সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এবং সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলীকে আজ সোমবার ঢাকার আদালতে হাজির করা হয় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন
নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর মিরপুর থানার একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এবং সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মোশাররফ হোসেন আজ সোমবার এই আদেশ দেন।
এর আগে মিরপুর থানায় দায়ের করা সিয়াম সরদার (১৭) হত্যা মামলায় আসাদুজ্জামান নূর ও মাহবুব আলীকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করে পুলিশ। অপর দিকে দুজনের জামিন চেয়ে আবেদন করেন তাঁদের আইনজীবীরা।
আসাদুজ্জামান নূরের আইনজীবী লিয়াকত হোসেন আদালতকে লিখিতভাবে বলেন, তাঁর মক্কেল অসুস্থ। তাঁর বয়স ৭৮ বছর। তিনি হৃদ্রোগে আক্রান্ত। এ ছাড়া অ্যাজমা ও ডায়াবেটিস রয়েছে।
উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত আসাদুজ্জামান নূর ও মাহবুব আলীর জামিন আবেদন নাকচ করে তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এর আগে আজ বেলা তিনটায় কড়া পুলিশ পাহারায় এই দুজনকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। পরে তাঁদের রাখা হয় আদালতের হাজতখানায়। সেখান থেকে দুজনের মাথায় হেলমেট এবং শরীরে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরিয়ে আদালতের এজলাসে তোলা হয়। তখন তাঁদের দুজনের হাতকড়া পরানো ছিল।
মামলার কাগজপত্রের তথ্যমতে, গত ১৮ জুলাই রাজধানীর মিরপুর এলাকায় সিয়াম সরদার (১৭) নামের এক কিশোরকে হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১১৪ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে। সিয়ামের বাবা সোহাগ সরদার বাদী হয়ে ১২ সেপ্টেম্বর এই মামলা করেন। মামলায় বলা হয়, ১৮ জুলাই মিরপুর-১০–এ আবু তালেব স্কুলের সামনে রাত ১১টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা মিছিল করছিলেন। তখন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীরা ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচার গুলি চালান। এতে সিয়াম সরদারের শরীরে গুলি লেগে ঘটনাস্থলে সে মারা যায়। এ মামলায় সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের নাম রয়েছে।
এর আগে গতকাল রোববার রাতে রাজধানীর বেইলি রোড থেকে আসাদুজ্জামান নূরকে এবং সেগুনবাগিচা এলাকা থেকে মাহবুব আলীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান নূর বাংলাদেশের সংস্কৃতি অঙ্গনের জনপ্রিয় মুখ। নাট্য অভিনেতা হিসেবে খ্যাতিমান আসাদুজ্জামান নূর ২০০১ সালে প্রথম আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনেও তিনি সংসদ সদস্য হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর আসাদুজ্জামান নূর সংস্কৃতিমন্ত্রী হয়েছিলেন।
আর মাহবুব আলীর বাড়ি হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলায়। তিনি ২০১৪ সাল থেকে টানা দুবার সংসদ সদস্য ছিলেন। ২০১৮ সালে তিনি বিমান প্রতিমন্ত্রী হন। গত জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ তাঁকে মনোনয়ন দিলেও তিনি পরাজিত হন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এর পর থেকে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের ২৭ জন মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, উপদেষ্টা ও শীর্ষ পর্যায়ের নেতাকে গ্রেপ্তার করা হলো। এর মধ্যে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং জ্বালানি, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ–বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী রয়েছেন। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজত ও কারাগারে আছেন।