আনসার সদস্যরা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
নিজস্ব প্রতিবেদক: আনসারের বিভিন্ন পদমর্যাদার উন্নয়ন (আপগ্রেডেশন) হলেও উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা পদের আপগ্রেডেশনের সিদ্ধান্তটি ঝুলে আছে দীর্ঘদিন। যে কারণে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে এসব আনসার কর্মকর্তাদের মধ্যে। বাহিনীর সদর দফতর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে এ নিয়ে অনেকবার চিঠি চালাচালিও হয়েছে। সবশেষ গত ১২ আগস্ট আনসার সদর দফতরের প্রশাসন বিভাগের পরিচালক জাহানারা আক্তারের সই করা এ সংক্রান্ত একটি চিঠি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, উপজেলা পর্যায়ে প্রায় সব দফতরপ্রধানের পদ ৯ম গ্রেড এবং কিছু দফতরপ্রধান ষষ্ঠ গ্রেড হলেও আপগ্রেডেশন হয়নি উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তার পদটি। উপজেলায় এই পদটি উপজেলা পর্যায়ে আনসার ও ভিডিপির প্রধান প্রশাসনিক পদ। পদটি এখনও ১০ম গ্রেডেই রয়ে গেছে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে চরম অসন্তোষ থাকলেও তারা আইনি কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়াতেই সমাধান আশা করেন।
উপজেলা দফতর প্রধান হিসেবে উপজেলা আনসার কর্মকর্তারা সদর দফতরের সব নির্দেশনা মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন করে থাকেন। মাঠ পর্যায়ে ভিডিপি প্রশিক্ষণ, দুর্গাপূজা ও নির্বাচনে নিরাপত্তার জন্য হাজার হাজার আনসার ও ভিডিপি সদস্য মোতায়েন ও সার্বিক ব্যবস্থাপনাসহ এ দফতরের সব কাজ বাস্তবায়ন করে থাকেন উপজেলা আনসার কর্মকর্তারা।
একটি অনুষ্ঠানে আনসার সদস্যরা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
উপজেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা ও সার্কেল অ্যাডজুট্যান্ট পদের আপগ্রেডেশন নিয়ে ইতোপূর্বে সরকারপ্রধানের মৌখিক নির্দেশনার পরও দীর্ঘ এক যুগেও বিষয়টির সুরাহা হয়নি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে পদটির আপগ্রেডেশন বিষয়ে উল্লেখ করা হয়। পরের বছর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জারি করা চিঠিতে সুনির্দিষ্ট শর্ত সাপেক্ষে সার্কেল অ্যাডজুট্যান্ট, উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা ও সহকারী অ্যাডজুট্যান্ট পদকে প্রথম শ্রেণির (নন-ক্যাডার) পদে উন্নীত করতে সম্মতি দেওয়া হয়। এরপর প্রায় এক যুগ পার হলেও পদটিকে আপগ্রেডেশন করা হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা আনসার কর্মকর্তারা মনে করেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আনসার সদর দফতর বিষয়টি নিয়ে আন্তরিকভাবে কাজ করছে না। ৯ম গ্রেডের এ ফাইলটি নিয়ে ২০০৮ সাল থেকে কাজ চলছে। ইতোমধ্যে কয়েকবার জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয় থেকেও ফেরত এসেছে।
সবশেষ গত ১২ আগস্ট আনসার সদর দফতর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ১০ম গ্রেডভুক্ত সার্কেল অ্যাডজুট্যান্ট, উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা ও সহকারী অ্যাডজুট্যান্ট পদটি প্রথম শ্রেণির নন-ক্যাডার (৯ম গ্রেড) পদে উন্নীত করার প্রস্তাবটি প্রক্রিয়াকরণের জন্য চাওয়া জবাব পাঠানো হলো।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সম্মতি সত্ত্বেও কেন এই পদের উন্নীতকরণ সম্ভব হয়নি তা সুনির্দিষ্ট করে জানা যায়নি। অথচ মাঠ পর্যায়ে সব দফতরের পদ সমপর্যায়ের গ্রেড না হলে আন্তদফতর ও আন্তবাহিনী সমন্বয়ে অসুবিধা হয়। ক্ষেত্রবিশেষে হেয় প্রতিপন্ন হতে হয়। কর্তৃপক্ষ এটা জানার পরও কেন মাঠ পর্যায়ে বৈষম্য জিইয়ে রেখেছে তা স্পষ্ট নয় বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
২০২২ সালে রংপুরে আনসারের ‘জাতীয় শুদ্ধাচার সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ’ অনুষ্ঠান | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রথম শ্রেণির (নন-ক্যাডার) পদে উন্নীত করতে কোনও জটিলতা আছে কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে আনসারের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ বলেন, বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন। বাহিনীর চলমান সংস্কার কার্যক্রমের আওতায় এটি জাতীয় কমিশনের মাধ্যমে উপস্থাপন করে তরান্বিত করার প্রচেষ্টাও রয়েছে। তবে, শুধু গ্রেড উন্নীত করা নয়, পেশাগত দক্ষতা ও কার্যকর ভূমিকা রাখার প্রয়োজনীয় মানদণ্ডও চাকরি বিধিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।