইউটিউবার আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলমের ওপর হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছেন আদালতের আইনজীবীদের তিন সহকারী। তাঁরা হলেন আবু হাসান সরকার ওরফে রনি, নুরুল ইসলাম ওরফে নূর ও শামীম হোসেন। তাঁদের সঙ্গে হামলায় অংশ নিয়েছেন আরও ১০ থেকে ১২ জন আইনজীবীর সহকারী।
হামলাকারীদের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ আইনজীবী সহকারী সমিতি বগুড়া জেলা শাখার আহ্বায়ক আবু তৈয়ব হুদার দাবি, হামলাকারীদের সঙ্গে বিএনপির কোনো সর্ম্পক নেই। আওয়ামী লীগের আইনজীবী ও স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে এত দিন ওঠবস ছিল হামলাকারীদের। তাঁদের কেউ কেউ তাঁদের সমিতির সদস্য নন।
তবে একই সমিতির সদস্যসচিব শহিদুল ইসলাম বলেন, হিরো আলমের ওপর হামলাকারী হিসেবে গণমাধ্যমে যাঁদের ছবি প্রকাশিত হয়েছে, তাঁদের মধ্যে নুরুল ইসলাম ছাড়া অন্যরা বিএনপির সমর্থক। আদালত অঙ্গনে তাঁরা নিজেদের বিএনপি সমর্থক পরিচয় দিলেও নিজ এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে তাঁদের ওঠবস ছিল।
গত রোববার বগুড়ার আদালত প্রাঙ্গণে হামলার শিকার হন হিরো আলম। এ ঘটনার জন্য বিএনপিকে দায়ী করে তিনি বলেছিলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্পর্কে কটূক্তি এবং দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর বিরুদ্ধে মামলা করার অভিযোগ তুলে বিএনপির লোকজন এ হামলা করেছেন।
তবে একই দিন বিকেলে বগুড়া জেলা বিএনপি সংবাদ সম্মেলন করে হিরো আলমের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানায়। বিএনপির নেতারা বলছেন, হামলাকারীরা বিএনপির কেউ নন। কোনো প্রমাণ ছাড়াই হিরো আলম বিএনপিকে দোষারোপ করছেন। প্রমাণে ব্যর্থ হলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হামলায় আহত হয়ে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন হিরো আলম। গতকাল সোমবার হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে ফেরার সময় হিরো আলম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বিএনপি ও আওয়ামী লীগ দুই দলের লোকজনই তাঁর ওপর হামলা করেছেন।
হিরো আলম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সদ্য সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আওয়াল এবং মহাজেটের সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে মামলা করে বের হওয়ার সময় এজলাসকক্ষের ফটকে এ হামলার শিকার হন। হামলাকারীরা তাঁকে কিলঘুষি মারার পর চ্যাংদোলা করে আদালত প্রাঙ্গণে এনে মারধর করেন। পরে তাঁকে কান ধরে ওঠবস করানো হয়। আদালত প্রাঙ্গণে থাকা বহু মানুষের সামনে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ তাঁকে উদ্ধারে এগিয়ে আসেনি। পরে স্থানীয় লোকজন আহত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।
হামলায় নেতৃত্ব দেওয়ার কথা স্বীকার করে আইনজীবী সহকারী সমিতির সদস্য আবু হাসান গত রোববার বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্পর্কে কটূক্তি এবং দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর বিরুদ্ধে মামলা করার কারণে হিরো আলমের ওপর হামলায় তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন।
আইনজীবী ও সহকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আবু হাসান বগুড়া আদালতে বিএনপির সমর্থক আইনজীবী শেখ মাশরুক হোসেনের সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। তাঁর বাড়ি শাহজাহানপুর উপজেলার মাদলা ইউনিয়নের ঢাকন্তা গ্রামে। তিনি আদালত অঙ্গনে বিএনপির সমর্থক পরিচয় দিলেও এলাকায় যুবলীগের নেতাদের সঙ্গে ওঠবস ছিল তাঁর। ২০১৬ সালে মাদকসেবনের দায়ে আটকের পর ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা হওয়ায় তাঁর আইনজীবী সহকারীর নিবন্ধন বাতিল হয়। এরপরও নিয়মিত আদালতে আসতেন। নিজেকে আইনজীবী সহকারী সমিতির নেতা পরিচয় দিতেন।
হামলায় নেতৃত্ব দেওয়া আরেকজন নুরুল ইসলাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী খানের সহকারী। গোলাম রব্বানী খান সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। নুরুল ইসলামের বাড়ি বগুড়া সদর উপজেলার উলিপুর গ্রামে।
খোঁজ
নিয়ে জানা যায়, পরিবারের অন্যরা জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও
নুরুলের ওঠবস ছিল যুবলীগ ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে। সাবেক সংসদ সদস্য ও
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসানকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা
বিনিময়ের ছবিও রয়েছে। এ ছাড়া বাতিল হওয়া সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জেলা
যুবলীগের সভাপতি শুভাশীষ পোদ্দারের প্রাচরণায়ও অংশ নেন তিনি।
আইনজীবী
সহকারী সমিতির সদস্যসচিব শহিদুল ইসলাম বলেন, নুরুল ইসলাম যুবলীগের রাজনীতির
সঙ্গে সম্পৃক্ত। তবে বগুড়া জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম
দাবি করেন, নুরুল ইসলাম যুবলীগের কেউ নন।
হিরো আলমের ওপর হামলায় নেতৃত্বে দেওয়া শামীম হোসেন বগুড়া আদালতের আইনজীবী ও সারিয়াকান্দি উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নূর ই আজমের সহকারী। তাঁর বাড়ি বগুড়া সদর উপজেলার ফাঁপোড় গ্রামে। আইনজীবী সহকারী সমিতির সদস্যসচিব শহিদুল ইসলাম দাবি করেন, শামীম আদালত অঙ্গনে বিএনপির সমর্থক পরিচয় দিতেন।
তবে বগুড়া সদর উপজেলার ফাঁপোড় ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোহররম আলী বলেন, যুবলীগের পদধারী নেতাদের সঙ্গে শামীমের ওঠবস ছিল। এলাকায় তিনি যুবলীগ হিসেবেই পরিচিত।
হামলাকারীদের মধ্যে নাজমুল ও জাহাঙ্গীরও আইনজীবীদের সহকারী। আদালত অঙ্গনে তাঁরা নিজেকে বিএনপির সমর্থক পরিচয় দেন।
জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সহসভাপতি আবদুল বাছেদ বলেন, ‘হিরো আলমের ওপর হামলায় বিএনপির কেউ জড়িত নয়। হামলার দৃশ্যে গণমাধ্যমে যাঁদের ছবি ছাপা হয়েছে, তাঁরা যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের লোকজন। হিরো আলমের সঙ্গে বিএনপির কোনো বিরোধ নেই। তাঁর ওপর হামলা করার প্রশ্নই আসে না।’