হঠাৎ শ্রমিক আন্দোলনের নেপথ্যে কী?

আন্দোলনে নামা শ্রমিকদের কোনো সুনির্দিষ্ট দাবি নেই। একেক পক্ষ বিশৃঙ্খলভাবে একেক দাবি নিয়ে মাঠে নেমেছে। এমনকি শ্রমিক সংগঠনগুলোও জানে না সেগুলো | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

নিজস্ব প্রতিবেদক: হঠাৎ করেই তৈরি শিল্প শ্রমিকদের পক্ষ থেকে এমন কিছু দাবি উঠছে, যা এর আগে কখনও শোনা যায়নি।

সাভারের আশুলিয়ার নরসিংহপুরের শারমিন গ্রুপের পোশাক শ্রমিকদের পক্ষ থেকে দাবি উঠেছে নারী ও পুরুষ শ্রমিকের সংখ্যা সমান হতে হবে।

তৈরি পোশাক শিল্প বড় হয়ে ওঠার পর থেকেই নারী শ্রমিকের প্রাধান্য ছিল, কখনো এ নিয়ে আপত্তি ওঠেনি। হঠাৎ এমন দাবি নিয়ে বিস্মিত এই শিল্প সংশ্লিষ্টরা।

গত জানুয়ারি থেকে নতুন মজুরি কাঠামো মেনে নিয়েই কাজ চলছে, সাত মাস যেতে না যেতেই বেতন বাড়ানোর দাবি উঠছে, মজুরি কাঠামোতে প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে বেতন বৃদ্ধির কথা উল্লেখ আছে, এবার সেই বেতন বৃদ্ধি ১৫ শতাংশ করার কথা বলা হচ্ছে, এমন কথাও কেউ কখনো শোনেনি।

কেবল পোশাক শিল্প না, বহু বছর ধরে নির্বিঘ্নে উৎপাদন চালু থাকা ওষুধ শিল্পেও অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। শ্রমিকরা নানা দাবি তুলছে, কারখানা বন্ধ থাকছে।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের কোনাবাড়ি জোনের সহকারী কমিশনার সুবির কুমার সাহা বলেন, 'শ্রমিকদের সুনির্দিষ্ট কোনো দাবি নেই। একেক কারখানার শ্রমিকরা একেক ধরনের দাবি তোলায় শিল্পাঞ্চলে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।'

বিক্ষোভ ও আন্দোলনের সুযোগে কারখানা ভাঙচুর ও লুটের চেষ্টাও হয়েছে বলে জানিয়েছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

গত ৫ অগাস্ট গণ আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর হামলার কারণে পুলিশের সক্ষমতা এমনিতেই অনেক কমে গেছে।

আন্দোলনে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের অভিযোগ ওঠার পর নতুন পরিস্থিতিতে পুলিশও কোনো রকম সংঘাতে যাচ্ছে না। এমন সময়ে শ্রমিক বিক্ষোভ অনেকটা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করেছে।

আন্দোলনরত শ্রমিকরাও অনেকটা বিভ্রান্ত। কিন্তু তারা পথে নামছে, একেকটি কারখানায় যাচ্ছে, শ্রমিকদের বের করে আনছে।

গাজীপুরের ভোগড়া এলাকার নেক্সাস সোয়েটার কারখানার শ্রমিক স্বপন চন্দ্র রায় বলেন, 'শ্রমিক নেতা পরিচয় দিয়ে বাইরে থেকে দলবলসহ কারখানার গিয়ে নানা দাবির কথা বলে সাধারণ শ্রমিকদের তাদের মিছিল-বিক্ষোভে অংশ নিতে বলে। কিন্তু সেই নেতাদেরকে শ্রমিকরা চেনে না।'

সমহারে পুরুষ-নারী শ্রমিক নিয়োগের দাবির কথা স্বপন এর আগে কখনো শোনেননি। তিনি বলেন, 'বেতন বৃদ্ধিসহ পুরানো আরও দাবি তুলে আন্দোলনে যোগ দিতে বলে। যোগ না দিলে কারখানায় ঢিল ছুড়ে ভাঙচুর শুরু করে।'

ওই কারখানার শ্রমিক মো. আলমগীর হোসেনও বলেছেন একই ধরনের কথা।

আশুলিয়ার একটি তৈরি পোশাক কারখানার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, 'এই সেদিন বেতন বাড়ানো হয়েছে, শ্রমিকদের কোনো দাবিদাওয়া তো ছিল না। তাহলে তারা কেন আন্দোলন করছে?' 

