‘নতুন বাংলাদেশে’ জাতীয় কবির সাংবিধানিক স্বীকৃতি আসুক

কাজী নজরুল ইসলাম | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন   

সিফাত শাহরিয়ার প্রিয়ান: ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের পাতায় পাতায় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কাব্য, সঙ্গীত, দর্শন ছিল বসুধায় নব অভিযান পরিচালনায় মন্ত্রবল। তিনি সব সময়-কালের প্রাসঙ্গিক কবি বলে তার অসীম সাহস পাতাল ফুঁড়ে দোলা দিয়ে গেছেন তরুণদের চির-অটল লক্ষ্যে।

আন্দোলন-সংগ্রামে বারবার মহাবিপ্লব হয়ে ফিরে এসেছেন কবি নজরুল ইসলাম এ ধরণীতলে, মশাল জ্বেলে। কবির লালিত ‘বিপ্লব আনি বিদ্রোহ করি’ আর সঙ্গে সাম্য ও প্রেমাবেগ জাতীয় মুক্তির সংগ্রামে অবিচল এক শক্ত প্রতিশ্রুতি নিয়ে ভেঙে ফেলে যে কোনো লৌহ কপাট। আনে রাঙা প্রভাত। যিনি বলেছেন ‘অগ্রপথিক হে সেনাদল, জোর কদম চল রে চল’।

আজ এ লেখা একটি আবেদন জানাতে আসার অভিপ্রায়ে উপস্থাপিত। আবেদন আমাদের, আমাদের কাছেই আবেদন। পরশ-পাথর কবির জন্য আরেকটি উদ্যোগের অপেক্ষা। এই অপেক্ষা কবিকে জাতীয় কবির আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদান। আমাদের প্রশ্ন নেই তিনি যে বাংলাদেশের জাতীয় কবি। কিন্তু একটি রাষ্ট্রের কোনো কিছুকে জাতীয় করতে যে লিখিত আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রয়োজন হয়, তা কবি নজরুলের বেলায় এখনো অনুপস্থিত। তিনি এখনো সাংবিধানিক স্বীকৃত নন। তিনি এখনো অনানুষ্ঠানিক ও মৌখিকভাবে স্বীকৃত হয়ে আছেন।

জাতীয়করণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, বিধায় এগুলোর দালিলিক প্রমাণ রাখার জন্য রাষ্ট্র তার দায়বদ্ধতার প্রতিফলন ঘটায়। যদিও এটি নতুন দাবি নয়। অতীত-বর্তমান সময়ে বহুবার কবির পরিবার, কবি ভক্ত সমাজের পক্ষ থেকে উচ্চারিত বক্তব্য। তারা বারবার চেয়েছেন কবি নজরুলকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদান করা হোক। এখন পর্যন্ত এ দাবি, দাবি থেকে আইনি নোটিশ, সেখান থেকে রুল জারি ধারাবাহিকতায় একটি কাঙ্ক্ষিত উত্তর পাওয়া যায়নি।

আমাদের জাতীয় কবির বেলায় স্পষ্ট অবস্থান ছাড়া এ প্রশ্নের কাঙ্ক্ষিত উত্তর সম্ভব নয়। এজন্যে পরোক্ষভাবে কোনো স্বীকৃতিও এটির জন্য পর্যাপ্ত নয়। যেমন দেশের দুটি প্রতিষ্ঠানের আইনে কবি নজরুলকে জাতীয় কবি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। একটি হচ্ছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, অন্যটি কবি নজরুল ইনস্টিটিউট। এগুলোকে বলা যায় পরোক্ষভাবে স্বীকৃতি দেওয়া। দরকার প্রশ্নহীন সাংবিধানিক স্বীকৃত প্রদান করে দালিলিক প্রমাণ সৃষ্টি করা।

বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪ এর ১, ২ ও ৩ নং ধারাতে দেশের জাতীয় সঙ্গীত, পতাকা ও প্রতীক নিয়ে বলা হয়েছে। এখানে স্পষ্টভাবে এই তিন বিষয় সংজ্ঞায়িত হয়েছে। সরকার চাইলে অন্যান্য বিষয়কে জাতীয় রূপ দিতে পারেন। যেমন বাংলাদেশের জাতীয় বৃক্ষ আমগাছ। ২০১০ সালে আমগাছকে জাতীয় বৃক্ষ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রিসভা এবং তা আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার প্রকাশ করা হয়।

জাতীয় কবির সম্মানকে আরও বাড়িয়ে তোলার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানে জাতীয় সঙ্গীত, পতাকা, প্রতীকের ন্যায় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। নতুন বাংলাদেশের কাছে কবি নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবি হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতির বিষয়টি অনেক প্রাধান্য পাবে বলে বিশ্বাস রাখি।

লেখক: প্রাক্তন শিক্ষার্থী, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।