প্রতিনিধি রাজশাহী: রাজশাহী কলেজের নতুন অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পাওয়া মো. আনারুল হককে যোগদান করতে দেবেন না শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন অভিযোগ তুলে তাঁর পদায়ন বাতিলের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। নতুন অধ্যক্ষের যোগদান প্রতিহত করতে আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজশাহী কলেজ প্রাঙ্গণে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন।
এর আগে গতকাল সোমবার বিকেলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপসচিব চৌধুরী সামিয়া ইয়াসমীনের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে আনারুল হককে রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি রাজশাহী নগরের শহীদ বুদ্ধিজীবী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। এর আগে তিনি রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, রাজশাহী কলেজ দেশসেরা। এখানে অধ্যক্ষ হিসেবে যাঁদের নিয়োগ দেওয়া হবে, তাঁদেরকেও দেশসেরা হতে হবে। কিন্তু এখানে বাইরের কলেজের এক অধ্যক্ষকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি স্বৈরাচার সরকার আওয়ামী লীগের দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করেছেন। শিক্ষা বোর্ডে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক থাকাকালে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেছিল। তিনি সাবেক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের মদদে বুদ্ধিজীবী কলেজের পদও দখল করেছেন। রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বোর্ডের ১৮ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় ২০২০ সালে তিনটি মামলা করে দুদক। দুদকের তদন্ত প্রতিবেদনেও এসব তথ্য উঠে আসে।
আন্দোলনকারীদের একজন কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আবদুর রহিম। তিনি বলেন, আনারুল হক শিক্ষা বোর্ডে থেকে দুর্নীতি করেছেন। তাঁরা দুর্নীতিবাজ এবং সরাসরি আওয়ামী লীগের দালালদের এখানে দেখতে চান না। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁকে যদি অপসারণ না করা হয় কিংবা তিনি যদি অব্যাহতি না নেন, তাহলে আরও কঠোর অবস্থানে যাবেন শিক্ষার্থীরা।
এসব অভিযোগের বিষয়ে মো. আনারুল হক বলেন, তিনি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক থাকাকালে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। কিন্তু মামলাটি মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়। আদালত ওই মামলা খারিজ করে দিয়েছেন। সেই খারিজের কপি তাঁর কাছে আছে। আনারুল হক আরও বলেন, তিনি কলেজে চর দখল করার মতো করে গিয়ে যোগদান করবেন না। তাঁকে সরকার সেখানে নিয়োগ দিয়েছে। তিনি সেখানে তদবির করেও নিয়োগ আনেননি। শিক্ষার্থীরা না চাইলে তিনি যোগদান করবেন না। কিন্তু তাঁরা যেসব অভিযোগ করছেন, সেগুলোর ভিত্তি নেই বলে দাবি আনারুল হকের।
এর আগে গত ১২ আগস্ট শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বদলির আবেদন করেন রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ মোহা. আবদুল খালেক। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ছিল, কোটা সংস্কার আন্দোলনে অধ্যক্ষ আবদুল খালেককে পাশে পাননি তাঁরা। সেখান থেকে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ ছিল। কলেজে সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠনের নির্যাতনের বিষয়েও অধ্যক্ষ চুপ থাকতেন। গতকাল বিকেলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপসচিব চৌধুরী সামিয়া ইয়াসমীন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে সাবেক অধ্যক্ষ মোহা. আবদুল খালেককে রংপুরের কারমাইকেল কলেজের অর্থনীতি বিভাগে নিয়োগ দিয়েছেন।