তৈরি পোশাক শিল্প শ্রমিকদের সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্টস এবং শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের গাজীপুর মহানগর কমিটির সভাপতি মো. সাইফুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিগত সরকারের আমলে আমাদের মূল দাবি ছিল শ্রমিকদের রেশন প্রদান, ‘কালো আইন’ বাতিল, গণতান্ত্রিক শ্রম আইন প্রণয়ন। কিন্তু এখন তারা নতুন নতুন দাবি তুলে আন্দোলন শুরু করেছে।

“টিফিন বিল, নাইট বিল, ওভারটাইম বিল বৃদ্ধির দাবি নিয়ে তো কারখানার ভেতরেই মালিকদের সঙ্গে বসা যায়। তা না করে রাজপথে নেমে অবরোধ-আন্দোলন করা হচ্ছে।”

শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার আলম বলেন, 'পোশাক শিল্পে অস্থিরতা সৃষ্টিকারীদের খুঁজে বের করে তাদের আটকের চেষ্টা চলছে।'

তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক ও শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লা হিল রাকিব বলেন, 'শ্রমিকদের আন্দোলন থামাতে আমরা কাজ করছি। তাদের তেমন কোনো যৌক্তিক ও সুনির্দিষ্ট দাবি নেই। শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বসেছি, তারাও বলছে সুনির্দিষ্ট দাবি নেই। তারপরও কিছু আন্দোলনের চেষ্টা হচ্ছে। শুক্রবার তো কারখানা বন্ধ। এবার দেখি শনিবার কী হয়।'

একেক জায়গায় একেক দাবি
আশুলিয়ার শারমিন গ্রুপ বেশ বড় একটি পোশাক কারখানা, যেখানে শ্রমিক সংখ্যা বিশ হাজারের কাছাকাছি। গত মঙ্গল ও বুধ- টানা দুই দিন ফটকে হামলার পর কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়।

কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে একটি দাবিনামা তুলে ধরা হয়েছে, যাতে ২০টি দাবি আছে। ওপরের লেখা দুটি দাবির মত বেশিরভাগই এ শিল্পে একেবারেই নতুন।

যেমন শ্রমিক মারা গেলে কোম্পানির দায়িত্বে গ্রামের বাড়িতে মরদেহ পাঠাতে হবে, চাকরিতে থাকা অবস্থায় কেউ অসুস্থ হলে তার চিকিৎসার খরচ কোম্পানিকে বহন করতে হবে, মাতৃত্বকালীন ছুটির টাকা আগেই দিতে হবে।

নরসিংহপুরেই নাসা গ্রুপে জমা পড়া দাবিনামায় বলা আছে ১৫টি দাবির কথা। সেখানে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি ১০ শতাংশ করা, ঈদে ১২ দিন করে ছুটি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এখানে শ্রমিকদের পক্ষ থেকে নারী ও পুরুষ শ্রমিকদের অনুপাত নিয়ে কোনো দাবি তোলা হয়নি।

কারখানা ফটকে হামলার চেষ্টার পর গত মঙ্গল ও বুধবার এ কারখানাতেও ছুটি ঘোষণা করা হয়। উৎপাদন ব্যাহত হয় পরের দিনও।

জিএবি লিমিটেডের শ্রমিকদের পক্ষ থেকে দাবি তোলা হয়েছে ১০টি। কারখানার খাবারে সপ্তাহে দুই দিন গরুর মাংস, দুই দিন মুরগির মাংস এবং দুই দিন সবজির সঙ্গে ডিম দেওয়ার দাবি তোলা হয়েছে।

পাশাপাশি জ্বর, মাথাব্যথার মত সাধারণ সমস্যায় চিকিৎসা ও ওষুধ দিয়ে এক দিনের ছুটি, বছরে একবার পিকনিকে নিয়ে যাওয়া, কমপক্ষে ১০ বছরের চাকরির নিশ্চয়তা চাওয়া হয়েছে।

এভাবে একেক এলাকায় একেক ধরনের দাবি ওঠার পর এটা স্পষ্ট যে, কোনো ধরনের সমন্বয় ছাড়াই আন্দোলনে নামা হচ্ছে। কেউ তাদের দিয়ে এসব করাচ্ছে কি না, সেই সন্দেহের কথা বলা হচ্ছে কারখানা কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের পক্ষ থেকে।

সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে শুরু হওয়া আন্দোলনে সংঘাত সহিংসতা ও সরকার পতনের কারণে ১৮ জুলাই থেকে এমনিতেই উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, সরকার পতনের পর শিল্পে এই ধরনের শ্রমিক অসন্তোষে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে।

দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান এই খাতটি কেবল না, ওষুধ শিল্পেও একই ধরনের পরিস্থিতি দেখা দিচ্ছে, এতে ওষুধ সরবরাহেও নেতিবাচক পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে।

ব্যবসায়ী নেতারা প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নিরাপত্তা চাওয়ার পর যৌথ অভিযান শুরু হয়েছে, সাভার ও গাজীপুর থেকে ১৫ জনকে গ্রেপ্তারের কথা জানানো হয়েছে, তবে তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ বা নাম জানানো হয়নি।

নারী-পুরুষ সমান চাকরির দাবি কেন
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শ্রমিকের ভাষ্যে যে কারণটি উঠেছে, সেটি হল, খাদ্যমূল্যের দাম যেভাবে বেড়েছে, সেই তুলনায় মজুরি তত বাড়েনি। একার পক্ষে চাকরি করে সংসার চালানো কঠিন। স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে কাজ করলে সংসার চালানো সহজ হবে। তবে দুজন চাকরির প্রত্যাশায় এলে সাধারণত নারী শ্রমিককে নিয়োগ দেওয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রে পুরুষ শ্রমিককে বেকার থাকতে হচ্ছে।

এ কারণে পুরুষ শ্রমিকরা চাকরি চেয়ে কারখানার ফটকে বিক্ষোভ করলে ভেতরে থাকা নারী-পুরুষ শ্রমিকরা সমর্থন দিচ্ছে।

গাজীপুরের ভোগড়া বাইপাস সড়ক এলাকার ফারদার ফ্যাশন কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জাকির হোসেন বলেন, 'ক্রেতাদের চাহিদার পাশাপাশি কাজে বেশি মনোযোগী থাকায় ৬০ শতাংশ নারী শ্রমিক নিয়োগ করা হয়। কিন্তু আন্দোলনকারীরা এ ক্ষেত্রে সমানুপাতিক হারে নিয়োগের দাবি জানিয়েছে। আবার অর্ডার না থাকায় অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। নতুন কারখানা সেভাবে না হওয়ায় নিয়োগও কমে গেছে।'

বাংলাদেশ গার্মেন্টস এবং শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের গাজীপুর মহানগর কমিটির সভাপতি মো. সাইফুল আলম বলেন, 'নিটিং কারখানায় আগে পুরুষ শ্রমিক বেশি কাজ করত। এসব কারখানায় জ্যাকার্ড মেশিন ঢুকে পড়ায় কম শ্রমিকে বেশি কাজ করা হচ্ছে। ফলে পুরুষ শ্রমিকের সংখ্যা কমে গেছে। তাদেরকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে মাঠে নামানো হচ্ছে।'

বিজিএমইএর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লা হিল রাকিব বলেন, 'নারী-পুরুষ শ্রমিকের সমতা তো বাস্তবসম্মত নয়। কারণ, সুইয়ের মধ্যে সুতা ঢুকানোর কাজটি পুরুষদের চেয়ে নারীরা সূক্ষ্মভাবে করতে পারে। এখানে তো নারীদের প্রধান্য থাকবেই।'

কারখানায় হামলায় ‘বহিরাগত’
আশুলিয়ার নরসিংহপুরে শারমিন গ্রুপের শ্রমিক মোরশেদা বেগম গত মঙ্গলবারের কথা তুলে ধরে বলেন, 'আমাদের কারখানায় বহিরাগতরা হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে শ্রমিকদের বের করে নেয়। হামলাকারীরা অল্প বয়সের।'

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইন বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, 'শারমিন গ্রুপে আমাদের সংগঠনের এক সদস্য কাজ করে। সে বলেছে এই কারখানায় হামলা করে শ্রমিকদের উসকে দিয়ে কারখানা থেকে বের করে নিয়ে আসে।' 

পলাশবাড়ী এলাকার গিল্ডেন অ্যাপারেলস কারখানায়ও একই ঘটনা ঘটেছে জানিয়ে এই শ্রমিক ইউনিয়ন নেতা বলেন, 'ওই কারখানার শ্রমিকরা জানেই না কর্তৃপক্ষের কাছে ১০ দফা দাবি কে দিয়েছে।'

স্বাধীন বাংলা গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আল কামরান বলেন, 'আমরা শ্রমিকদের নিয়ে আন্দোলন করি মজুরি বৃদ্ধির জন্য, কিন্তু ডংলিয়ান ফ্যাশন (বিডি) লিমিটেড, নাসা গ্রুপসহ বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা যে দাবি তুলে আন্দোলন করছে তার কোনো যুক্তি খুঁজে পাই না। এসব কারখানা ভাঙচুর ও ইটপাটকেল যারা নিক্ষেপ করেছে তারা ছোট ছোট ছেলে। তারা গার্মেন্টস সেক্টরে নৈরাজ্য সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে।'

ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ
পোশাক শিল্পে অস্থিরতার পেছনে একটি কারণ হিসেবে ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি উঠে এসেছে।

পোশাক কারখানায় অব্যবহৃত কাপড় কেনাবেচার এই নিয়ন্ত্রণ বরাবর ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের হাতেই থেকেছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এই নিয়ন্ত্রণ নিতে বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের যেমন চেষ্টার তথ্য মিলেছে, তেমনি এতদিন যারা নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছেন, তারাও নানাভাবে চেষ্টা করছেন।

আশুলিয়া থানার ওসি মাসুদুর রহমান বলেন, 'ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে নিতে শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় অস্থিরতা সৃষ্টি করছে একটি চক্র। যারা বিগত সরকারের আমলেও এই ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেছে, তারা বহিরাগতদের ভাড়া করে তারাই পোশাক খাতে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে।'

পোশাক শিল্পের সঙ্গে জড়িত আশুলিয়া এলাকার একাধিক ব্যক্তি বলেছেন, 'সরকার পতনের পর নতুন চাঁদাবাজদের দেখা যাচ্ছে। ঝুট ব্যবসা ও চাঁদাবাজি নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতেই শ্রমিকদের ‘উসকে’ দেওয়া হচ্ছে। আর শ্রমিকরাও এই পরিস্থিতির সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে।'

শিল্প মালিকদের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের যে তথ্য ভাণ্ডার তৈরি করা হয়েছে সেখানে অনেক শ্রমিককে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। সেই শ্রমিকরাও এই সুযোগে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। 

আবার গত জানুয়ারি থেকে নতুন মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন হওয়ার কথা থাকলেও অনেক কারখানাই তা বাস্তবায়ন করেনি। বেশ কয়েকটি কারখানায় কয়েক মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। এগুলোও আন্দোলনের কারণ হিসেবে উঠে এসেছে আশুলিয়ার সেই ব্যক্তিদের বক্তব্যে।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইন বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, 'শেখ হাসিনা সরকারের আমলে স্থানীয় সংসদ সদস্য সাইফুল ইসলাম ও মুরাদ জংয়ের অনুসারীরা ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করত। সেই ব্যক্তিরাই এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে মিশে সক্রিয় হচ্ছেন। শিল্প এলাকায় নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে চাচ্ছেন নতুন করে। সরকার পতনের পর নতুন কিছু চাঁদাবাজও সক্রিয় হয়েছে। এই নতুন-পুরনো চাঁদাবাজরা নিজেদের কর্তৃত্ব ও দখলদারত্ব নিতে শ্রমিকদের উসকে দিয়ে পোশাক শিল্পে অস্থিরতা করতে চাচ্ছে। আমরা যারা শ্রমিক নেতৃত্বে আছি তারা, সাধারণ শ্রমিকদের বোঝানোর জন্য সভা সমাবেশ করব, সেই পরিস্থিতিও নেই।'

পোশাক শিল্পের বাইরেও আন্দোলন
গাজীপুরে পোশাক শ্রমিকদের পাশাপাশি বিভিন্ন ওষুধ কারখানা, জুতা কারখানার শ্রমিকরাও নানা দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে।

৩১ আগস্ট গাজীপুরের স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস কারখানার শ্রমিকরা স্থায়ী কর্মীদের দুই বছর পরপর গ্রেড উন্নয়ন, নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ৬ মাস করা এবং ছুটিকালীন সময়ে সম্পূর্ণ বেতন এবং ভাতা প্রদান করাসহ ২১ দফা দাবি নিয়ে আন্দোলনে নামে। 

গাজীপুর শিল্প পুলিশের পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম জানান, সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টা ডিউটি করলে ৩ ঘণ্টা ওভার টাইম এবং দৈনিক ভাতা প্রদান, শ্রমিকদের মূল বেতন ন্যূনতম ১৫ হাজার টাকা করা, প্রতি বছর ২০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি, মূল বেতনের সমপরিমাণ ঈদ বোনাস ও চাকরিতে হয়রানি বন্ধসহ ৮দফা দাবিতে ৩ সেপ্টেম্বর থেকে আন্দোলন শুরু করেছে বাটা শু কারখানার শ্রমিকরাও।