আলোচিত ইউটিউবার আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলমকে বগুড়ার আদালত চত্বর থেকে চ্যাংদোলা করে তুলে নিয়ে মারধর করা হয় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রতিনিধি বগুড়া: আলোচিত ইউটিউবার আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম বগুড়ার আদালত প্রাঙ্গণে আজ রোববার হামলার শিকার হয়েছেন। হামলাকারীরা তাঁকে কিলঘুষি মারার পর চ্যাংদোলা করে আদালত প্রাঙ্গণে বের করে মারধর করেন। পরে তাঁকে কান ধরে ওঠাবস করানো হয়।
হিরো আলম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং সদ্য সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আওয়ালের বিরুদ্ধে মামলা করতে গিয়েছিলেন। তিনি বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (নন্দীগ্রাম আমলি আদালত) আদালতে মামলা করে বের হওয়ার সময় এজলাস কক্ষের ফটকে হামলার শিকার হন। আদালত প্রাঙ্গণে থাকা বহু মানুষের সামনে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ তাঁকে উদ্ধারে এগিয়ে আসেনি। পরে স্থানীয় লোকজন আহত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।
হামলার জন্য বিএনপিকে দায়ী করেছেন হিরো আলম। তাঁর অভিযোগ, তাঁর ওপর হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছেন বগুড়া আদালতের আইনজীবী সহকারী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য রনি সরকার।
হিরো আলমের ওপর হামলার কথা স্বীকার করে রনি সরকার বলেন, ‘হিরো আলমের ওপর হামলায় আমি, বগুড়া বারের আইনজীবী ও বগুড়া জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হুদা নেতৃত্ব দিয়েছি।’ হামলার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, হিরো আলম বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্পর্কে কটূক্তি করেছেন। দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। এ কারণে তাঁকে আদালত প্রাঙ্গণে গণধোলাই দেওয়া হয়েছে।
এমন অভিযোগের বিষয়ে হিরো আলমের ভাষ্য, ‘আমি কখনো তারেক জিয়াকে নিয়ে কটূক্তি করিনি। ডিবির সাবেক প্রধান হারুন অর রশীদ আমার পরিবারকে জিম্মি করে রুহুল কবির রিজভীর বিরুদ্ধে মামলা করতে বাধ্য করেছিলেন। এই কথা আগেও বলেছি।’ তিনি তাঁর ওপর হামলাকারীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
তবে হিরো আলমের ওপর হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বগুড়া জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হুদা। তিনি বলেন, ‘হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। হামলাকারীদের চিনি না। এ ঘটনায় আমার নাম কেন জড়ানো হচ্ছে, সেটা আমারও প্রশ্ন।’
হামলার বিষয়ে বগুড়া জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সহসভাপতি আবদুল বাছেদ বলেন, ‘হিরো আলমের ওপর হামলার সঙ্গে বিএনপির কেউ জড়িত নন। হামলাকারী কারা, তা প্রশাসন খুঁজে বের করুক। দলের কারও সংশ্লিষ্টতা পেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, আজ বেলা ১১টার দিকে বগুড়া আদালতে যান হিরো আলম। এ সময় তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল, বগুড়া-৪ আসনের জাসদ সমর্থিত সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন, নন্দীগ্রাম উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনসহ ৩৯ জনকে আসামি করে বিস্ফোরক ও হত্যাচেষ্টার মামলা করেন।
মামলার এজাহারে হিরো আলম উল্লেখ করেন, ২০১৮ সালের ৩০ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দিতা করেন। সে দিন নন্দীগ্রাম উপজেলার চাকলমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এবং কুন্দারহাট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে তাঁর ওপর হামলা হয়। এ ছাড়া ২০২৩ সালের ১২ ডিসেম্বর নন্দীগ্রাম উপজেলার মুরাদপুর বাজারে তাঁর ওপর হামলা করা হয়। এসব হামলার ‘নির্দেশদাতা’ ছিলেন ওবায়দুল কাদের, সাবেক সিইসি কাজী হাবিবুল আওয়াল ও সাবেক সংসদ সদস্য রেজাউল করিম।
হিরো আলমের আইনজীবী মোস্তফা শাকিল বলেন, আদালতের বিচারক সাদিয়া আফসানা অভিযোগ আমলে নিয়ে তা তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দিয়েছেন।