পাকিস্তানকে ধবলধোলাই করার পর সিরিজের ট্রফি সামনে রেখে বাংলাদেশ দলের উচ্ছ্বাস। আজ রাওয়ালপিন্ডিতে | পিসিবি |
ক্রীড়া প্রতিবেদক: ড্রেসিংরুমের বারান্দায় ততক্ষণে ভিড় বাড়তে শুরু করেছে। পরের দুই ব্যাটসম্যান হিসেবে অপেক্ষারত লিটন দাস ও মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন দলের অন্যরাও। সবার মধ্যে উদ্যাপনের অপেক্ষা।
রাওয়ালপিন্ডি ক্রিকেট স্টেডিয়ামের বড় পর্দায় লেখা উঠছে—জয়ের জন্য বাংলাদেশের দরকার ১২ রান। রাওয়ালপিন্ডি স্টেডিয়ামের ডিজে ঠিক সে সময়ে সাউন্ডবক্সে বললেন— ‘জিতেগা ভাই জিতেগা!’। ডিজের কথার সঙ্গে মিল রেখে দর্শকেরা বলছিলেন, ‘বাংলাদেশ জিতেগা!’
ক্রিজে থাকা সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম দুটি সিঙ্গেল ও এক বাউন্ডারিতে সংখ্যাটাকে কমিয়ে আনেন ৬-এ, এরপর ৪-এ। সেই কাঙ্ক্ষিত ৪ রান আসে সাকিবের ব্যাট থেকে। ৫৬তম ওভারে আবরার আহমেদের বল কাভারে ঠেলে দিয়ে বাউন্ডারি তুলে নিলেই ইতিহাসের জন্ম দেয় বাংলাদেশ। প্রথম টেস্টে পাকিস্তানকে ১০ উইকেটে হারানোর পর দ্বিতীয় টেস্টে ৬ উইকেটের অবিশ্বাস্য জয়ে পাকিস্তানকে ২-০ ব্যবধানে ধবলধোলাই করল নাজমুলের দল।
ইতিহাস গড়ার মঞ্চটা গতকালই গড়ে বাংলাদেশ। প্রথমে হাসান মাহমুদ ও নাহিদ রানার আগুনে বোলিং, পরে জাকির হাসানের আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে রাওয়ালপিন্ডি টেস্ট থেকে প্রায় ছিটকে পড়ে পাকিস্তান। চতুর্থ ইনিংসে পাকিস্তানের ১৮৫ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে কাল বিকেলে ৭ ওভারে ৪২ রান তুলে ফেলে বাংলাদেশ। পঞ্চম দিন জয়ের জন্য বাংলাদেশের দরকার ছিল ১৪৩ রান। আজ ৪ উইকেট হারিয়েই বাংলাদেশ সেই লক্ষ্যে পৌঁছেছে।
এ নিয়ে পঞ্চমবার বাংলাদেশ টেস্টে সিরিজ জয়ের স্বাদ পেল। এর আগে দুবার করে সিরিজ হারিয়েছে জিম্বাবুয়ে ও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। তবে এবারের জয়টা পাকিস্তানের মাটিতে বলেই এর মাহাত্ম্য আলাদা। ২০২২ সালে ইংল্যান্ড সিরিজ ছাড়া এই প্রথম ঘরের মাঠে কোনো দলের বিপক্ষে ধবলধোলাই হলো পাকিস্তান। বাংলাদেশের জন্য যা নিশ্চিতভাবেই দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা সাফল্য।
আগের দিন বিকেলে বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে ইনিংস শুরু করা জাকিরের ইনিংসটি আজ সকালে দীর্ঘ হয়নি। দিনের পঞ্চম ওভার মির হামজা খুঁজে নেন ‘পারফেক্ট লেংথ’। অফ স্টাম্প থেকে ছোট্ট সিম মুভমেন্টে বেরিয়ে যাওয়া বলে সামনের পায়ে খেলতে গিয়ে বোল্ড হন জাকির। ৩৯ বলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪০ রানে থামে জাকিরের ইনিংস। বাংলাদেশের রান তখন ৫৮।
আরেক ওপেনার সাদমানও ইনিংস লম্বা করতে পারেননি। ১৭তম ওভারে খুররাম শেহজাদের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে আলগা ড্রাইভ করে ক্যাচ আউট হন তিনি। ২৪ রানে থামে সাদমানের ইনিংস।
জোড়া উইকেট পতনের পর নাজমুল ও মুমিনুলের জুটি গড়েন। শুরুতে কিছু আলগা শট খেললেও ক্রিজে সময় কাটানোর পর দুজনকেই আত্মবিশ্বাসী মনে হচ্ছিল। দুজনের সৌজন্যে মধ্যাহ্নবিরতির আগেই বাংলাদেশের রান এক শ ছাড়ায়। দুজনের জুটিও ৫০ ছাড়িয়ে যায়।
কিন্তু মধ্যাহ্নবিরতির পর ভুল শট খেলতে গিয়ে আউট হয়েছেন দুজনই। সালমান আলী আগার বলে শর্ট লেগে ক্যাচ তোলেন নাজমুল, পরে আবরারকে মারতে গিয়ে ক্যাচ তোলেন মুমিনুল। ৮২ বলে ৩৮ রানে থামে নাজমুলের ইনিংস। মুমিনুলের ব্যাট থেকে আসে ৭১ বলে ৩৪।
থিতু হয়ে আউট হলেও দুজনের ৩০ ছাড়ানো ইনিংসের সৌজন্যে জয়ের আরও কাছে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। সাকিব ও মুশফিক, টেস্ট দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ দুই ক্রিকেটার ৩২ রানের অপরাজিত জুটি গড়েন। সাকিব শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ২১ রানে, মুশফিক ২২ রানে।
এর আগে সিরিজের প্রথম টেস্টে পাকিস্তানকে ১০ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিন বৃষ্টিতে ভেসে গেলেও দ্বিতীয় দিন ব্যাট করতে নামা পাকিস্তানকে মেহেদী হাসান মিরাজের ৫ উইকেটের সৌজন্যে ২৭৪ রানে অলআউট করে বাংলাদেশ। জবাবে বাংলাদেশ দল পড়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে।
নিজেদের প্রথম ইনিংসে ২৬ রান তুলতেই ৬ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। সেই ধ্বংসস্তূপ থেকে বাংলাদেশকে টেনে তোলেন লিটন দাস ও মেহেদী হাসান মিরাজ। দুজনের ১৬১ রানের রেকর্ড জুটি বাংলাদেশকে বিপদ মুক্ত করে। মিরাজ ৭৮ রান করে আউট হন। কিন্তু লিটন ১৩৮ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে বাংলাদেশকে নিয়ে যান ২৬২ রানে। ম্যাচসেরার পুরস্কারও উঠেছে লিটনেরই হাতে।
পাকিস্তানের হয়ে খুররাম শেহজাদ নিয়েছেন ৬ উইকেট। ১২ রানের লিড পাওয়া
পাকিস্তান তাদের দ্বিতীয় ইনিংসে ১৭২ রানে অলআউট হলে বাংলাদেশের লক্ষ্য
দাঁড়ায় ১৮৫ রান। বাংলাদেশের হয়ে পেসার হাসান মাহমুদ নিয়েছেন ৫ উইকেট, নাহিদ
রানা ৪ উইকেট।